প্রথম পাতা

চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও সাঁথিয়ায় গণধর্ষণ

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম ও রূপগঞ্জ, সাঁথিয়া (পাব

১৬ এপ্রিল ২০১৯, মঙ্গলবার, ১০:২৬ পূর্বাহ্ন

নববর্ষের দিন গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম, রূপগঞ্জ ও সাঁথিয়ায়। নববর্ষে বেড়াতে এনে ১৬ বছরের এক কিশোরীকে  পালাক্রমে ধর্ষণ করা হয়েছে। এতে প্রচুর রক্তক্ষরণে ওই কিশোরী এখন জীবন- মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

গত রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ধর্ষিতা পোশাক কর্মীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয় বলে জানান চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. জহিরুল ইসলাম।

তিনি জানান, ওই কিশোরীকে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে সিএনজি অটোরিকশায় করে চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন তার মা ও ভাই।

কিশোরীর ভাই জানান, পটিয়া উপজেলার কচুয়াই গ্রামের রিপন (২৬) চট্টগ্রাম শহরের কোনো এক জায়গায় তার বন্ধুর বাসায় আমার বোনকে নিয়ে দুজনে ধর্ষণ করে। এরপর সন্ধ্যা ৭টার দিকে তারা আমার বোনকে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রেখে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে আমার বোনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।

পটিয়া উপজেলা হাসপাতাল জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক বাবলু দাশ জানান, দুজন মিলে কিশোরীকে পটিয়া হাসপাতালে নিয়ে আসে। ধর্ষণের ফলে কিশোরীর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। মেয়েটির অবস্থা আশংকাজনক দেখে তাকে দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।

মেয়েটি পটিয়া উপজেলা বড়লিয়া গ্রামের বাসিন্দা। সে পটিয়া উপজেলার বিসিক শিল্প এলাকার আরেফিন টেক্সটাইলের কর্মী বলে জানান চিকিৎসক বাবলু দাশ।

কিশোরীর মা জানান, ধর্ষক রিপন ও আরেফিন টেক্সটাইলের এক কর্মকর্তার গাড়িচালক। সেই সূত্রে আমার মেয়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে উঠে। তাকে খুব বিশ্বাস করতাম আমরা। সে কারণে রিপন রোববার সকালে আমার মেয়েকে নববর্ষে চট্টগ্রাম শহরে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে। মেয়েও বিশ্বাস করে তার সঙ্গে যায়। কিন্তু এর আগে সে কোনোদিন চট্টগ্রাম শহরে যায়নি।

নিয়ে যাওয়ার পর দুপুর থেকে রিপন ও তার বন্ধু মিলে আমার মেয়েকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এতে তার রক্তক্ষরণ শুরু হলে তারা দুজনে মিলে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনে। সেখানে রেখেই তারা পালিয়ে যায়।

তিনি বলেন, আমার মেয়ের অবস্থা ভালো না, প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মেয়েকে অপারেশন করা হয়েছে। তারপরও তার রক্তক্ষরণ বন্ধ হচ্ছে না। আমি আমার নাবালক মেয়ের সঙ্গে হওয়া এমন অন্যায়ের বিচার চাই। চমেক হাসপাতালের স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের চিকিৎসক নুসরাত জাহান নিশাত বলেন, মেয়েটির অবস্থা খুবই শোচনীয়। তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। তাকে এ পর্যন্ত ৯ ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়েছে। রাতেই অপারেশন করা হয়েছে। তার আরো রক্তের প্রয়োজন। তা না হলে মেয়েটিকে বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়বে।

পটিয়া থানার ওসি তদন্ত হেলাল উদ্দিন ফারুকী এ প্রসঙ্গে বলেন, উপজেলার বড়লিয়া গ্রামের এক কিশোরী  পোশাক কর্মীকে ধর্ষণের খবর পেয়ে থানা থেকে হাসপাতালে ফোর্স পাঠানো হয়। মেয়েটি আশঙ্কাজনক অবস্থায় চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে ধর্ষকদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।

রূপগঞ্জে মেলায় বেড়াতে এসে গণধর্ষণ
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বৈশাখী মেলায় বেড়াতে এসে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক পোশাক শ্রমিক। ৬ লম্পট তাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গণধর্ষণ করে। এ সময় সঙ্গে সঙ্গে থাকা বান্ধবী মসজিদে আশ্রয় নিয়ে নিজের সম্ভ্রম রক্ষা করেন। এ ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে তিন ধর্ষককে আটক করেছে। গত রোববার রাতে উপজেলার তারাব পৌরসভার রূপসী প্রধানবাড়ি সংলগ্ন বালুর মাঠে এ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।

রূপগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক নাজিম উদ্দিন জানান, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে তারাব পৌরসভার মেয়র এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক) এর স্ত্রী হাসিনা গাজীর আয়োজনে স্থানীয় রূপসী নিউ মডেল স্কুল মাঠে প্রতিবছর উপজেলার সর্ববৃহৎ বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়। গত রোববার বৈশাখী মেলায় বেড়াতে আসেন পার্শবর্তী বরপা বাগানবাড়ি এলাকার দুই পোশাক শ্রমিক। রাত পৌনে ৯টার দিকে তারা বাড়ি ফেরার পথে ৬ বখাটে তাদের জোরপূর্বক তুলে নিয়ে স্থানীয় প্রধানবাড়ির পাশে বালুর মাঠে নিয়ে যায়। সেখানে এক পোশাক শ্রমিক (১৫) কে ৬ বখাটে পালাক্রমে গণধর্ষণ করে। আরেক গার্মেন্টকর্মীকে ধর্ষণের চেষ্টা করলে সে দৌড়ে স্থানীয় মসজিদে গিয়ে আশ্রয় নিয়ে নিজেকে রক্ষা করেন। এদিকে ধর্ষিতার বান্ধবীর কাছে এ ঘটনা জানার পর রাত ১টার দিকে টহলরত রূপগঞ্জ থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে রূপসী প্রধানবাড়ি এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছেলে আকাশ মিয়া ও একই এলাকার ঈমান আলী বাবুর্চির ছেলে ইসমাঈল এবং জামালপুরের মেলান্দ টুপকার চর এলাকার আনিসুর রহমান নামে তিন ধর্ষককে গ্রেপ্তার করেন। আটককৃতরা প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের কথা স্বীকার করে জানান, প্রধানবাড়ি এলাকার লাইসউদ্দিন প্রধানের ছেলে হাবুসহ ৬ জন মিলে গণধর্ষণ করেছে। এ ঘটনায় গতকাল দুপুরে গার্মেন্টকর্মী বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মাহামুদুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি খুবই ন্যক্কারজনক। এ ঘটনায় রূপগঞ্জ থানায় নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছেন। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ধর্ষিতাকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ।

সাঁথিয়ায় প্রতিবন্ধী ধর্ষণের শিকার, আটক ১
নববর্ষের দিন সন্ধ্যায় এক প্রতিবন্ধী যুবতীকে জোরপূর্বক গণধর্ষণ করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৪ই এপ্রিল রোববার সাঁথিয়ার হরিপুর মাঠে।

এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, সাঁথিয়া উপজেলার গয়েশবাড়ি গ্রামের প্রতিবন্ধী মেয়ে নববর্ষের দিন সন্ধ্যার দিকে আতাইকুলা ফুপুর বাড়ি থেকে গয়েশবাড়ী যাচ্ছিল। শিবপুর এলাকার পৌঁছালে একই এলাকার কয়েকজন যুবক তার মুখ চেপে ধরে তাকে মাঠে নিয়ে যায়। সেখানেই গণধর্ষণ করে তাকে। এ সংবাদ পেয়ে যুবতীর অভিভাবকেরা আতাইকুলা থানায় খবর দেয়। পুলিশ অভিযান চালিয়ে রাতেই শিবপুর গ্রামের হান্নানের ছেলে বিপ্লবকে আটক করে। তার দেয়া তথ্যানুযায়ী এসআই নাজমুল ফোর্সসহ গতকাল বিকালে উপজেলার মঙ্গলগ্রাম থেকে যুবতীকে উদ্ধার করে।

এ ব্যাপারে আতাইকুলা থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, ধর্ষিতা মানসিক প্রতিবন্ধী। ধর্ষকরা আলামত নষ্ট করার জন্য যুবতীকে গোসল করিয়ে নতুন সালোয়ার কামিজ পরিয়ে ছেড়ে দেয়। ওসি আরো জানান, এ ঘটনায় একই এলাকার ৪/৫ জন জড়িত আছে। মামলার প্রক্রিয়া চলছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status