দেশ বিদেশ

বগুড়ায় পরপর ৩ ধর্ষণ

মামলা নিতে ওসি’র টালবাহানা

বগুড়া প্রতিনিধি

২৪ এপ্রিল ২০১৯, বুধবার, ৯:২২ পূর্বাহ্ন

সকাল ৯টা থেকে রাত পর্যন্ত ধর্ষিতাকে থানায় বসিয়ে রেখে মামলা নিতে টালবাহানা করেছে বগুড়া সদর থানার ওসি এসএম বদিউজ্জামন। এমন অভিযোগ তুলেছে ধর্ষিতা নিজেই। ধর্ষিতা আলেয়া (ছদ্মনাম)। বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়ি যাওয়ার জন্য গত ১৮ই এপ্রিল দুপুরে বাবার বাড়ি মুড়ইল বাজার থেকে স্বামীর বাড়ি দরগা হাট যাওয়ার জন্য সিএনজিচালক নাজমুলের গাড়িতে ওঠে। সিএনজিচালক তাকে দরগা হাট না নিয়ে তার এক পরিচিত ভাবির বাড়ি শিকারপুরে নিয়ে যায়। সেখানে সে তাকে কয়েক দফা ধর্ষণ করে। রাত পৌনে ১০টার দিকে ধর্ষণের সহযোগিতা করা ভাবি ধর্ষিতার স্বামীকে মোবাইল করে বলে আপনার স্ত্রী আমার বাসায় আছে তাকে নিয়ে যান। স্বামী আলামিন তার আত্মীয়-স্বজন নিয়ে ধর্ষিতাকে উদ্ধার করে। পরে পশ্চিম বগুড়া সিএনজি মালিক সমিতির সেক্রেটারি এরশাদের সহযোগিতায় গতকাল ওই ধর্ষক নাজমুলকে আটক করে এসআই খোরশেদের হাতে তুলে দেয়া হয়। ওই ঘটায় মামলা দিতে গতকাল সকাল ৯টায় বগুড়া সদর থানায় যায় ধর্ষিতা নিজেই। ওসির কাছে ধর্ষিতা নিজেই ধর্ষণ ঘটনার বর্ণনা দেয়। প্রথমে পুলিশ তাকে বিভিন্ন ধরনের জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে তাকে বলা হয় মামলা নেয়া যাবে না। এ বিষয়ে ওসি বদিউজ্জামানের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, সমস্যা আছে। জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে আগে। এমন ঘটনা ঘটতেই পারে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই মেয়েরই সমস্যা আছে। পরে গণমাধ্যমকর্মীরা ওসির সঙ্গে কথা বললে মামলা নেয়া হবে বলে জানান তিনি। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (সাড়ে ৬টা) মামলা নেয়নি থানা। মামলার ড্রাফট করা হলে সেখানে ওই মেয়ের স্বামী আলামিনের স্বাক্ষর নিয়ে পুলিশ বলেছে রাতে এসো। মামলা নিতে তাদের কাছে টাকাও চাওয়া হয়েছে। ধর্ষিতার স্বামী আলামিন বলেন, সকাল সাড়ে ৯টা থেকে থানায় পড়ে আছি। কিন্তু পুলিশ মামলা নিতে শুধু তালবাহানা করছে। তিনি বলেন, আমি গরিব মানুষ, ভ্যান চালাই বলে আমার সঙ্গে পুলিশ খারাপ ব্যবহার করেছে। মামলা নিচ্ছে না। বেলা ৩টার দিকে শেষ পর্যন্ত মামলার ড্রাফট করা হলেও মামলাটি এন্ট্রি হয়নি। পুলিশ তাকে বলেছে রাতে হবে। আলামিন আরো বলেন, আমার কষ্টের জমানো দুই হাজার টাকা পুলিশ সদস্য নির্মলকে দিতে চাইছিলাম। কিন্তু কম বলে সে নেয়নি। আরো টাকা লাগবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এদিকে, বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার পল্লীতে মাদরাসার চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীকে (৯) ধর্ষণের অভিযোগ করেছে তার পরিবার। ঘটনার পর থেকেই ধর্ষক দুই যুবক পলাতক রয়েছে। তবে, এ বিষয়ে ধর্ষিতার মা ধর্ষণের কথা বললেও নন্দীগ্রাম থানার ওসি নাসির উদ্দিন বলেন, ধর্ষণের চেষ্টা হয়েছে। মেয়েটির মা কহিনুর বলেন, শনিবার দুপুরে বাড়ির পাশে পুকুরে গোসল করছিল। এ সময় পূর্বপরিচিত নন্দীগ্রাম উপজেলার সদর ইউনিয়নে কৈগাড়ী সড়কপাড়া গ্রামের মহসীন আলীর ছেলে কাওছার আলী (১৯) ও মিনুর ছেলে হাসু মিয়ার (২২) বাড়ি নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ভ্যানে তুলে নেয়। পরে মাঠের মধ্যে নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক দুজনে মিলে তাকে ধর্ষণ করে। ভয়ে মেয়েটি প্রথমে এ ঘটনা পরিবারকে জানায় নি। পরে সে তার মা’র কাছে  ঘটনাটি  প্রকাশ করে। এ মামলাটিও এখনো প্রক্রিয়াধীন আছে।
থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাসির উদ্দিন বলেন, প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের চেষ্টা বলে প্রতীয়মান হয়েছে। ধর্ষিতার বাবা মাকে থানায় অভিযোগ দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বগুড়া গাবতলীর জয়ভোগা গ্রামে আরো এক ৩য় শ্রেণির ছাত্রী (৮)কে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ধর্ষক উজ্জ্বল মিয়া (৩০)কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ধর্ষক উজ্জ্বলকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে। সে ওই গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে এবং ইউপি মহিলা মেম্বার টুনির ভাতিজা বলে পুলিশ জানায়। এ বিষয়ে থানার ওসি (তদন্ত) জাকির হোসেনের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ঘটনার প্রেক্ষিতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ধর্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওই শিশুর জবানবন্দি নেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে মেডিকেল টেস্টও করা হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status