দেশ বিদেশ

নিত্যপণ্যের দাম

ব্যবসায়ীরা বলছে বাড়ছে না ক্রেতারা টের পাচ্ছে বাজারে

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম থেকে

২৩ এপ্রিল ২০১৯, মঙ্গলবার, ৯:৩৩ পূর্বাহ্ন

গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবারেও পেয়াজের দাম প্রতি কেজি বিক্রয় হয় ২২ টাকায়। এর এক সপ্তাহ আগে বিক্রয় হয় ২০ টাকায়। গতকাল চট্টগ্রামের সবকটি বাজারে প্রতি কেজি পেয়াজ বিক্রী হচ্ছে ২৬ থেকে ২৭ টাকায়। একইভাবে এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি রসুন বিক্রয় হয়ছিল ৮০ টাকায়। এখন তা বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রয় হচ্ছে ১২০ টাকায়। আলু প্রতি কেজি ১৬ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রয় হচ্ছে ২০ টাকায়। প্রতি কেজি চিনি ৫২ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রয় হচ্ছে ৫৬ টাকায়। প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ৯০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রয় ৯৮ টাকায়। এভাবে বেড়েছে ছোলা, ডাল, আদা, ময়দা, কাঁচামরিচসহ সবরকম নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য। যা কিনতে গিয়ে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন ক্রেতারা। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, নিত্যপণ্যের মজুদ পর্যাপ্ত থাকায় এবার কোন জিনিসের মূল্য বাড়ছে না। নিত্যপণ্যের মূল্য বাড়ার কথা বললে উল্টো চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বসেন চট্টগ্রাম মহানগরীর বহদ্দারহাটের হাটাহাজারী স্টোরের বিক্রেতা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, প্রতিবছর রমজান শুরুর আগে যে হারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ে। সে হারে এবার কী বেড়েছে। যা বেড়েছে তা খুবই সামান্য।
তিনি বলেন, গত বছর এদিনে ছোলা প্রতি কেজি ৯০ টাকা, রসুন ১৬০ টাকা, পেয়াজ ৪০ টাকায়, চিনি ৬৫ থেকে ৬৮ টাকায় বিক্রি করেছি। সে তুলনায় এবার অর্ধেক দামও বাড়েনি। সে হিসেবে পণ্যের দাম কোথায় বাড়ল দেখান।
খাতুনগঞ্জের পাইকারী ব্যবসায়ী আর এম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আলমগীর পারভেজ বলেন, এবার আমাদের কাছে চিনি ও সয়াবিনের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও সিঙ্গাপুর থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ চিনি আমদানি করা হয়েছে। তাই রমজানে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
খাতুনগঞ্জ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এখানে এস আলম ব্র্যান্ডের চিনি মণ প্রতি ১ হাজার ৭৫৫ টাকায় (৪৭ টাকা কেজি), তীর ও ফ্রেশ ব্র্যান্ডের চিনি ১ হাজার ৭৫০ টাকায় (৪৬ দশমিক ৮৯ টাকা কেজি) এবং ঈগলু ব্র্যান্ডের চিনি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৭৭০ টাকা দরে (৪৭ দশমিক ৪২ টাকা) বিক্রয় হচ্ছে।
অন্যদিকে কর্ণফুলী ব্র্যান্ডের সয়াবিন মণ প্রতি ১ হাজার ৭৫৫ টাকায় (৭৬ দশমিক ৩৬ টাকা) এবং ফ্রেশ, তীর ও মাল্টি ব্র্যান্ডের সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮৬০ টাকায় (৭৬ দশমিক ৬৩ টাকা)। কিন্তু সে পন্য খুচরা বাজারে বিক্রয় হচ্ছে কেজি প্রতি আরো ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি দামে। তৈয়্যবিয়া ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী সোলায়মান বাদশা জানান, রমজান উপলক্ষে এবার ছোলার পর্যাপ্ত পরিমাণ মজুদ আছে। অন্যদিকে গত বছরের খেজুরের যথেষ্ট পরিমাণ মজুদ রয়ে গেছে। নতুন করে আরো খেজুর আমদানিও করা হয়েছে। সরবরাহ ঠিক থাকলে দামও সহনশীল পর্যায়ে থাকবে। তিনি জানান, এখন আগের দিন আর নেই। সবকিছুর পরিবর্তন হয়েছে। সুতরাং যে কেউ চাইলেই দাম বাড়াতে পারবে না। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে এখানে দাম বেড়ে যায়। আর দাম কমলে এখানে দাম কমে যায়। ব্যবসায়ীরা জানান, রমজান উপলক্ষে অস্ট্রেলিয়া ও মিয়ানমার থেকে আনা ছোলা মানভেদে কেজি প্রতি ৬৩ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সৌদি আরব, দুবাই, আলজেরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আমদানি করা খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১০ কেজি কার্টনের প্যাকেট ৮০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা দরে। আল জাহেদী খেজুর ৮০০ টাকা, সায়ের খেজুর ১ হাজার টাকা, নাগাল খেজুর ১ হাজার ৩০০ টাকা, জাবাস খেজুর ১ হাজার ৭৮০ টাকা এবং ৫ কেজি কার্টনের কে এস খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকা দরে। কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, রমজানে জেলা প্রশাসনের পাঁচজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পাঁচটি দল নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারসহ নগরের শপিংমলগুলোতে মনিটরিং করবে। এসব দলে ক্যাব ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরাও থাকবেন। সবকিছু ঠিক থাকলে রমজানে দাম বাড়ানো ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে রমজানে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে ১৮ই এপ্রিল চট্টগ্রামের স্থানীয় ব্যবসায়ী ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বাণিজ্য সচিব মো. মফিজুল ইসলাম জানান, রমজানে বাজার স্থিতিশীল রাখার ব্যাপারে সরকার এবার শক্ত অবস্থানে আছে। বাণিজ্য সচিব বলেন, রমজানে বেশি লাভ না করে ন্যায্যমূল্যে পণ্য দিয়ে ক্রেতাদের সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে। অতি মুনাফা করতে দ্রব্যমূল্য বাড়াবেন না। এর জন্য প্রয়োজন হলে আপনারা আমদানি করতে পারেন। এখনো যথেষ্ট সময় আছে।



   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status