প্রথম পাতা
বাবার মুখ দেখা হলো না তাপসির
মরিয়ম চম্পা
১৭ এপ্রিল ২০১৯, বুধবার, ১০:১২ পূর্বাহ্ন
তাপসি লামিয়া। বয়স মাত্র ৭ দিন। কন্যা সন্তানের বাবা হতে যাচ্ছেন এ খবরে ভীষণ খুশি ছিলেন মিজানুর রহমান লিটন। নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাস তাঁর খুশি কেড়ে নিয়েছে। পরিবারের সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। সদ্য ভুমিষ্ট হওয়া শিশুটিও কোনদিন দেখতে পাবে না তার বাবার মুখ। নিয়তির নির্মম পরিহাস! অগ্নিকাণ্ডে নিহত মিজানও জন্মের আগেই তার বাবাকে হারিয়ে ছিলেন। জন্মের কয়েক মাসের মাথায় তার মায়ের মৃত্যু হয়। বড় ভাই আর বোনের হাতে মানুষ হওয়া মিজানের এমন করুণ মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান তার পরিবার।
মিজানুর চাকরি করতেন এফআর টাওয়ারের দশম তলার হেরিটেজ এয়ার এক্সপ্রেস নামের একটি প্রতিষ্ঠানে। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মারা যান তিনি। দুই ছেলে মেয়েকে নিয়ে মিজানুরের স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা তানি’র ঠাঁই হয়েছে এখন মিজানুরের বড় ভাইয়ের বাসায়। তানি মানবজমিনকে বলেন, আমাকেই তো দুই বাচ্চাকে মানুষ করতে হবে। ওদের সকল দায়িত্ব আমার। এখন ওদের বাবা বলেন মা বলেন সবই আমি। বড় ছেলে তানজিম তামিমের বয়স ৪ বছর ৯ মাস। ছেলেকে প্রচন্ড ভালোবাসতেন মিজান। ছুটিতে যখনই বাড়িতে আসতেন তখন ছেলের গোসল, ঘুম, খাওয়া- সবই ছিল বাবার সাথে। মেয়ে হবে শুনে খুব খুশি হয়েছিলেন মিজান। মেয়ে একটু বড় হলে সবাইকে নিয়ে ভারত ভ্রমণে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তার। ছেলেকে ডাক্তারি পড়ানোর খুব ইচ্ছা ছিল মিজানের। ১০ তারিখ আমার ডেলিভারির তারিখ থাকায় ৯ তারিখ ছুটি নিয়ে খুলনা আসবে এমনটাই কথা ছিল।
তানি বলেন, ২৮শে মার্চ দুপুর দেড়টায় তার সঙ্গে আমার সর্বশেষ কথা হয়। আগুন লাগার পরে সে আমাকে প্রথম যখন ফোন দেয় তখন আমি গোসলে ছিলাম। এসময় আমার বড় বোন ফোন রিসিভ করে। বড় আপাকে মিজান বলে, আমাদের অফিসে আগুন লেগেছে। সবাই দোয়া করবেন। এরপর আমি গোসল শেষে যোহরের নামাজ শেষে তাকে ফোন দেই। তখন আমি বলি, তুমি কি অফিসের ভেতরেই আছো না কী বাইরে বের হয়েছো। এসময় মিজান বলেন, না আমি বাহিরে বের হতে পারিনি। আমাদের অফিসের প্রায় ২৬ জন ভেতরে আছি। নিঃশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। তুমি ভেঙ্গে পরো না। বাচ্চাদের দেখো। যদি বেঁচে থাকি তাহলে তোমার সঙ্গে আমার দেখা হবে। এটা বলেই ফোন রেখে দেয়। এরপর আর তার সঙ্গে আমার কথা হয়নি। কে জানতো এটাই ছিল তার সঙ্গে আমার শেষ কথা। তিনি বলেন, যেভাবেই হোক দুই বাচ্চাকে আমার মানুষ করতে হবে।
মিজানের অফিস থেকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১ লাখ টাকা এবং এক মাসের বেতন দেয়া হয়েছিল। তবে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাহায্য আমরা পাইনি। বর্তমানে আমি ভাসুরের বাসায় আছি। তিনি আমাদের তিনজনের দায়িত্ব নিয়েছেন। বাচ্চারা এখন ছোট। ওরা দুজন একটু বড় হলে চাকরির চেষ্টা করবো। ওদের বড় করতে এবং মানুষের মতো মানুষ করতে আমাকে তো কিছু একটা করতে হবে। এখন পর্যন্ত আত্মীয় স্বজন পাশে আছে। ভবিষ্যতে কি হবে সেটা জানি না। ৬ ভাই বোনের মধ্যে মিজানুর সবার ছোট। ‘মিজানের জন্মের ১৫ দিন আগে বাবা মনসুর শেখ মারা যান। আর জন্মের তিন মাস ৫ দিন পর মা ফুলজান বিবিও পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নেন। এরপর বড় বোন কিছুদিন রেখে লালন পালন করেন।
পাঁচ বছর বয়স থেকে মিজানুরের বড় ভাই শেখ নজরুল ইসলামের কাছে থেকে মানুষ হন। নজরুল ইসলাম পুলিশ সদস্য এবং মেজ ভাই শেখ আলম কৃষিকাজ করেন। মিজানুর অনেক বছর ধরে ঢাকায় থাকেন। খুলনা সরকারি আযম খান কমার্স কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনা বিভাগে ২০০৭ সালে স্নাতক শেষ করে পরে ঢাকার একটি কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর করেন তিনি। ২০১১ সালে পারিবারিক পছন্দে তানি ও মিজানের বিয়ে হয়। দশম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় বিয়ে হয় তানির। ঢাকায় তাঁর সঙ্গে স্ত্রী তানিও থাকতেন। মারা যাওয়ার কয়েক মাস আগে সন্তান সম্ভাবা স্ত্রী ও সন্তানকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন মিজান। মিজানুর সর্বশেষ চাকরি করতেন এফআর টাওয়ারের দশম তলার হেরিটেজ এয়ার এক্সপ্রেস নামের প্রতিষ্ঠানে। এর আগেও তিনি ঢাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ঘটনার দিন রাতে মিজানুরের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে বারবার কল দেয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের একজন ফোনটি রিসিভ করেন। তিনি মিজানুরের পরিবারকে জানান, মিজানুরের অবস্থা আশঙ্কাজনক, তাঁকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তার মৃতদেহ খুঁজে পান পরিবারের সদস্যরা।
মিজানুর চাকরি করতেন এফআর টাওয়ারের দশম তলার হেরিটেজ এয়ার এক্সপ্রেস নামের একটি প্রতিষ্ঠানে। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মারা যান তিনি। দুই ছেলে মেয়েকে নিয়ে মিজানুরের স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা তানি’র ঠাঁই হয়েছে এখন মিজানুরের বড় ভাইয়ের বাসায়। তানি মানবজমিনকে বলেন, আমাকেই তো দুই বাচ্চাকে মানুষ করতে হবে। ওদের সকল দায়িত্ব আমার। এখন ওদের বাবা বলেন মা বলেন সবই আমি। বড় ছেলে তানজিম তামিমের বয়স ৪ বছর ৯ মাস। ছেলেকে প্রচন্ড ভালোবাসতেন মিজান। ছুটিতে যখনই বাড়িতে আসতেন তখন ছেলের গোসল, ঘুম, খাওয়া- সবই ছিল বাবার সাথে। মেয়ে হবে শুনে খুব খুশি হয়েছিলেন মিজান। মেয়ে একটু বড় হলে সবাইকে নিয়ে ভারত ভ্রমণে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তার। ছেলেকে ডাক্তারি পড়ানোর খুব ইচ্ছা ছিল মিজানের। ১০ তারিখ আমার ডেলিভারির তারিখ থাকায় ৯ তারিখ ছুটি নিয়ে খুলনা আসবে এমনটাই কথা ছিল।
তানি বলেন, ২৮শে মার্চ দুপুর দেড়টায় তার সঙ্গে আমার সর্বশেষ কথা হয়। আগুন লাগার পরে সে আমাকে প্রথম যখন ফোন দেয় তখন আমি গোসলে ছিলাম। এসময় আমার বড় বোন ফোন রিসিভ করে। বড় আপাকে মিজান বলে, আমাদের অফিসে আগুন লেগেছে। সবাই দোয়া করবেন। এরপর আমি গোসল শেষে যোহরের নামাজ শেষে তাকে ফোন দেই। তখন আমি বলি, তুমি কি অফিসের ভেতরেই আছো না কী বাইরে বের হয়েছো। এসময় মিজান বলেন, না আমি বাহিরে বের হতে পারিনি। আমাদের অফিসের প্রায় ২৬ জন ভেতরে আছি। নিঃশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। তুমি ভেঙ্গে পরো না। বাচ্চাদের দেখো। যদি বেঁচে থাকি তাহলে তোমার সঙ্গে আমার দেখা হবে। এটা বলেই ফোন রেখে দেয়। এরপর আর তার সঙ্গে আমার কথা হয়নি। কে জানতো এটাই ছিল তার সঙ্গে আমার শেষ কথা। তিনি বলেন, যেভাবেই হোক দুই বাচ্চাকে আমার মানুষ করতে হবে।
মিজানের অফিস থেকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১ লাখ টাকা এবং এক মাসের বেতন দেয়া হয়েছিল। তবে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাহায্য আমরা পাইনি। বর্তমানে আমি ভাসুরের বাসায় আছি। তিনি আমাদের তিনজনের দায়িত্ব নিয়েছেন। বাচ্চারা এখন ছোট। ওরা দুজন একটু বড় হলে চাকরির চেষ্টা করবো। ওদের বড় করতে এবং মানুষের মতো মানুষ করতে আমাকে তো কিছু একটা করতে হবে। এখন পর্যন্ত আত্মীয় স্বজন পাশে আছে। ভবিষ্যতে কি হবে সেটা জানি না। ৬ ভাই বোনের মধ্যে মিজানুর সবার ছোট। ‘মিজানের জন্মের ১৫ দিন আগে বাবা মনসুর শেখ মারা যান। আর জন্মের তিন মাস ৫ দিন পর মা ফুলজান বিবিও পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নেন। এরপর বড় বোন কিছুদিন রেখে লালন পালন করেন।
পাঁচ বছর বয়স থেকে মিজানুরের বড় ভাই শেখ নজরুল ইসলামের কাছে থেকে মানুষ হন। নজরুল ইসলাম পুলিশ সদস্য এবং মেজ ভাই শেখ আলম কৃষিকাজ করেন। মিজানুর অনেক বছর ধরে ঢাকায় থাকেন। খুলনা সরকারি আযম খান কমার্স কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনা বিভাগে ২০০৭ সালে স্নাতক শেষ করে পরে ঢাকার একটি কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর করেন তিনি। ২০১১ সালে পারিবারিক পছন্দে তানি ও মিজানের বিয়ে হয়। দশম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় বিয়ে হয় তানির। ঢাকায় তাঁর সঙ্গে স্ত্রী তানিও থাকতেন। মারা যাওয়ার কয়েক মাস আগে সন্তান সম্ভাবা স্ত্রী ও সন্তানকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন মিজান। মিজানুর সর্বশেষ চাকরি করতেন এফআর টাওয়ারের দশম তলার হেরিটেজ এয়ার এক্সপ্রেস নামের প্রতিষ্ঠানে। এর আগেও তিনি ঢাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ঘটনার দিন রাতে মিজানুরের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে বারবার কল দেয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের একজন ফোনটি রিসিভ করেন। তিনি মিজানুরের পরিবারকে জানান, মিজানুরের অবস্থা আশঙ্কাজনক, তাঁকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তার মৃতদেহ খুঁজে পান পরিবারের সদস্যরা।