এক্সক্লুসিভ

কালাইরাগে আমির, বাংকার এলাকায় সক্রিয় বিল্লাল

কোম্পানীগঞ্জে দিনে লুট হচ্ছে কোটি টাকার পাথর

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

১৭ এপ্রিল ২০১৯, বুধবার, ৮:৫৬ পূর্বাহ্ন

ফাইল ছবি

২০১৭ সালের ১৬ই ডিসেম্বর অঘটন ঘটিয়েছিলেন কোম্পানীগঞ্জের কালাইরাগের পাথরখেকো সিন্ডিকেটের মূল হোতা আমির উদ্দিন। ওইদিন তার মালিকানাধীন গর্তে পড়ে প্রাণ হারান দুই শ্রমিক। আলোচিত হন আমিন উদ্দিন। তখন পুলিশ আমিন উদ্দিনকে আসামি করে দুই শ্রমিক খুনের ঘটনায় মামলা করেছিলো। এরপর কিছুদিন পলাতক থেকে জামিন নিয়েছিলেন আমির উদ্দিন। আলোচিত এ ঘটনার দেড় বছরের মাথায় আমির উদ্দিন আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছেন কোম্পানীগঞ্জে। এবার তিনি ছোবল বসিয়েছেন কালাইরাগের কাছাকাছি এলাকায়। সেখান থেকে সীমান্ত খুব বেশি দূরে নয়। কিন্তু আমির উদ্দিন প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রতিদিন অর্ধকোটি টাকার পাথর লুট করছেন। 

কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথর এলাকা নতুন একটি পর্যটন স্পটে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন সিলেট সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে শ’ শ’ মানুষ বিনোদনের জন্য ওই এলাকায় যায়। কিন্তু আমির উদ্দিন ও তার লোকজনের পাথর উত্তোলনের ফলে পর্যটন এলাকাও পড়েছে হুমকির মুখে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের অন্ত নেই। স্থানীয়রা জানিয়েছেন-  কোম্পানীগঞ্জের বাংকার ও লালপাথর এলাকা ছাড়া অন্য সব এলাকাগুলোতে পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে কালাইরাগ এলাকা থেকে প্রতিদিন শতাধিক গাড়ি ট্রাক্টর পাথর লুটপাট করছেন আমির উদ্দিন। পাশাপাশি বোমা মেশিন লাগিয়েও হুমকির মুখেও ফেলে দিয়েছেন সাদাপাথর এলাকা।

আর গভীর গর্ত খুঁড়ে পাথর উত্তোলনের কারণে এবারো এখানে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয়ভাবে পুলিশ ও বিজিবি’র পক্ষ থেকে অভিযান চালালেও আমির উদ্দিন রয়েছেন বহাল তবিয়তে। আমির উদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগে মামলা হয়েছিলো। এরপর পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা পাথরখেকোদের তালিকা করে যে মামলা দায়ের করেছিলো সেখানেও তাকে আসামি করা হয়েছে। আমির উদ্দিন জানিয়েছেন- ‘তিনি তার মালিকানাধীন জমি থেকে পাথর উত্তোলন করছে। এটা তার ক্রয় করা জায়গা।’ তিনি বলেন- ‘তার বিরুদ্ধে একটি পক্ষ অপপ্রচার চালাচ্ছে।’ স্থানীয় বিজিবি কালাইরাগ ক্যাম্পের নায়েক সুবেদার আবদুল মুবিন বলেন- কোম্পানীগঞ্জের সীমান্ত ঘেঁষে কোনো পাথর কোয়ারি নেই। সীমান্ত ঘেঁষে পাথর কোয়ারি থাকলে বিজিবি এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতো।

বিজিবি’র নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকলে কিছু করার নেই। এটা অন্যরা দেখবে। এদিকে- কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে সংরক্ষিত এলাকা (বাংকার) থেকে পাথর লুটপাটে একটি পাথরখেকো চক্র ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। দিনের পাশাপাশি রাতের আঁধারে অতীতের ন্যায় আবারো বোমা মেশিন দিয়ে চলছে অবাধে পাথর লুট। পাথরখেকো চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে হচ্ছে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দেশের একমাত্র রজ্জুপথ ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে বাংকার। বেশ কিছুদিন ধরে রোপওয়ে বাংকারে উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বোমা মেশিন দ্বারা পাথর উত্তোলনের কাজ বন্ধ ছিল। তবে- বর্তমানে আবারো একটি পাথরখেকো চক্র রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে রফাদফার মাধ্যমে পাথর লুটপাট করে রেলওয়ে রোপওয়ে বাংকার ধ্বংসে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পেশীশক্তির বলে এই চক্রটি বেআইনিভাবে অবৈধ ‘বোমা মেশিন’-এর মাধ্যমে সেখানকার কোটি কোটি টাকার পাথর সম্পদ লুটে নিচ্ছে। অবৈধ পাথর উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের তরফ থেকে সংরক্ষিত এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি থাকলেও তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- রোপওয়ে বাংকার এলাকায় পাথর লুটপাটের বিষয়টি তার জানা নেই। ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনা। এই প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১৪১ একর নিজস্ব ভূমি রয়েছে। সেখানে বেশ কয়েকটি ভবন ও শতকোটি টাকার যন্ত্রপাতি বিদ্যমান আছে। এই সম্পদ পাহারায় আনসার ও আরএনবি নিয়োজিত আছে। বর্তমানে বাংকারের সংরক্ষিত এলাকা থেকে বোমা মেশিনের মাধ্যমে পাথর উত্তোলন করে সরকারের শত কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস্তূপে পরিণত করা হচ্ছে। বিল্লালের নেতৃত্বে ওই এলাকায় পাথর লুট চলছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status