বাংলারজমিন

রমেকের সংক্রামক ব্যাধি বিভাগ ডাক্তারের দেখা নেই, দেখভাল করছেন নার্স-বয়

জাভেদ ইকবাল, রংপুর থেকে

২০ এপ্রিল ২০১৯, শনিবার, ৯:৩৪ পূর্বাহ্ন

সেবাকেন্দ্র রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সংক্রামক ব্যাধি বিভাগ নিজেই সংক্রমিত। নামে মাত্র এ হাসপাতাল থাকলেও সেবা নিয়ে উদ্বিগ্ন রোগীরা। এ বিভাগের পরিবেশ নোংরা। নেই কোনো বিশুদ্ধ পানির টিউবওয়েল। চারদিকে নোংরা-অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। শৌচাগার থাকলেও সেটি দুর্গন্ধে ভরা। নেই এতে কোনো দরজা। রোগীর শৌচাগারে যাওয়ার প্রয়োজন হলে সামনে একজনকে দাঁড় করিয়ে পাহারাদার হিসেবে রেখে তাকে যেতে হয়। হাসপাতাল জুড়ে কর্মরত নার্স ও কর্মচারী মিলে ২ জনকে পাওয়া যায়। নিয়ম মানা হচ্ছে না এ হাসপাতালে। সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্তদের আলাদা রাখার ব্যবস্থা থাকলেও রাখা হচ্ছে এক সঙ্গে। এমনকি নারী পুরুষদের জন্য আলাদা কোনো ওয়ার্ড নেই। রোগীদের ঘণ্টা ও দিন পার হলেও সহজে দেখা মিলছে না ডাক্তাদের। চিকিৎসকরা তাদের খেয়াল খুশিমতো আসা যাওয়া করছেন। যেন এসব বিষয়ে দেখার কেউ নেই। এসব বিষয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. সুলতান আহমেদের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মূল ক্যাম্পাসের বাহিরে সংক্রামক ব্যাধি বিভাগ হওয়ায় আমরা নজরদারি করতে পারি না। তবে এ হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে সমস্যা জর্জরিত থাকায় নতুন করে ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ কাজ শেষ হলে বিভাগটি হাসপাতালের ক্যাম্পাসেই নিয়ে আসা হবে। রংপুর নগরীর সিটি বাজারের উল্টো দিকে পুরাতন সদর হাসপাতালের দুইটি ছোট্ট ঘরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সংক্রামক ব্যাধি বিভাগের নামে মাত্র সেবা চলছে। সরজমিনে দেখা যায়, সংক্রামক ব্যাধি কলেরা, টাইফয়েডে আক্রান্ত রোগীরা ছটফট করছেন। ডায়রিয়া রোগীদের জন্য ১২টি বেড থাকলেও ১০টি বেডে গাদাগাদি করে নারী-পুরুষ রোগীরা থাকছেন।  বেডগুলোর অবস্থা নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত। মুলাটোল এলাকার শিক্ষাবিদ রুহুল আমিন অপু অভিযোগ করে বলেন, তার রোগীকে এখানে ভর্তি করার ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও মিলছে না ডাক্তারের দেখা। একজন নার্স থাকলেও রোগীরা তাদের সমস্যার কথা বলে তিনি তোয়াক্কা করছেন না। কোনো রকম যে একটি দেখে বলছেন ডাক্তারকে ডেকেছি। অপর পীরগাছার রোগী মজিবর মিয়া অভিযোগ করে বলেন, এখানে কোনো রোগী সুস্থ হওয়ার জন্য এলে আরো অসুস্থ হয়ে ফিরবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কোনো বালাই নেই। দুর্গন্ধ ও নোংরায় যেন ভরপুর। খাবার ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য পানি আনতে হয় অনেক দূর থেকে। তার ওপর একটু সরে দাঁড়ালেই বহিরাগত ছিচকে চোর ও মাদকসেবীরা রোগীদের টাকা পয়সা ও কাপড়-চোপড়, জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যায়। ঠাকুরগাঁও হাসপাতাল থেকে আসা সুফিয়া বেওয়ায় বলেন, মেডিকেল থেকে আমাদের এখানে পাঠিয়ে দেয়া হলেও ডাক্তারের দেখা নেই। দেখভাল করছেন নার্স-বয়। তারাই ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমাদের পরামর্শ দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে কর্তব্যরত নার্স আলেয়া বেগমের সঙ্গে কথা হলে তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, পেছনে হরিজন পল্লী থাকায় সেখানকার ছিচকে চোর ও মাদকসেবী সন্ত্রাসীদের ভয়ে আমরা ভীত। তাদের পোষা শূকরও কুকুরের অবাধ যাতায়াত রয়েছে হাসপাতালের বারান্দায়। এটি হাসপাতাল না, গোডাউন ঘর। আমরা বাধ্য হয়ে পেটের দায়ে চাকরি করছি। বিশুদ্ধ পানির টিউবওয়েল সম্পর্কে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এটি অকেজো হয়ে পড়ে আছে।
ওয়ার্ড বয় সালাম বলেন, বিভিন্ন জটিল সংক্রামক রোগে আক্রান্ত রোগীদের আলাদা আলাদা রাখার নিয়ম থাকলেও সবাইকে রাখা হচ্ছে এক সঙ্গে। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে ঝড়-বৃষ্টির দিনে। একটু বৃষ্টি হলেই ছাদ চুঁয়ে পানি পড়ে। তখন রোগীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এ ব্যাপারে অনেকবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কোনো সুরাহা হয়নি।


   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status