বাংলারজমিন

সরাইলে সিন্ডিকেটের কব্জায় শিক্ষক বদলি বাণিজ্য

সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি

২৩ এপ্রিল ২০১৯, মঙ্গলবার, ৮:৩২ পূর্বাহ্ন

সরাইলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বদলি এখন সিন্ডিকেটের কব্জায়। নিয়ম-নীতি নেই। এ সিন্ডিকেট ও কর্তাবাবুর যোগসাজশে এবার হয়েছে বড় অঙ্কের বদলি বাণিজ্য। কৌশলে গোপন রাখা হয়েছে শূন্য পদ ও প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞপ্তি। মাসোয়ারা না দেয়ায় ‘সিনিয়র’ ও ‘প্রতিবন্ধী’ কোটা সুবিধাবঞ্চিত হয়েছেন অনেক শিক্ষক। ৬-৭ জন শিক্ষকের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এ সিন্ডিকেটের দাপুটের কাছে অসহায় সবাই। এরা স্কুল ডিউটি ফেলে সবসময় অফিসেই অবস্থান করেন। মাঝে মধ্যে শিক্ষা কর্মকর্তার টেবিলের আড্ডার সাথীও হন তারা। জনৈক আওয়ামী লীগ নেতার কাছে বদলির জন্য চেয়ে বসেছেন ১৫ হাজার টাকা ঘুষ। কাজ না হওয়ায় অনেকের টাকা ফেরত দেয়ার ঘটনাও রয়েছে। অধিকার বঞ্চিত ২/১ জন শিক্ষক অনিয়মের নালিশ করেছেন ইউএনও, ডিসি ও ডিপিও’র কাছে। জনপ্রতি ২০-৬০/৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত মাসোয়ারা নেয়ার বিষয়টি চাউর রয়েছে সকলের মুখে মুখে। এবার বদলিকৃত শিক্ষকের সংখ্যা অফিস সহকারী ৪৫-৫০ জনের কথা বললেও শিক্ষা কর্মকর্তা বলেছেন ৩০-৩৫ জন।   
ভুক্তভোগী অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার সরাইলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলিতে বড় ধরনের বাণিজ্য হয়েছে। আর এজন্য অনেক ক্ষেত্রে মানা হয়নি নীতিমালা। টাকা বেশি দিতে পারলেই বদলি। এক জায়গায় ৩-৪ বছর চাকরি করেও বদলি হতে পারেননি অনেক শিক্ষক। বদলি নীতিমালার ৫ এর (২) ধারায় বলা আছে ‘প্রশাসনিক কারণে বদলি হওয়ার ৩ (তিন) বছরের মধ্যে কোনো শিক্ষক পুনঃবদলির জন্য আবেদন করতে পারবেন না।’ কিন্তু মাত্র ৩-৫ মাস আগে বদলি হয়েও এবার আবার বদলি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষক। শিক্ষক বদলি নীতিমালার ধারা ৩ এর ৩.১২ উপধারায় বলা আছে-‘ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ এর ৩ ধারায় সংজ্ঞায়িত প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা বিবেচনা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বদলি করা যাবে। শিক্ষকের সন্তান প্রতিবন্ধী হলে তিনিও এই সুবিধা পাবেন।’ এ ধারাকে মানেননি শিক্ষা কর্মকর্তা। প্রতিবন্ধী ও সিনিয়র হওয়া সত্ত্বেও বদলি বঞ্চিত হয়েছেন নোয়াগাঁও পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোছাম্মৎ শাকেরা বেগম। কারণ তিনি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে যাননি। উনার শারীরিক প্রতিবন্ধী আইডি নং-১৯৮৫১২১৯৪২৮২৭৪৫৬০-০২। উনার ৪-৫ বছরের জুনিয়র শিক্ষককে ওই স্থানে বদলি করেছেন। শাকেরা এখন এ অনিয়মের বিষয়টি নিয়ে কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। ইউএনও, ডিপিও ও জেলা প্রশাসকের কাছে এ বিষয়ে মৌখিক নালিশ করেছেন। সবশেষ গত ৭ই এপ্রিল শিক্ষা কর্মকর্তা শাকেরাকে ডেপুটেশনে চলে আসার পরামর্শ দিয়েছেন। একই বিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক শানজিদা খানম। তার একমাত্র শিশু সন্তান অটিজম রোগী। মাসোয়ারার দাপুটে ভেস্তে গেছে উনার অটিজম কোটার অধিকার। তেরকান্দা স্কুলের জনৈক শিক্ষক সরাইল মডেল স্কুলে আসতে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। অজানা কারণে বিজ্ঞপ্তি গোপন রেখে জুনিয়র এক শিক্ষককে তার স্থলে বদলি করা হয়েছে। অবশ্য তার টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও বিজ্ঞপ্তি গোপনের তালিকায় রয়েছে- পূর্ব কুট্টাপাড়া, কালিকচ্ছ পশ্চিম, সূর্যকান্দি স্কুল, কালিকচ্ছ উত্তর ও নিজ সরাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ স্কুল গুলোতে মোটা অঙ্কের টাকায় হয়েছে বদলি বাণিজ্য। আর স্থগিত রেখেছেন নিজ সরাইল সরকারি বিদ্যালয়ের বদলি।
বদলিতে অনিয়মের কারিশমা: সাধারণত জানুয়ারি থেকে মার্চ এই তিন মাসই চলে বদলি। অন্যান্য সময় ৩ মাসে শূন্য পদ প্রতিষ্ঠানের নামের তালিকা দেয়া হতো ৩ বার। আবেদনের সময়ও দেয়া হতো ৭-১০ দিন। কিন্তু এবার হয়েছে কারিশমা। কাজ হয়েছে জাদুর মতো দ্রুত। জানুয়ারি মাসের ১৩ তারিখে দিয়েছিল একটি সার্কোলার। এরপর সবই কৌশল। এক সার্কোলারের কাজ শেষ করে আরেক সার্কোলার দিতে হয়। আবেদনের পর বদলির প্রসেসিং-এর জন্য ৭-১০ দিন সময় লাগে। কর্তৃপক্ষের জাদুতে ২/১ দিনেও বদলির কাজ হয়েছে। শুধু দিন নয়। রাতেও চলেছে বদলির প্রসেসিং। হালাল করতে অনেক সময় স্বল্প সময়ের জন্য দেয়া হয়েছে গোপন সার্কোলার। আবার দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ হয়েছে কাজ। মাসের ২৭ তারিখ বিদ্যালয়ের পদ খালি হলে ২৮ তারিখই আরেকজন শিক্ষক এসে যোগদান করেছেন। এত দ্রুত সময়ের মধ্যে কিভাবে হয়েছে বদলির প্রসেসিং? এ সুবিধা আবার সকলের জন্য ছিল না। বিশেষ কারণে বাছাই করা শিক্ষকরাই পেয়েছেন জাদুকরি এ সুবিধা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক আক্ষেপ করে বলেন, শিক্ষা অফিসে শিক্ষক সিন্ডিকেট ছাড়া কিছুই হয় না। তাদের জ্বালায় আমাদের কলিজাটা ছারখার হয়ে গেছে। আমরা কেউ সিন্ডিকেটের মতের বাহিরে গেলে যন্ত্রণায় চাকরি জীবন অশান্ত করে দিবে। এটা নিরীহ শিক্ষকদের জন্য একটা বড় ভীতি। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবদুল আজীজ মাসোয়ারা সহ সকল অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, প্রতিবন্ধী সহ সরকারি সকল নীতিমালা মেনেই শিক্ষকদের বদলি করা হয়েছে। বদলির জন্য কেউ টাকা লেনদেন করে থাকলে আমার জানা নেই। সময়ের সমস্যায় কোনো স্কুলের বদলি স্থগিত থাকতে পারে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status