খেলা

ডাবল সেঞ্চুরিতে ইতিহাসে সৌম্য

ইশতিয়াক পারভেজ

২৪ এপ্রিল ২০১৯, বুধবার, ৯:১০ পূর্বাহ্ন

আগের ১১ ম্যাচে সর্বোচ্চ ছিল ৪৩ রানের ইনিংস। এমন বাজে ফর্মে থাকা ক্রিকেটারকে রাখা হয়েছে আবার ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ দলে! তাই আলোচনা-সমালোচনার অন্ত ছিল না। এই আলোচনা সমালোচনার জবাব সৌম দিলেন শেষ দুই ম্যাচে। লীগের ১২তম ম্যাচে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের বিপক্ষে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বাঁচিয়ে রাখেন আবহনীর শিরোপা জয়ের আশা। গতকাল সুপার লীগ পর্বের শেষ ম্যাচে বিকেএসপিতে গড়লেন দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির ইতিহাস। আর আবাহনীকে এনে দিলেন ঢাকা লীগের ২০তম শিরোপা। সৌম্যর এই ইনিংসে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে রচিত হলো দারুণ সব রেকর্ড। নিজের দখলে নিলেন সর্বোচ্চ ছক্কা, রান ও জুটির রেকর্ড।

শেখ জামালের ৩১৭ রান তাড়া করতে নেমে আবাহনী জয় পায় ৯ উইকেটে। সেখানে অপরাজিত ২০৮ রানের ইনিংস খেলেন সৌম্য। মাত্র ১৫৩ বলে ১৪ চার  ১৬ ছয়ের সাহায্যে এই রান করেন তিনি। তার সঙ্গে ওপেনিং জুটিতে জহুরুল ইসলাম অমির অবদান ১০০ রানের। তারা দু’জন ওপেনিং জুটিতে ঢাকা লীগের সর্বোচ্চ ৩১২ রান তোলেন। এর আগে ধীমান ঘোষ ও মাহবুবুল করিমের দখলে ছিল এই রেকর্ড। ২০০৬ সালে ফতুল্লায় তৃতীয় উইকেটে ২৯০ রানের জুটি  গড়েছিলেন ধীমান-মাহবুব। এতোদিন ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১৯০ রানের রেকর্ড ইনিংসটি দখলে ছিল মোহামেডানের ব্যাটসম্যান রকিবুল হাসানের। সৌম্য ঝড়ে ভেঙে গেছে সেটিও। এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ১১ ছক্কার রেকর্ড ছিল সৌম্য, মাশরাফি ও সাঈফ হাসানের। ১৬ ছক্কা হাঁকিয়ে নিজের রেকর্ড ভেঙেছেন এই মারমুখী ওপেনার। বিকেএসপিতে শেখ জামাল ৩শ’ রানের চ্যালেঞ্জ ছুুঁড়ে দেয় আবাহনীর সামনে।

কিন্তু সৌম্য সরকার ও জহুরুল ইসলাম অমির ব্যাটে একটা সময় লক্ষ্যটা তুচ্ছ মনে হতে থাকে। শুরু থেকেই ঝড় তোলেন সৌম্য। ৫২ বলে তুলে নেন ফিফটি। আর ৭০ বলে সেঞ্চুরি! মানে বাকি ৫০ রান করতে সৌম্য খরচ করেন মাত্র ২০ বল! পরের ১০০ রান করতে সৌম্য খেলেন ৭১ বল। প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরির মালিক এখন ২৬ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার। ঢাকা লীগে এতদিন সৌম্যর সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিল ১৫৪, আগ্রণী ব্যাংকের হয়ে এই ইনিংস খেলেন তিনি। তবে সৌম্যের ক্যারিয়ারে এটি প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি নয়। এর আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও এই কৃর্তি গড়েছিলেন তিনি। ২০১২ সালে কুয়ালালামপুরে অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়াকাপে কাতারের বিপক্ষে ২৭ চার ও ৮ ছক্কায় ১৩৭ বলে ২০৯ রানের ইনিংস খেলেন সৌম্য।

একদিকে সৌম্য যখন ব্যাটে ঝড় তুলছেন, অন্যদিকে শক্ত হাতে হাল ধরে রেখেছিলেন জহুরুল ইসলাম অমি। ১২৮ বলে ৭টি চার আর  ৩টি ওভার বাউন্ডারিতে কাটায় কাটায় ১০০ রান করে আউট হন তিনি। চলতি আসরে অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যানের এটি তৃতীয় সেঞ্চুরি। আউট হওয়ার আগে গড়েছেন ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড। গত বছর ওপেনিং জুটিতে সর্বোচ্চ ২৩৪ রান করেছিলেন আবাহনীর এনামুল হক বিজয়-নাজমুল হোসেন শান্ত। চতুর্থ উইকেটে তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৭৬ রানের জুটির মালিক মুমিনুল হক সৌরভ ও ডি সিলভার। ২০১৩ সালে বগুড়ায় তারা এই রেকর্ড গড়েছিলেন আবাহনীর বিপক্ষে প্রাইম দোলেশ্বরের হয়ে। ব্যাট হাতে গতকাল সৌম্য আরোও একবার প্রমাণ করলেন নিজ দিনে যে কোনো দলের বিপক্ষে বিধ্বংসী হয়ে উঠতে পারেন তিনি। বলার অপেক্ষা রাখেনা ক্রিকেটের সর্বোচ্চ আসর বিশ্বকাপে আংশ নেয়ার আগে সৌম্যর ফর্মে ফেরা দেশের জন্য দারুণ স্বস্তির।

‘কিছুটা নার্ভাস ছিলাম’
ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির মালিক হয়েছেন। গড়েছেন সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড। এক ম্যাচে হাঁকিয়েছেন ১৬ ছক্কা। তবে এমন রেকর্ডময় দিনে বেশ নার্ভাসও ছিলেন বলে জানিয়েছেন সৌম্য সরকার। তিনি বলেন, ‘প্রথমে একটু নার্ভাস ছিলাম যে ৩০০ রানের অধিক টার্গেট। ৩০০ রানের বেশি তাড়া করা সব সময়ই কঠিন। ব্যাটিংয়ে যাওয়ার আগে ভাবছিলাম আগের ম্যাচে আমরা ৩০০ করেছিলাম, রূপগঞ্জ একটু তাড়াহুড়ো করেছিল। পাওয়ার প্লেতে উইকেট হারানোয় সেভাবে তাড়া করতে পারেনি। উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য খুব ভালো। বল ব্যাটে আসছিল। আমরা পরিকল্পনা করছিলাম খুব স্বাভাবিক ক্রিকেট খেলব। প্রথম ১০ ওভারে যদি ৪০ রানও হয় কোনো সমস্যা নেই। এই উইকেটে যখন-তখন মারা যায়। সব ব্যাটসম্যানের এই সামর্থ্য আছে। চেষ্টা করেছি বড় জুটি গড়তে আর ২০ ওভারের মধ্যে এমন কিছু করতে, যাতে পরের ৩০ ওভার সহজ হয়।’

কীভাবে টানা ব্যাটিং ব্যর্থতা থেকে বের হলেন, সে রহস্যও উন্মুক্ত করেন সৌম্য। তিনি বলেন, আমার ব্যাটিং আমার মতোই আছে। আগের ম্যাচগুলোয় রান করিনি। এখন করছি। আক্ষেপ হচ্ছিল, শুরুতে ৩০/৪০ করে আউট হচ্ছিলাম। মাঝে কয়েকটি ম্যাচে ১, ২, ০ রানে আউট হয়েছি। পরে মনে হলো ১, ২, ০ শূন্য রানের চেয়ে ৩০/৪০ ভালো, ওটাতে আগে ফিরতে হবে। যখন ৩০/৪০ রান করেছি, তখন মনে হয়েছে আজ এই রানে ফেরা যাবে না। আজ ৫০ করতেই হবে। মাঠেই পরিকল্পনা করেছি। উইকেট ভালো ছিল। সুযোগ ছিল রানটা বড় করা। করতে পেরেছি।


ঢাকা লীগে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান
ক্রিকেটার     রান      সময়
সৌম্য সরকার (আবাহনী)    ২০৮*    ২০১৮-২০১৯
রকিবুল হাসান (মোহামেডান)    ১৯০    ২০১৬-২০১৭
চামারা কাপুগেদারা (ভিক্টোরিয়া)    ১৬১    ২০১৪-২০১৫
রবি বোপারা (প্রাইম ব্যাংক)    ১৫৭    ২০১৩-২০১৪
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status