শেষের পাতা

প্রেমের ফাঁদে ফেলে অপহরণ, ৬ দিন পর উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার

১৯ এপ্রিল ২০১৯, শুক্রবার, ৯:৫৪ পূর্বাহ্ন

সুন্দরী নারীদের ছবি দিয়ে ভুয়া ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। এরপর আগে থেকে টার্গেট করা বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের
কাছে বন্ধু হওয়ার অনুরোধ পাঠানো হয়। ধীরে ধীরে ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলা হয়। সংগ্রহ করা হয় টার্গেটকৃত ব্যক্তির মোবাইল নম্বর। মোবাইল ফোনে কথা বলে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলেন চক্রের নারী সদস্যরা।

পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী  দেখা করার জন্য দিনক্ষণ ও স্থান ঠিক করা হয়।  ওই স্থানে আগে থেকেই চক্রের সদস্যরা ওঁত পেতে থাকে। কৌশলে চক্রের সদস্যরা ওই ব্যক্তিকে অপহরণ করে নিয়ে যায় নির্জন স্থানে। এরপর চক্রের সদস্যরা মারধর করে, ভয়ভীতি দেখিয়ে আদায় করে লাখ লাখ টাকা। সম্প্রতি এরকম একটি চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৪)। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, মাদারীপুরের মো. আজিজুল হাকিম (৪০), একই এলাকার মো. লিটন মোল্লা (২৬), নড়াইলের কাজল বেগম (২৬), ভোলার নজরুল ইসলাম নবু (৪২) ও পিরোজপুরের নুরু মিয়া (৬২)। সাভারের আমিন বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে বুধবার তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল কাওরান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব অধিনায়ক বলেন, অপহরণকারী চক্রের নারী সদস্য কাজল বেগম প্রথমে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে রায়হান নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। পরে ১২ই এপ্রিল তার সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্য ঢাকার কলাবাগান থেকে পূর্বপরিচিত বাহারের প্রাইভেট কারে রায়হানকে তোলা হয়। সেখান থেকে সাভারের আমিনবাজার এলাকার একটি নির্জন স্থানে নিয়ে রায়হানকে চোখ, মুখ, হাত-পা বেধে ফেলা হয়। তারপর তাকে বেধড়ক মারধর করে কান্নার শব্দ ও চিৎকার তার পরিবারের সদস্যদের শুনিয়ে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে রায়হানকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিতে থাকে অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা।

১০ লাখ টাকা দিতে অপারগতা জানালে তারা রায়হানের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ চায়।  পরবর্তীতে প্রাইভেট কার চালক বাহার রায়হানের পরিবারকে প্রাথমিকভাবে মিরপুর ৬০ ফিট এলাকার ভাঙ্গা ব্রিজের পাশে একটি পরিত্যক্ত সিগারেটের প্যাকেটের পাশে কাগজ পেঁচিয়ে এক লাখ টাকা রাখার কথা বলে। তাদের কথামত রায়হানের পরিবার ওই  স্থানে এক লাখ টাকা রাখে। কিন্তু চক্রের সদস্যরা টাকা পাওয়ার পরও রায়হানকে মুক্তি দেয়নি। বরং বাকি চার লাখ টাকা দ্রুত না দিলে তারা রায়হানকে হত্যা করার হুমকি দেয়। উপায়ন্তর না পেয়ে তার পরিবার আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সহযোগীতা নেয়। র‌্যাব প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে আসামিদের অবস্থান শনাক্ত করে অপহৃত রায়হান ও চক্রের পাঁচজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।

সংবাদ সম্মেলনে মঞ্জুরুল কবির আরো বলেন, এই পাঁচজন ছাড়া  মো.বাহার (৩২) ও ফরিদ উদ্দিন (৪০) পলাতক আছেন। বাহার অপহরণ কাজে ব্যবহৃত প্রাইভেট কারের চালক ও ফরিদ উদ্দিন মিরপুর ৬০ ফিট এলাকার ভাঙ্গা ব্রিজের পাশে রাখা মুক্তিপণের টাকা নিয়ে যায়। তাদেরকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা গেছে, তারা শুধু প্রেমের ফাঁদে ফেলে নয় ঢাকাসহ আশেপাশের বাস টার্মিনাল থেকে যাত্রীদের চাহিদা মত স্থানে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে মাইক্রো বা প্রাইভেটকারে উঠায়। গাড়িতে যাত্রী বেশে আগে থেকে চক্রের সদস্যরা বসে থাকে। ভুক্তভোগীরা গাড়িতে উঠার পরে কিছুদূর যাওয়ার পর চোখ মুখ বেধে তাদের আস্তানায় নিয়ে যায়। পরে মারধর-নির্যাতন করে মুক্তিপণ আদায় করে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status