প্রথম পাতা

কঠোর অবস্থানে দল

দোটানায় বিএনপির নির্বাচিতরা

কাফি কামাল

২৪ এপ্রিল ২০১৯, বুধবার, ৯:৩৯ পূর্বাহ্ন

শপথ গ্রহণ নিয়ে দোটানায় একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচিত বিএনপি দলীয় প্রার্থীরা। সংসদে গিয়ে কথা বলতে চান তারা। কিন্তু সংসদে না যাওয়ার ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে দল। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে সংসদে যাবার কথা ভাবতেই পারছেন না দলটির নেতাকর্মীরা। এদিকে বিএনপির নির্বাচিতরা বলছেন, তাদের ওপর চাপ রয়েছে নিজ নিজ আসনের মানুষের। এলাকাবাসী চাইছেন তারা সংসদে গিয়ে তুলে ধরুক সমস্যা-সংকটের কথা। দলের কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতেও মুখর হোন সংসদে। যদিও নির্বাচনের আগের রাতে সিল দিয়ে ব্যালট বাক্স ভরে রাখার অভিযোগ তুলে ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সংসদের যাওয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে বিএনপি। রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন রয়েছে, বিএনপির নির্বাচিত ৬ প্রার্থীর সামনে রয়েছে সরকারের তরফে টোপ এবং নানামুখী চাপ। এদিকে ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে শপথ না নিলে তাঁদের সদস্যপদ খারিজ হয়ে যাবে। সে ডেটলাইন আগামী ৩০শে এপ্রিল। এমন পরিস্থিতিতে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচিত বিএনপির প্রার্থীরা পড়েছেন দোটানায়।   

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও বিএনপির কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের অংশ হিসেবে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল বিএনপি। নিরপেক্ষ সরকারের দাবি থেকে সরে এসে এবং চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্তটি ছিল কঠিন। কিন্তু জাতীয় স্বার্থে সে কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিএনপি। তবে প্রথম থেকেই নির্বাচনী পরিবেশ ছিল পুরোপুরি বৈরি। অব্যাহত হামলা-মামলা, গ্রেপ্তার-হয়রানির মধ্যেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের দৌড়ে ছিল বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলগুলো। কিন্তু ভোটের আগের রাতে সারা দেশে প্রায় প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে ক্ষমতাসীনদের প্রতীকে সিল মেরে বাক্স ভরে রাখার অভিযোগ আসে। অবিশ্বাস্য ফলাফলসহ নির্বাচন প্রত্যাখ্যানের পর বিরোধী দলগুলোর যৌথ সিদ্ধান্ত ছিল, শপথ নিয়ে একাদশ সংসদকে বৈধতা দেবে না। কিন্তু দল এবং ফ্রন্টের অবস্থান অগ্রাহ্য করে ইতিমধ্যে এমপি হিসেবে শপথ নিয়েছেন দুইজন। তারা ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম দল গণফোরামের মনোনীত প্রার্থী। তাদের একজন ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছিলেন।

বিএনপির নির্বাচিত ৬ জনকে নিয়েও প্রথম থেকে চলছে গুঞ্জন। গুঞ্জন ছিল সমঝোতার মাধ্যমে বিএনপির চেয়ারপারসন অসুস্থ খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্তি পেতে পারেন। বিনিময়ে সংসদে যোগ দেবে বিএনপি। তবে বাংলা নববর্ষের দিন দলের স্থায়ী কমিটির দুই সদস্যসহ মহাসচিব মির্জা আলমগীর হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করেন। সেখানে সংসদে যাওয়া ও প্যারোলের ব্যাপারে নিজের অনাগ্রহের কথা পরিস্কার করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এরপর নির্বাচিতদের সতর্ক করে কয়েকটি সভা-সমাবেশে বক্তব্যও দিয়েছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। তারপরও নির্বাচিতরা বলছেন, তাদের ওপর এলাকাবাসীর চাপ আছে। নির্বাচিতদের কয়েকজন এ নিয়ে নিয়মিত গণমাধ্যমে বক্তব্যও দিচ্ছেন। সম্প্রতি তারা রাজধানীতে একটি হোটেলে চা-চক্রের আয়োজন করেছিলেন। পরে দলের মহাসচিব তাদের চেয়ারপারসন কার্যালয়ে ডেকে পাঠান। সেখানে তারা তাদের ওপর চাপের কথা তুলে ধরেন। বিপরীতে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে তাদের সতর্ক করে দেয়া হয়। কিন্তু নির্বাচিতদের কয়েকজন তাতেও থামেননি।

গত রোববার এক সভা থেকে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় নির্বাচিতদের সতর্ক করে বলেছেন- ‘সংসদে যাওয়া তো দূরের কথা, তার আশপাশ দিয়েও হাঁটবেন না। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নিলে দেশের ১৬ কোটি মানুষ ক্ষমা করবে না। দলের নেতাকর্মীদের কথা না হয় বাদই দিলাম।’ এছাড়া কয়েকদিন আগে ২০দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক ও এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম বলেছেনÑ ‘দেশের ১৬ কোটি মানুষকে অসম্মান করে বিএনপির এমপিরা জাতীয় সংসদে শপথ নিলে জাতীয় বেঈমান হিসেবে চিহ্নিত হবেন। লোভে পড়ে জাতির সঙ্গে বেঈমানি করার কোনো কাজে এলডিপি সমর্থন করবে না।’ এদিকে সোমবার চাপাইনবাবগঞ্জে একটি সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিতে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ফের সংসদে যোগ দেয়ার চাপের কথা বলেছেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও চাপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত হারুনুর রশীদ। তার এমন বক্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বয়ে যাচ্ছে সমালোচনার ঝড়। কেউ কেউ তাকে বুঝে-শুনে পা রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন। একই রাতে একটি জরুরি সভা করেছে বিএনপির নীতিনির্ধারক ফোরাম। দলের স্থায়ী কমিটি সোমবার রাতের বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত হয় বিএনপির নির্বাচিত প্রার্থীরা এমপি হিসেবে শপথ নেবেন না। দলীয় সূত্র জানায়, বৈঠকে একপর্যায়ে স্কাইপের মাধ্যমে লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যোগ দেন।

সেখানে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা সংসদে না যাওয়ার পক্ষে মত দেন। তারা মনে করেন, নির্বাচনকে প্রত্যাখান করে নতুন করে নির্বাচনের দাবি করার পর সংসদে গেলে সে নির্বাচনকে বৈধতা দেয়া হবে। পরে সর্বসম্মতভাবে সংসদে যোগ না দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। এছাড়া নির্বাচিতদের কেউ দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়। দুই একদিনের মধ্যে নির্বাচিত ৬ জনকে গুলশান কার্যালয়ে ডেকে তা তাদের জানিয়ে দেয়া হবে। এদিকে চাপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত হারুনুর রশীদ গতকাল মানবজমিনকে বলেন, আমাদের দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছে এবং নির্বাচনের পুরোদিন নির্বাচন বর্জন করেনি। ফলে আমাদের নেতাকর্মীরা জীবনবাজি করে ভোটের মাঠে থেকে আমাদের নির্বাচিত করেছে। তারা চান আমরা সংসদে গিয়ে কথা বলি। আমরাও সংসদে যাওয়ার পক্ষে। আমাদের এমন অবস্থানের কথা আমরা শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়েছি। কিন্তু দল এখন পর্যন্ত সংসদে যাওয়ার বিপক্ষে অবস্থানে অনঢ়। আমি বুধবার ঢাকা যাবো, নেতাদের সঙ্গে কথা বলবো। জনগণের চাপে তারা শেষ পর্যন্ত সংসদে যাবার সিদ্ধান্ত নেবেন কিনা জানতে চাইলে হারুনুর রশীদ বলেন, এখনও কয়েকদিন সময় আছে। নেতাদের সঙ্গে কথা বলে দেখি। আগাম কিছুই বলতে পারব না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status