শেষের পাতা

নুসরাতের মতো আর কোনো হত্যাকাণ্ড দেখতে চায় না জাতিসংঘ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

১৮ এপ্রিল ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৯:৫২ পূর্বাহ্ন

সোনাগাজীর মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ডে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার তাগাদা দিয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সেপ্পো বলেছেন, নুসরাতের মতো আর কোনো হত্যাকাণ্ড দেখতে চাই না। এটি লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে মর্মান্তিক ও দুঃখজনক   উদাহরণ। নুসরাত হত্যাকাণ্ড এ দেশে নারীর প্রতি সহিংসতাই ফুটে উঠেছে। তার সাহসিকতার জন্যই তাকে জীবন দিতে হয়েছে। এটি শুধুমাত্র অগ্রহণযোগ্যই নয়, এরকম ট্রাজেডি চলতে দেয়া উচিত নয়। নুসরাতের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে হবে। গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) স্টেট অব ওয়ার্ল্ড পপুলেশন-২০১৯ রিপোর্ট প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

নুসরাত প্রসঙ্গে মিয়া সেপ্পো বলেন, কেবল দেশে নয়, দেশের বাইরেও আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনায় আসছে নুসরাতের নামটি। এ দেশের মানুষ নুসরাতের জন্য যতটা ব্যথা ধারণ করেন, ততটা ব্যথায় সমব্যথী বিদেশিরাও। নুসরাতের জন্য ন্যায়বিচারের আহ্বানে সকল বাংলাদেশির সঙ্গে একাত্মতা জানাচ্ছি। যৌন হয়রানি ও হামলা থেকে নারীদের রক্ষা করার ব্যবস্থা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। যখন প্রতিরোধ ব্যর্থ হয় তখন অবশ্যই অপরাধীদের দোষী সাব্যস্ত করতে হবে এবং যারা এই অপকর্মের প্রতিবাদ করছেন তাদেরকে যে কোন প্রকার অপতৎপরতার হাত থেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে।

মিয়া সেপ্পো বলেন, নুসরাত হত্যাকাণ্ড এমন একটি ঘটনা, যা বাংলাদেশের নারীর প্রতি সহিংসতার নানা দিক স্পষ্ট করে দিয়েছে। তিনি বলেন, নুসরাতের হত্যাকাণ্ড রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ে যে নির্মমতা রয়েছে তা ফুটে উঠেছে। যেমন নুসরাতকে সুরক্ষা দেয়ার ব্যবস্থাগুলো ব্যর্থ হয়েছে। নির্মমতার আরেকটি বিষয় হলো, এদেশে সহিংসতার শিকার একটি মেয়ে সাহস করে প্রতিবাদ করলে শেষ পর্যন্ত তার পরিণতি কী হয় তা উঠে এসেছে। পরিণতি হয় শেষমেশ মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া।

তিনি বলেন, এ ঘটনায় আমরা যা বুঝতে পারলাম তা হলো নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং প্রত্যেককে নিশ্চিত করতে হবে দোষীরা যেন বিচারের বাইরে না থাকে। এমন একটি ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে যেখানে নারীরা সহিংসতা শিকার না হয়, সহিংসতার শিকার হলে দোষীরা যেন পার না পায় এবং সহিংসতার ব্যাপারে নারীরা যেন সাহস করে কথা বলতে পারে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত সরকারের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীকেও ব্যাখ্যা দিতে হয় নুসরাত প্রসঙ্গে। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মুরাদ হাসান বলেন, সোনাগাজীর সেই মাদাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা এবং তার সহযোগীরা, নুসরাত হত্যাকাণ্ডের আরেক অভিযুক্ত আওয়ামী লীগের নেতা, এরা কেউই সরকারের নেয়া কঠোর ব্যবস্থার বাইরে থাকছে না।

নুসরাত প্রসঙ্গে ইউএনএফপিএর রিপোর্টে বলা হয়, এদেশে যেখানে প্রায় ৭৩ শতাংশ নারী নিজ ঘরেই আপন মানুষ কর্তৃক নানা সহিসংতার শিকার, সেখানে ঘরের বাইরে নুসরাতদের প্রতি সহিংসতা ঠেকানো বেশ চ্যালেঞ্জিং।

বিভিন্ন উৎসের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়, বাংলাদেশে নিজ গৃহে নারীরা যে সহিংসতার শিকার হয়, তার অর্থমূল্য জিডিপির ২.০৫ শতাংশ। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের সুবিধার মধ্য দিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী মোট জনগোষ্ঠীর ৬২.৭ শতাংশ, যা কাজে লাগানোর ওপর গুরুত্বারোপ আরোপ করেন দেশি বিদেশি আলোচকরা। প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে বাংলাদেশের অর্জন আশাব্যঞ্জক হলেও বাল্যবিবাহের হার দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হওয়াটা হতাশাজনক বলে উল্লেখ করেন জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা। রিপোর্ট অনুযায়ী এ দেশে ৭ লাখ ৫০ হাজার নারী কিশোর বয়সে মা হচ্ছেন, যা মোট প্রজনন হারের ২৫ শতাংশ।
প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে সংস্থার আবাসিক প্রতিনিধি ড. আসা টরকেলসন বলেন, সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের এজেন্ডাকে আরো বেশি জোরালো এবং বিস্তৃত করতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা ঠেকাতে আরো কাজ করতে হবে।

আসা টরকেলসন বলেন, কাজ করছেন এমন মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮ শতাংশ। কমেছে বাল্য বিয়ে। স্কুলগামীদের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৮ শতাংশ। প্রাথমিকে মেয়ে শিশু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৮ শতাংশ। মাধ্যমিকেও কন্যা শিশুর অংশগ্রহণের হার বেড়েছে, তবে শিক্ষাক্রম শেষ করার হার এখনো খুব কম। আর তরুণদের মধ্যে কর্মহীনদের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ শতাংশ। তিনি বলেন, রাজনীতিতে নারীর ক্ষমতায়ন বেড়েছে। সংসদে ২০ শতাংশ, স্থানীয় সরকার ২৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। তবে বাংলাদেশে নারীরা সমাজে নিম্ন মর্যাদার, পুরুষের ওপর নির্ভরশীল। মূলত এটাই ঘরে-কর্মক্ষেত্রে শারীরিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন, পাচার, এসিড নিক্ষেপ এবং বাল্য বিয়ের জন্য দায়ী। তিনি বলেন, শুধু করণীয় নির্ধারণ করলেই হবে না, পলিসি বাস্তবায়ন নিশ্চিত করে মেয়ে ও মহিলাদের সব দিক থেকে সমান সুযোগ দিয়ে তাদের জীবনের সুরক্ষা দিতে হবে।

‘আনফিনিশড বিজনেস: দ্য পারস্যুট অফ রাইটস অ্যান্ড চয়েসেস ফল অল’ শিরোনামের এই রিপোর্টটি দু’টি গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ্যকে সামনে রেখে বিশ্বজুড়ে প্রজনন স্বাস্থ্যের অগ্রগতি অনুসন্ধান করেছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান এমপি, ড. বরাকাত-ই-খুদা, ড. মুজাফফর আহমেদ চেয়ার প্রফেসর, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট ও বরগুনা থেকে আগত স্কুল শিক্ষিকা সোহেলি পারভিন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status