বাংলারজমিন

উটখাড়া মাজারের সম্পত্তি ১৬ অবৈধ দখলদারের কবলে

স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা থেকে

২৫ এপ্রিল ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৮:২৩ পূর্বাহ্ন

কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ এলাকায় অবস্থিত হযরত শাহ জামাল (রঃ) ও হযরত শাহ কামাল (রঃ)সহ মোট ২৯ জনের প্রায় ৭শ’ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক উটখাড়া মাজার শরীফ ওয়াক্‌ফ এস্টেটের ৭৯ শতক সম্পত্তি ১৬ জন ব্যক্তি দীর্ঘ বছর ধরে অবৈধভাবে দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছে। ২০১১ সালের ৩০শে জানুয়ারি ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে ওই দখলদারদের সকল অবৈধ স্থাপনা ভেঙে উচ্ছেদ কার্যক্রম সম্পন্ন করে ছবিসহ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কুমিল্লা জেলা প্রশাসন থেকে স্থানীয় প্রশাসনকে আদেশ দেয়া হলেও তা গত আট বছরে কার্যকর হয়নি। ওই ওয়াক্‌ফ এস্টেটের মোতোয়ালি মো. শাহজাহান ভূঁইয়া বুধবার সাংবাদিকদের নিকট এ অভিযোগ করেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে দেবিদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ গ্রামের আবদুল মজিদ ও তার ভাই হানিফসহ ১৬ জন ব্যক্তি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জোরপূর্বক এস্টেটের ৭৯ শতক সম্পত্তি দখল করে বাড়িঘর নির্মাণ করে এবং ওই সম্পত্তি ও আশপাশের দীঘি-পুকুরসহ ৪ একর ৮৪ শতক জমি দখলে নিয়ে ধান ও বিভিন্ন ফসলাদির চাষ করছে। এ ব্যাপারে অভিযোগের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ২০০৯ সালের ১০ই আগস্ট কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হয়। পরবর্তীতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দায়ের করা এক মামলায় বিচারক একই সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর এক আদেশে দেবিদ্বার থানার ওসিকে ওই সম্পত্তির রিসিভার নিয়োগ করেন। এরপর ওই ব্যক্তিরা ওসির সাথে যোগসাজশে ওই সম্পত্তি ফের দখল করে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে। পরে ২০১১ সালের ৩০শে জানুয়ারি বাংলাদেশ ওয়াক্‌ফ প্রশাসক অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে এর দখল মোতওয়াল্লীকে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ করে জেলা প্রশাসকের নিকট পত্র প্রেরণ করেন। ওই পত্রের আলোকে জেলা প্রশাসক এস্টেটের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ছবিসহ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য একই সালের ১০ই মার্চ দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট পত্র প্রেরণ করলেও তা কার্যকর করা হয়নি। এরপর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে পুনরায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়ে পত্র প্রাপ্তির ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে উচ্ছেদ কার্যক্রম শেষ করে ছবিসহ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২০১১ সালের ২৯শে আগস্ট নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু এতেও কোনো কাজ হয়নি। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ওয়াক্‌ফ প্রশাসক কর্তৃক ২০১৬ সালের ৫ই ডিসেম্বর জেলা প্রশাসককে পুনরায় চিঠি দেয়া হলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ২০১৮ সালের ৩রা এপ্রিল উচ্ছেদ মামলা গ্রহণ করেন এবং এস্টেটের দখলদারদের ৭ দিনের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা অপসারণের জন্য নোটিশ প্রদান করেন। কিন্তু তারা ওই আদেশ অমান্য করায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ওই সালের ২৫শে এপ্রিল দেবিদ্বার উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ প্রদান করেন এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে ছবিসহ প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেন। ওয়াক্‌ফ এস্টেটের মোতওয়াল্লী মো. শাহজাহান ভূঁইয়া জানান, অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে ছবিসহ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য উপজেলা প্রশাসনকে গত ৮ বছরে জেলা প্রশাসক কার্যালয় হতে দফায় দফায় আদেশ দেয়া হলেও অজ্ঞাত কারণে উচ্ছেদ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। এ সুযোগে দখলদাররা আরও নতুন নতুন স্থাপনা তৈরি করে নির্বিঘ্নে এস্টেটের সম্পত্তি ও সহায়-সম্পদ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ভোগ-দখল করছে। এস্টেটের সম্পত্তি রক্ষার জন্য অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের সহায়তা চেয়ে গত ২০শে ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন দাখিল করেছি, কিন্তু প্রশাসন এ যাবত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এ বিষয়ে অভিযুক্ত আবদুল মজিদসহ অন্যরা বলেন, আমরা বাড়িঘর নির্মাণ করে দীর্ঘ বছর ধরে এ সম্পত্তিতে বসবাস করে আসছি। অবৈধভাবে দখল করলে প্রশাসন কেন আমাদের উচ্ছেদ করছে না। এ বিষয়ে কুমিল্লা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, আমি নতুন এসেছি। কর্মকর্তাদের বদলি ও নানা কারণে উচ্ছেদ কার্যক্রম বিলম্বিত হতে পারে। তবে এ বিষয়ে সহসা আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। উল্লেখ্য, বঙ্গ ও আসামের পীর আউলিয়া কাহিনী থেকে জানা যায়- ত্রয়োদশ শতাব্দিতে হযরত শাহজালাল (রঃ) এর দোয়া নিয়ে সিলেট হতে হযরত শাহ জামাল (রঃ) ও হযরত শাহ কামাল (রঃ) উটে চড়ে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে বের হন। তাঁদের বহন করে চলতে চলতে বর্তমান কুমিল্লার (তৎকালীন ত্রিপুরা) এলাহাবাদ গ্রামে আসার পর উটগুলো একেবারে থেমে দাঁড়িয়ে (খাড়া) থাকে। এতে তাঁরা বুঝলেন হযরত শাহজালাল (রঃ) এর নির্দেশনা অনুযায়ী এই স্থানই তাঁদের ইসলাম প্রচারের কেন্দ্র।
তাঁরা সেখানে আস্তানা স্থাপন করে বাড়িঘর নির্মাণ এবং দীঘি-পুকুর খননসহ স্থাপনা নির্মাণে ত্রিপুরা, আসামসহ ভারত-বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ইসলাম প্রচার শুরু করেন। পরবর্তীতে ওই স্থানটি উটখাড়া মাজার শরীফ হিসেবে খ্যাতি লাভ করে। সেখানে হযরত শাহ জামাল (রঃ) ও হযরত শাহ কামাল (রঃ)সহ ওই স্থানে মোট ২৯ জনের প্রায় ৭শ’ বছরের পুরনো মাজার রয়েছে। ওই মাজারের নামে রেকর্ডকৃত ২৩ একর ১২ শতক সম্পত্তি ১৯৪২ সাল থেকে ওয়াক্‌ফ এস্টেট কর্তৃপক্ষের অধীনে পরিচালিত হয়ে আসছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status