প্রথম পাতা

প্যারোলে আগ্রহী নন খালেদা

কাফি কামাল

১৬ এপ্রিল ২০১৯, মঙ্গলবার, ১০:৩০ পূর্বাহ্ন

প্যারোলে মুক্তির আগ্রহ নেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার। আইনি প্রক্রিয়ায় স্বাভাবিক পথে জামিনে মুক্তি চান তিনি। তার শারীরিক অবস্থা  অত্যন্ত নাজুক হলেও মনোবল অটুট রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। খালেদা জিয়াকে গত ১লা এপ্রিল কারাগার থেকে স্থানান্তর করা হয় হাসপাতালে। তবে উন্নত চিকিৎসার স্বার্থে প্যারোলে বা শর্তসাপেক্ষ মুক্তিতে ন্যূনতম সায় নেই তার।
কিছুদিন আগে একবার প্যারোলে মুক্তির প্রসঙ্গ তুলে তার কড়া ধমক খেয়েছেন কয়েকজন আইনজীবী।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন, সেদিন তিনি পরিষ্কার বলে দিয়েছেন- ‘কেউ তেমন উদ্যোগ নিলে তিনি তার কোন কিছুই বিবেচনায় নেবেন না, আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে দেবেন।’ এরপর থেমে যায় সে আলোচনা। কিন্তু খালেদা জিয়ার শারীরিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে কিছুদিন ধরে তার পরিবারের কতিপয় সদস্য এ ব্যাপারে আগ্রহ পোষণ করেন। কিন্তু খালেদা জিয়া যে এ ব্যাপারে রাজি নন তা আরও পরিষ্কার হয়ে গেছে বাংলা নববর্ষের দিন। হাসপাতালে সাক্ষাত করতে যাওয়া দলের নীতিনির্ধারক ফোরামের তিন সদস্যের কাছে প্যারোলের ব্যাপারে অনাগ্রহের বিষয়টি জানিয়ে দেন খালেদা জিয়া। এছাড়া বিএনপির টিকিটে এমপি নির্বাচিত হওয়া ৬ জনের সংসদে যাওয়ার ব্যাপারে রাজনৈতিক মহলে যে গুঞ্জন রয়েছে সেটা নিয়েও বিরক্তি প্রকাশ করেছেন তিনি। বিএনপির সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সূত্রগুলো জানায়, বাইরে খালেদা জিয়ার পরিবার বা দলের নেতাকর্মীরা আবেগের বশবর্তী হয়ে একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারবেন বড়জোর। কিন্তু সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা একমাত্র খালেদা জিয়ার। তিনি অনাগ্রহী হওয়ায় হালে পানি পায়নি প্যারোলের মুক্তির আয়োজন।

বাংলা নববর্ষের দিন তার সঙ্গে সাক্ষাত শেষে নেতারা আনুষ্ঠানিকভাবে কোন বক্তব্য দেননি গণমাধ্যমে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পাওয়ার ব্যাপারে নেতারা নিশ্চিত হন আগের দিন। তবে নববর্ষ উপলক্ষে খালেদা জিয়ার জন্য তারা কোন উপহার নিয়ে যাননি। বিএসএমএমইউ’র কেবিন ব্লকের ৬ তলায় দুইটি কক্ষের একটি কেবিনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন খালেদা জিয়া। সামনের কক্ষে বসে তার সঙ্গে কথা বলেছেন নেতারা। সংশ্লিষ্ট নেতারা জানান, অসুস্থতার কারণে খালেদা জিয়াকে শারীরিকভাবে খুবই বিপর্যস্ত দেখাচ্ছিল। আলাপের সময় কখনো কখনো তিনি হাত তুলে বা নেড়ে কথা বলতে পারছিলেন না। আর্থ্রাইটিসের ব্যথার কারণে তিনি পা নাড়াতে পারছিলেন না। কখনো কখনো তার মুখের কথা জড়িয়ে যাচ্ছিল। তবে তার প্রতিটি বাক্য ছিল গোছালো। নিজে অসুস্থ হলেও দলের কয়েকজন নেতার মৃত্যু ও অসুস্থতার ব্যাপারে খোঁজ-খবরও নিয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন, স্বাভাবিক খাবার গ্রহণেও অসুবিধা হচ্ছে তার। সংশ্লিষ্ট নেতারা জানান, সাক্ষাত করতে যাওয়া তিন নেতার সঙ্গে আলাপকালে তিনি প্যারোল নিয়ে কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমের একটি বক্তব্যের উল্লেখ করেন। উল্লেখ্য, ৭ই এপ্রিল বিএনপির গণঅনশনে কাদের সিদ্দিকী বলেছিলেন- ‘প্যারোলে মুক্তি মানে বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যু, গণতন্ত্রের মৃত্যু।’ তিনি তার মামলাগুলোর ব্যাপারে জানতে চেয়েছেন। এ সময় তিনি কয়েকবার বলেন, ‘আমি কি করেছি- আমার বিরুদ্ধে কেন মামলা হবে? আমার বিরুদ্ধে কেন সাজা হবে?’ দলের সাংগঠনিক পরিস্থিতি সম্পর্কেও জানতে চান তিনি। নেতারা জানান, সাক্ষাতের পুরো সময় খুবই স্বাভাবিক ছিলেন খালেদা জিয়া। কিন্তু নেতারা চলে আসার সময় কিছুটা বেদনার ছাপ দেখা গেছে খালেদা জিয়ার চেহারায়।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কারাবন্দি খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের একদিন পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্যারোল ও সংসদে যোগ দেয়ার ব্যাপারে মুখ খুলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের নবগঠিত কমিটির নেতাদের নিয়ে দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজার জেয়ারত করতে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এ সময় প্যারোলে মুক্তির ব্যাপারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কোন আলোচনা হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের বিষয়। তাই এ নিয়ে দলীয় চেয়ারপারসনের সঙ্গে খুব বেশি আলোচনা হয়নি।’ বিএনপির কতিপয় এমপির সংসদে যোগ দেয়ার গুঞ্জনের ব্যাপারে তিনি বলেন- ‘এই ধরনের কোন তথ্য আমাদের কাছে নেই।’

খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির পরোক্ষ সরকারি প্রস্তাব নিয়ে বিএনপি স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, প্যারোলের নামে সরকার মূলত আরেকবার দেশবাসীর সামনে জনপ্রিয় এই নেত্রীকে হেয় করতে চায়। তিনি বলেন, সরকার যদি প্যারোলে মুক্তিই দেবে তাহলে তার স্বাভাবিক জামিন প্রক্রিয়ায় বাধার সৃষ্টি করে কেন? সরকার যদি বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ না করে তাহলে খালেদা জিয়া বহু আগেই জামিনে মুক্তি পেতেন। তার প্রতিটি মামলাই জামিন যোগ্য এবং মামলার অন্য আসামীরাও জামিনে মুক্ত রয়েছেন। নানামুখী প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে খালেদা জিয়া যখনই কোন  মামলায় জামিন পান তখনই নতুন কোন মামলায় তাকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়। এটা কোনভাবেই সরকারের ইতিবাচক মনোভাবের লক্ষণ নয়। আসলে প্যারোলে মুক্তির মাধ্যমে দেশবাসী ও বিশ্ববাসীর কাছে খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে ফের হেয় করতে চায় সরকার। কিন্তু এখন পর্যন্ত খালেদা জিয়ার মনোবল যতটুকু দৃঢ়তার সঙ্গে অটুট রয়েছে তাকে দলের কোন নেতা বা সরকার সে সুযোগ পাবে না।

বিএনপির নির্বাচিত এমপিরা সংসদে গেলে খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখাবে সরকার- এমন গুঞ্জন রয়েছে রাজনৈতিক মহলে। কিন্তু এ গুঞ্জনের বাস্তবতা কতটুকু? বিএনপির কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতা জানান, খালেদা জিয়া চাইলে নির্বাচনের আগেই আপস করতে পারতেন। খালেদা জিয়াকে রাজী করাতে বা তেমন পরিবেশ সৃষ্টিতে সরকারের তরফে নানা প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে জাতীয় নির্বাচনের আগে-পরে। বিএনপির কোন কোন নেতাও সরকারের সে প্রচেষ্টায় যুক্ত হয়েছেন আবেগের বশবর্তী বা সরকারের কৌশলে বিভ্রান্ত হয়ে। কিন্তু প্রতিটি প্রচেষ্টাই নাকচ হয়ে গেছে খালেদা জিয়ার দৃঢ় মনোবলে। এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, কারাবন্দি খালেদা জিয়ার সবুজ সংকেত ছাড়া বিএনপির এমপিরা শপথ নিয়ে সংসদে যাচ্ছেন না। সংশ্লিষ্ট নেতারা জানান, আইনী প্রক্রিয়ায় জামিনে মুক্তির বাইরে কিছুই ভাবতে নারাজ খালেদা জিয়া। এমনকি অনির্ধারিত সময় পর্যন্ত কারাভোগের মানসিক প্রস্তুতিও রয়েছে তার।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status