শেষের পাতা
সঞ্চয়পত্রে ঝোঁক সবার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা সরকারের
এম এম মাসুদ
২৩ এপ্রিল ২০১৯, মঙ্গলবার, ৯:৪১ পূর্বাহ্ন
ব্যাংকগুলোতে আর্থিক কেলেঙ্কারি ও আমানতের সুদের হার কম ও পুঁজিবাজারে অস্থিরতার কারণে ‘বিনিয়োগের নিরাপদ ক্ষেত্র’ হিসেবে সঞ্চয়পত্র কেনার দিকেই ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা। ক্রেতা বেড়ে যাওয়ায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে কড়াকড়ি আরোপ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে সব ধরনের ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে সঞ্চয়পত্র বিক্রির ব্যবস্থা বাতিল করে অনলাইনে বিক্রি কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। আগামী ১লা জুলাই থেকে সারা দেশে এ পদ্ধতি চালু করতে নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এক লাখ টাকার উপরে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীর করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (ই-টিআইএন) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিনিয়োগ করতে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও মোবাইল নম্বর লাগবে। বিনিয়োগকৃত অর্থের আসল ও সুদ সরাসরি চলে যাবে গ্রাহকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। এর বাইরে নতুন করে আরো কিছু উদ্যোগও নেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাংকের প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না মানুষ। তাই নিরাপদ বিনিয়োগ ভেবে সঞ্চয়পত্রই কিনছে। পুঁজিবাজারেও মন্দার কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়েছে। অবশ্য অনলাইন পদ্ধতি চালু হলে কালো টাকা ও এ খাতে অতিরিক্ত বিনিয়োগ বন্ধ হবে বলে মনে করেন তারা।
সূত্র জানায়, এর আগে বিক্রির লাগাম টেনে ধরতে ২০১৫ সালের ১০ই মে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদ হার গড়ে ২ শতাংশ কমানো হয়েছিল। কিন্তু বিক্রি কমেনি। এর পরও দুই দফা সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কমানো হয়নি।
সূত্রমতে, বিনিয়োগকারীর ট্যাক্সফাইল নজরদারির মধ্যে আনতে আয়কর বিভাগের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করার উদ্যোগ রয়েছে। এর ফলে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীর আয়কর ফাইলে দেখানো বিনিয়োগের হিসাবের সঙ্গে সঞ্চয়পত্রে প্রকৃত বিনিয়োগের পরিসংখ্যান যাচাই করা সম্ভব হবে। অন্যদিকে যৌথ নামে কোনো কোম্পানি কর্মীর জন্য সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে তার একক নামে কোনো বিনিয়োগ রয়েছে কিনা-তা ধরতে যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের (আরজেএসসি) কার্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে সঞ্চয় অধিদপ্তর। একইভাবে নির্বাচন কমিশনের তথ্যভান্ডারেও প্রবেশাধিকার পেতে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা অঞ্চলে সঞ্চয়পত্র বিক্রির ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম ইতিমধ্যে কার্যকর হয়েছে। এপ্রিল থেকে ঢাকা অঞ্চলে অনলাইনে সঞ্চয়পত্র বিক্রি, এক লাখ টাকার উপরে সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক ই-টিআইএন জমা দেয়ার নিয়ম কার্যকর হয়েছে। লেনদেনও হচ্ছে ব্যাংকের মাধ্যমে।
এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণায়ের এক চিঠিতে বলা হয়, অর্থ বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ: অগ্রাধিকার কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা রক্ষা (পিইএমএস)’ শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় জাতীয় সঞ্চয় স্কিম অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালুসহ সঞ্চয় স্কিমের সুদ ও আসলের (বিইএফটিএন) মাধ্যমে সরাসরি গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবে পাঠানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের বেশ কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সঞ্চয়পত্র সংক্রান্ত নির্দেশনাগুলো হচ্ছে- সঞ্চয়পত্র অটোমেশন ব্যবস্থা চলতি মাসের মধ্যেই ঢাকা মহানগরীতে, এপ্রিলে বিভাগীয় শহরে এবং জুন মাসের মধ্যে দেশের অন্যান্য স্থানে অবস্থিত সব দপ্তরে চালু করতে হবে। আগামী ১লা জুলাই থেকে এ ব্যবস্থার আওতাবহির্ভূতভাবে কোনো সঞ্চয় স্কিম লেনদেন না করার বিষয়ে সঞ্চয় স্কিম লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের আওতাধীন দপ্তরগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।
জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সরকারি ব্যয়-ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ কর্মসূচির আওতায় সোনালী ব্যাংক, জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ৪২টি ব্যাচে ভাগ করে প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ‘ন্যাশনাল সেভিং সার্টিফিকেটস অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ নামে সঞ্চয়পত্রের অনলাইন ডাটাবেজ তৈরির কাজ চলছে। ডাটাবেজ চালু হলে সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্রের ই-টিন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) সনদ জমা দিতে হবে। ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত নগদ টাকা দিয়ে সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে। টাকার পরিমাণ এর বেশি হলে অবশ্যই ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। এজন্য সঞ্চয়কারীর ব্যাংক হিসাব নম্বর, মোবাইল নম্বর দিতে হবে।
এদিকে চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে যে পরিমাণ অর্থ ধার করার লক্ষ্য ধরেছিল, তার চেয়েও ৩৬ শতাংশ বেশি নিয়ে ফেলেছে আট মাসেই। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা গেছে, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে ৩৫ হাজার ৬০২ কোটি ৪৯ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। অথচ এবারের বাজেটে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্য ঠিক করেছিল। এ হিসাবে অর্থবছরের আট মাসেই সঞ্চয়পত্র থেকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বেশি অর্থ ধার করেছে সরকার। তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে (জুলাই-মার্চ) ৩৫ হাজার ৬০২ কোটি ৪৯ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের একই সময়ে এই বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩৩ হাজার ১১৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। এ হিসাবে চলতি অর্থবছরের আট মাসে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি বেড়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ।
আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর যা অবশিষ্ট থাকে, তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। বিনিময়ে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রতি মাসে সুদ দিতে হয়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়।
অর্থনীতিবিদ জায়েদ বখত বলেন, মানুষ ব্যাংকের প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না। নিরাপদ বিনিয়োগ ভেবে সঞ্চয়পত্রই কিনছে। পুঁজিবাজারে মন্দার কারণেও সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়েছে বলে মনে করেন তিনি। বলেন, এভাবে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়তে থাকলে সরকারের ভবিষ্যৎ ঋণের বোঝা বেড়ে যাবে। সেই বোঝা কমাতেই এর সুদের হার কমানো উচিত। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ‘পেনশনার সঞ্চয়পত্র’ এবং মহিলাদের জন্য ‘পরিবার সঞ্চয়পত্র’ ছাড়া অন্য সঞ্চয়পত্রের সুদের হার দ্রুত কমানোর পরামর্শ দেন এই অর্থনীতিবিদ।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ইতিমধ্যে যারা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেছেন তাদেরও জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও ই-টিন সনদ জমা দিতে হবে। এ উদ্যোগের ফলে সঞ্চয়পত্রে প্রকৃত বিনিয়োগকারীরাই আসবে। একই সঙ্গে কালো টাকা বিনিয়োগকারীদের চিহ্নিত করা যাবে।
কর্মকর্তারা বলেন, অনেক ব্যক্তি নামে-বেনামে ডাকঘর, সঞ্চয় অফিস ও ব্যাংকের মাধ্যমে আলাদা আলাদাভাবে সঞ্চয়পত্র কিনে আসছিলেন। এতে তারা সর্বোচ্চ সীমা ছাড়িয়ে কোটি কোটি টাকা এ খাতে বিনিয়োগ করে মুনাফা নিচ্ছিলেন। আবার এ খাতে বিনিয়োগের উৎস জানতে চাওয়া হয় না। এ কারণে অনেকেই অপ্রদর্শিত বা কালো টাকা এ খাতে বিনিয়োগ করে আসছিলেন। ভিন্ন ভিন্ন অফিসের মাধ্যমে ম্যানুয়ালি লেনদেন হওয়ায় তা ধরা যায়নি। ফলে নারী ও সীমিত আয়ের মানুষ ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের জন্য দেয়া সরকারি সুবিধা (বিনিয়োগের সুদ) চলে যাচ্ছিল তাদের পকেটে। এটি ঠেকানোর জন্যই সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে।
বর্তমানে পরিবার সঞ্চয়পত্রে একজন ব্যক্তি একক নামে সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ টাকা ও তিনমাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে একক নামে সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা যৌথ নামে সর্বোচ্চ ৬০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে পারেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাংকের প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না মানুষ। তাই নিরাপদ বিনিয়োগ ভেবে সঞ্চয়পত্রই কিনছে। পুঁজিবাজারেও মন্দার কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়েছে। অবশ্য অনলাইন পদ্ধতি চালু হলে কালো টাকা ও এ খাতে অতিরিক্ত বিনিয়োগ বন্ধ হবে বলে মনে করেন তারা।
সূত্র জানায়, এর আগে বিক্রির লাগাম টেনে ধরতে ২০১৫ সালের ১০ই মে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদ হার গড়ে ২ শতাংশ কমানো হয়েছিল। কিন্তু বিক্রি কমেনি। এর পরও দুই দফা সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কমানো হয়নি।
সূত্রমতে, বিনিয়োগকারীর ট্যাক্সফাইল নজরদারির মধ্যে আনতে আয়কর বিভাগের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করার উদ্যোগ রয়েছে। এর ফলে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীর আয়কর ফাইলে দেখানো বিনিয়োগের হিসাবের সঙ্গে সঞ্চয়পত্রে প্রকৃত বিনিয়োগের পরিসংখ্যান যাচাই করা সম্ভব হবে। অন্যদিকে যৌথ নামে কোনো কোম্পানি কর্মীর জন্য সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে তার একক নামে কোনো বিনিয়োগ রয়েছে কিনা-তা ধরতে যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের (আরজেএসসি) কার্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে সঞ্চয় অধিদপ্তর। একইভাবে নির্বাচন কমিশনের তথ্যভান্ডারেও প্রবেশাধিকার পেতে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা অঞ্চলে সঞ্চয়পত্র বিক্রির ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম ইতিমধ্যে কার্যকর হয়েছে। এপ্রিল থেকে ঢাকা অঞ্চলে অনলাইনে সঞ্চয়পত্র বিক্রি, এক লাখ টাকার উপরে সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক ই-টিআইএন জমা দেয়ার নিয়ম কার্যকর হয়েছে। লেনদেনও হচ্ছে ব্যাংকের মাধ্যমে।
এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণায়ের এক চিঠিতে বলা হয়, অর্থ বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ: অগ্রাধিকার কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা রক্ষা (পিইএমএস)’ শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় জাতীয় সঞ্চয় স্কিম অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালুসহ সঞ্চয় স্কিমের সুদ ও আসলের (বিইএফটিএন) মাধ্যমে সরাসরি গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবে পাঠানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের বেশ কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সঞ্চয়পত্র সংক্রান্ত নির্দেশনাগুলো হচ্ছে- সঞ্চয়পত্র অটোমেশন ব্যবস্থা চলতি মাসের মধ্যেই ঢাকা মহানগরীতে, এপ্রিলে বিভাগীয় শহরে এবং জুন মাসের মধ্যে দেশের অন্যান্য স্থানে অবস্থিত সব দপ্তরে চালু করতে হবে। আগামী ১লা জুলাই থেকে এ ব্যবস্থার আওতাবহির্ভূতভাবে কোনো সঞ্চয় স্কিম লেনদেন না করার বিষয়ে সঞ্চয় স্কিম লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের আওতাধীন দপ্তরগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।
জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সরকারি ব্যয়-ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ কর্মসূচির আওতায় সোনালী ব্যাংক, জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ৪২টি ব্যাচে ভাগ করে প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ‘ন্যাশনাল সেভিং সার্টিফিকেটস অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ নামে সঞ্চয়পত্রের অনলাইন ডাটাবেজ তৈরির কাজ চলছে। ডাটাবেজ চালু হলে সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্রের ই-টিন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) সনদ জমা দিতে হবে। ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত নগদ টাকা দিয়ে সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে। টাকার পরিমাণ এর বেশি হলে অবশ্যই ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। এজন্য সঞ্চয়কারীর ব্যাংক হিসাব নম্বর, মোবাইল নম্বর দিতে হবে।
এদিকে চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে যে পরিমাণ অর্থ ধার করার লক্ষ্য ধরেছিল, তার চেয়েও ৩৬ শতাংশ বেশি নিয়ে ফেলেছে আট মাসেই। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা গেছে, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে ৩৫ হাজার ৬০২ কোটি ৪৯ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। অথচ এবারের বাজেটে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্য ঠিক করেছিল। এ হিসাবে অর্থবছরের আট মাসেই সঞ্চয়পত্র থেকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বেশি অর্থ ধার করেছে সরকার। তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে (জুলাই-মার্চ) ৩৫ হাজার ৬০২ কোটি ৪৯ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের একই সময়ে এই বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩৩ হাজার ১১৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। এ হিসাবে চলতি অর্থবছরের আট মাসে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি বেড়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ।
আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর যা অবশিষ্ট থাকে, তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। বিনিময়ে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রতি মাসে সুদ দিতে হয়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়।
অর্থনীতিবিদ জায়েদ বখত বলেন, মানুষ ব্যাংকের প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না। নিরাপদ বিনিয়োগ ভেবে সঞ্চয়পত্রই কিনছে। পুঁজিবাজারে মন্দার কারণেও সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়েছে বলে মনে করেন তিনি। বলেন, এভাবে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়তে থাকলে সরকারের ভবিষ্যৎ ঋণের বোঝা বেড়ে যাবে। সেই বোঝা কমাতেই এর সুদের হার কমানো উচিত। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ‘পেনশনার সঞ্চয়পত্র’ এবং মহিলাদের জন্য ‘পরিবার সঞ্চয়পত্র’ ছাড়া অন্য সঞ্চয়পত্রের সুদের হার দ্রুত কমানোর পরামর্শ দেন এই অর্থনীতিবিদ।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ইতিমধ্যে যারা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেছেন তাদেরও জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও ই-টিন সনদ জমা দিতে হবে। এ উদ্যোগের ফলে সঞ্চয়পত্রে প্রকৃত বিনিয়োগকারীরাই আসবে। একই সঙ্গে কালো টাকা বিনিয়োগকারীদের চিহ্নিত করা যাবে।
কর্মকর্তারা বলেন, অনেক ব্যক্তি নামে-বেনামে ডাকঘর, সঞ্চয় অফিস ও ব্যাংকের মাধ্যমে আলাদা আলাদাভাবে সঞ্চয়পত্র কিনে আসছিলেন। এতে তারা সর্বোচ্চ সীমা ছাড়িয়ে কোটি কোটি টাকা এ খাতে বিনিয়োগ করে মুনাফা নিচ্ছিলেন। আবার এ খাতে বিনিয়োগের উৎস জানতে চাওয়া হয় না। এ কারণে অনেকেই অপ্রদর্শিত বা কালো টাকা এ খাতে বিনিয়োগ করে আসছিলেন। ভিন্ন ভিন্ন অফিসের মাধ্যমে ম্যানুয়ালি লেনদেন হওয়ায় তা ধরা যায়নি। ফলে নারী ও সীমিত আয়ের মানুষ ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের জন্য দেয়া সরকারি সুবিধা (বিনিয়োগের সুদ) চলে যাচ্ছিল তাদের পকেটে। এটি ঠেকানোর জন্যই সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে।
বর্তমানে পরিবার সঞ্চয়পত্রে একজন ব্যক্তি একক নামে সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ টাকা ও তিনমাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে একক নামে সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা যৌথ নামে সর্বোচ্চ ৬০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে পারেন।