ভারত

আজ ভারতে তৃতীয় দফার ভোট

পশ্চিমবঙ্গে ৯২ শতাংশ বুথে আধা সামরিক বাহিনী

পরিতোষ পাল, কলকাতা থেকে

২৩ এপ্রিল ২০১৯, মঙ্গলবার, ৯:৩৭ পূর্বাহ্ন

ভারতের ১৭ তম লোকসভা নির্বাচনের তৃতীয় দফার ভোটে আজ মঙ্গলবার ১৩টি রাজ্য ও ২টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ১১৬টি লোকসভা আসনে ভোট গ্রহণ হচ্ছে। ভারতে এবার সাত দফায় ভোট হচ্ছে। প্রথম দুই দফায় মোট ১৮৬টি আসনে ভোট নেওয়া হয়েছে। এই দফায় ১৬১২জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারিত হতে চলেছে। আজ ভোট নেওয়া হচ্ছে গুজরাটের সবকটি অর্থাৎ ২৬টি আসনেই। একইসঙ্গে এই রাজ্যের ৪টি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনেও ভোট নেওয়া হচ্ছে।  এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের ৫টি আসনে, আসামের ৪টি আসনে, উত্তর প্রদেশের ১০ টি আসনে, ওড়িশার ৬টি লোকসভা আসন এবং ৪২টি বিধানসভা আসনে, ছত্তিশগড়ের ৭টি আসনে, কর্ণাটকের ১৪টি আসনে,  কেরলের ২০টি আসনে, মহারাষ্ট্রের ১৪টি আসনে, গোয়ার ২টি লোকসভা এবং ৩টি বিধানসভা আসনে, বিহারের ৫টি আসনে, দাদরা নগর হাভেলির ১টি কেন্দ্রে এবং দমন দিউয়ের ১টি আসনে ভোট নেওয়া হচ্ছে। গত দফায় ভোট নেওয়ার কথা থাকলেও নিরাপত্তার অভাবের জন্য ত্রিপুরা পূর্ব কেন্দ্রের ভোট পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই কেন্দ্রেও আজ ভোট হচ্ছে। আজ যে সব আসনে ভোট নেওয়া হচ্ছে তার মধ্যে ৬৩টি আসনেই লাল সতর্কতা নেওয়া হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশন সুত্রে জানা গেছে।্ এই সব কেন্দ্রে ফৌজদারি আপরাধী প্রার্থী রয়েছেন ৫৭০ জন। আজ দুই প্রতিপক্ষ দল কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী এবং বিজেপির সভাপতি অমিত শাহর ভাগ্য নির্ধারিত হচ্ছে। রাহুল আমেথির পাশাপাশি দাঁড়িয়েছেন কেরলের ওয়েনাদ কেন্দ্র থেকে। অন্যদিকে গুজরাটের গান্ধীনগর কেন্দ্রের সাতবারের সাংসদ লালকৃষ্ণ আদবানিকে সরিয়ে এবারই প্রথম প্রার্থী হয়েছেন অমিত শাহ। এছাড়া আর যাদের ভাগ্য এদিন নির্ধারিত হতে চলেছে তাদের অন্যতম হলেন, সমাজবাদী পার্টির মুলায়ম সিং যাদব, এনসিপির সুপ্রিয়া সুলে, কংগ্রেসের শশী থারুর, অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়, পিপলস ডেমোক্রাটিক পার্টির মেহবুবা মুফতি প্রমুখ।
তৃতীয় দফার নির্বাচন বিজেপির কাছে বিরাট পরীক্ষা এবারের জয় লাভের ক্ষেত্রে। বিজেপি এই দফায় তাদের জয়ী ৬২টি আসন দখলে রাখার লক্ষ্যে লড়াই করছে। অন্যদিকে কংগ্রেস গতবারের জয়ী ১৬টি আসনকে আরও বাড়িয়ে নিয়ে যাবার লক্ষ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শামিল হয়েছে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃতীয় দফার ১১৬টি আসনের মধ্যে বিজেপি জিতেছিল ৬২টি আসনে। এই ৬২টির মধ্যে গুজরাটের ২৬টি আসনেই বিজেপি জয়ী হয়েছিল। এছাড়া কর্ণাটকে ১৪টি মধ্যে ১১টিতে, উত্তর প্রদেশে ১০টির মধ্যে ৮টিতে, ছত্তিশগড়ে ৭টির মধ্যে ৬টিতে, মহারাষ্ট্রে ১৪টির মধ্যে ৬টিতে, গোয়ার ২টি আসনে এবং আসাম, বিহার, দাদরা নগর হাভেলি এবং দিউ দমনের ১টি করে আসনে বিজেপি জয়ী হয়েছিল। অন্যদিকে কংগ্রেসর ১৬টি আসন ছাড়া বিজু জনতা দল ৬টি, সিপিআইএম ৭টি এনসিপি ৪টি, সমাজবাদী পার্টি ৩টি, শিব সেনা ২টি আরজেডি ২টি, এআইডিইউএফ ২টি, মুসলিম লীগ ২টি, লোকজনশক্তি পার্টি ১টি, পিপলস ডেমোক্রাটিক পার্টি ১টি, আরএসপি ১টি, কেরল কংগ্রেস ১টি, সিপিআই ১টি, তৃণমূল কংগ্রেস ১টি, স্বাভিমানি পক্ষ ১টি এবং নির্দলরা ৩টি আসনে জয়ী হয়েছিল। এবারের নির্বাচনে মোদীর নিজের রাজ্য গুজরাটের ২৬টি আসনে বিজেপি কি ফল করবে তার উপর নির্ভর করছে মোদীর ভবিষ্যৎ। গুজরাটে কংগ্রেস এবার জোর টক্কর দিতে চলেছে। সঙ্গে নিয়েছে পতিদার আন্দোলনের নেতা হার্দিক প্যাটেলকে। গুজরাট থেকে ১০-১২টি আসন পাওয়ার লক্ষ্যে কংগ্রেস ঝাঁপিয়ে পড়েছে। কর্ণাটকে আজ যেসব কেন্দ্রে ভোট হচ্ছে তার অধিকাংশ কেন্দ্রে বিজেপির ভিত্তি একসময় বেশ শক্তিশালী ছিল। কিন্তু এবার কংগ্রেস ও জনতা দল ইউয়ের জোট বিজেপিকে চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। গত বিধানসভা নির্বাচনে এই রাজ্য থেকে কংগ্রেস বিজেপির থেকে বেশি ভোট পেয়েছিল। উত্তরপ্রদেশের আজ ভোট হচ্ছে মূলত যাদব অধ্যুষিত এলাকায়। সেখানে বিজেপি কতটা আসন পাবে সে ব্যাপারে সন্দিহান দলই। আর সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টির জোট বিজেপিকে ভালভাবেই ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। মহারাষ্ট্রে এনসিপি ও কংগ্রেস জোট করে লড়াই করছে। স্বাভাবিকভাবেই গতবারের বিজয়ী আসন ধরে রাখাই বিজেপির কাছে চ্যালেঞ্জ। ছত্তিশগড়ে বিজেপি প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা মোকাবিলায় আগের সব সাংসদকে পাল্টে নতুন প্রার্থী দিয়ে জয়ের ধারা অক্ষুন্ন রাখতে চেয়েছে। তবে পশ্চিমবঙ্গে যে ৫টি আসনে আজ নির্বাচন হচ্ছে তার অন্তত একটিতে বিজেপি জয় চাইছে।
অন্যান্য রাজ্যের মত পশ্চিমবঙ্গের ৫টি আসনে আজ ভোট নেওয়া হচ্ছে। এই আসনগুলি হল, মালদা উত্তর, মালদা দক্ষিণ, বালুরঘাট, জঙ্গিপুর ও মুর্শিদাবাদ। এর মধ্যে বালুরঘাট আসনটি গতবার তৃণমূলের দখলে এসেছিল। বাকীগুলির মধ্যে কংগ্রেস ৩টি আসনে এবং সিপিআইএম ১টি আসনে জিতেছিল  এবার পাঁচটি আসনেই রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ও বিরোধী দল বিজেপির মধ্যে জোর লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। অবশ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবার পাঁচটি আসনই চাইছেন । তিনি এ নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালিয়েছেনও। মমতার মতে, এই পাঁচ আসন জিতলেই তৃণমূল এবার ৪২টি আসনই পাবে। দিল্লিতে মোদিকে হটিয়ে নতুন সরকার গড়ার কারিগর হবেন তিনি। কিন্তু ৫ আসনেই রয়েছে বিপক্ষ বিজেপি ও কংগ্রেস প্রার্থী। মালদহ উত্তর আসনে এবার প্রার্থী দেয়নি বামফ্রন্ট। এখানে লড়াই হচ্ছে ত্রিমুখী। অন্য চারটি আসনে লড়াই হচ্ছে চতুর্মুখী। জঙ্গিপুর আসনে বিজেপির একমাত্র সংখ্যালঘু প্রার্থী  মাহফুজা খাতুন প্রচারে ঝড় তুলেছেন । এদিকে পশ্চিমবঙ্গে ভোট নির্বিঘেœ করানোর জন্য পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ইপর ভরসা না করে কেন্দ্রীয বাহিনী ব্যবহারের উপর জোর দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। প্রথম দুই তদফায় যে বিক্ষপ্ত সংঘর্ষ ও গোলমাল হযেছে তা যাতে তৃতীয় দফায় না হয় সেজন্য ৩২৪ কোম্পানি আধাসামরিক বাহিনী নিয়োগ করা হয়েছে। রাজ্যের বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে জানিয়েচেন, বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর চার জন জওয়ানই গোলমাল ঠেকাতে যথেষ্ট। তাই অধিকাংশ বুথে জওয়ান দিতে পুরনো পরিকল্পনা বদলেছি। তার ফলেই ৩২৪ কোম্পানি বাহিনী দিয়ে ৯২.০৩% বুথে আধাসেনা মোতায়েন করা সম্ভব হয়েছে। এরপরেও কুইক রেসপন্স টিমে বহু সংখ্যক জওয়ান থাকছে।  বিরোধিরা অবশ্য বারে বারে ১০০ শতাংশ বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী দাবি করে এসেছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status