শেষের পাতা

৯ মাসে রপ্তানি আয় ৩ হাজার কোটি ডলার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

১৬ এপ্রিল ২০১৯, মঙ্গলবার, ১০:২৫ পূর্বাহ্ন

তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর ভর করে দেশের সামগ্রিক রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) প্রায় ৩১ বিলিয়ন ডলার মূল্যের (৩০৯০৩ মিলিয়ন ডলার) পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭.২০ শতাংশ এবং গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১২.৫৭ শতাংশ বেশি।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সব ধরনের পণ্য রপ্তানিতে পৃষ্ঠা ২০ কলাম ৪
বৈদেশিক মুদ্রার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। সেই হিসেবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৮৮২ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এ সময়ে আয় হয়েছে ৩ হাজার ৯০ কোটি ৩০ লাখ ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রপ্তানি আয় ছিল ২ হাজার ৭৪৫ কোটি ১৭ লাখ ডলার।

রপ্তানির এই ধারা অব্যাহত থাকলে এবারও বাংলাদেশের রপ্তানি আয় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করেন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা। তারা মনে করেন, বর্তমানে বাংলাদেশের যে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে তা অবশ্যই সন্তোষজনক। এই ধারা অব্যাহত থাকলে প্রবৃদ্ধি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক। তবে দুয়েকটি পণ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে নতুন নতুন রপ্তানি পণ্য সৃষ্টি করতে হবে।

ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে ২৫.৯৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ২২.৮৪ বিলিয়ন ডলার। রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় এই খাতে প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩.৬৫ শতাংশ। ফলে চলতি অর্থবছরে পোশাক থেকে ৩২.৬৮ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশা করছেন এই খাতের ব্যবসায়ীরা। গত অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ৩০.৬১ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক।

পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি ফারুক হাসান বলেন, পোশাক খাতের প্রবৃদ্ধির পেছনে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বাইরে যেসব নতুন বাজার সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তিনি বলেন, সদ্য বিজিএমইএতে নেতৃত্ব নির্বাচন হয়ে গেল। নতুন বোর্ড দায়িত্ব নিয়ে নতুন বাজার ও পণ্যের প্রাইস নিয়ে জোর ভূমিকা রেখে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে বলে আশা করছি।
এদিকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি আয়ের উৎস চামড়া শিল্পের খরা আরো প্রকট হয়েছে। অর্থবছরের ৯ মাস পার হলেও ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির ধারা থেকে বের হতে পারেনি চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের এই খাত। চলতি অর্থবছরে ৯.০৮ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি রয়েছে চামড়া শিল্পে। গত অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ৮৫ মিলিয়ন ডলারের চামড়া পণ্য। চলতি অর্থবছরে ১১২৪ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্য থাকলেও ৯ মাসে রপ্তানি হয়েছে ৭৭১.৬৯ মিলিয়ন ডলারের চামড়া, যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ৮৪৮.৭৯ মিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, গোটা বিশ্বব্যাপীই এখন চামড়া শিল্পের খারাপ সময় যাচ্ছে। তারই প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যে বাণিজ্য যুদ্ধ চলছে সেটাই চামড়াজাত পণ্যের বাজারকে খারাপ করে দিয়েছে।

এদিকে চলতি অর্থ বছরের প্রথম ৯ মাসে ৬২৮ মিলিয়ন ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৮১৮ মিলিয়ন ডলার। ফলে এই খাতেও দেখা দিয়েছে ২৩ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি।
গত অর্থবছরে ৫০৮ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি হয়েছিল। এ বছর তিন প্রান্তিকের লক্ষ্য ছিল ৩৭৩ মিলিয়ন ডলার। তবে এই সময়ে রপ্তানি হয়েছে ৪১৯ মিলিয়ন ডলার। গত বছর একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ৪০৭ মিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি ২.৭৭ শতাংশ।

এদিকে গত অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ৬৭৩.৭০ মিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছরে ৭১১ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি লক্ষ্য পূরণ করতে প্রথম তিন প্রান্তিকে ৫২৫.৫৬ মিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্য ছিল। এই সময়ের মধ্যে রপ্তানি হয়েছে ৭২২.৭৩ মিলিয়ন ডলার। ৫৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বজায় রেখেছে দেশীয় এই খাত।
কৃষিপণ্যের মধ্যে চা রপ্তানিতে ৭ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি থাকলেও সবজি, তামাক ও শুকনো খাবারে অধিক প্রবৃদ্ধি থাকায় এই খাতের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি এগিয়ে গেছে। এই ৯ মাসে ৮১.৭৩ মিলিয়ন ডলারের শাক-সবজি, ৫৫ মিলিয়ন ডলারের তামাকপণ্য এবং ১৬৬ মিলিয়ন ডলারের শুকনো খাবার রপ্তানি করা হয়েছে।

এদিকে গত অর্থবছরে ৩৩.৭০ মিলিয়ন ডলারের পেট্রোলিয়াম বাই-প্রডাক্ট রপ্তানি করতে পেরে এবার লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৩৪ মিলিয়ন ডলার। তবে চমকে যাওয়ার মতো বিষয় হচ্ছে, এ বছরের প্রথম ৯ মাসেই ১৮৩.৮৩ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। প্রবৃদ্ধি ৫৯১ শতাংশ।

এদিকে গত অর্থবছরে ওষুধ রপ্তানি হয়েছিল ১০৩.৭৬ মিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছরে ১১২.১৯ মিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্য। বছরের আরো তিন মাস বাকি থাকতেই রপ্তানি হয়েছে ৯৯.৭৪ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। গত অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ৭৬.৫২ মিলিয়ন ডলার। ফলে দেশের উদীয়মান এই খাত বর্তমানে ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে এগিয়ে চলছে।

এদিকে প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানিতেও রয়েছে ১৮.৩৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। গত অর্থবছরে ৯৮.৪৮ মিলিয়ন ডলারের প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। চলতি অর্থবছরের নয় মাসেই রপ্তানি হয়েছে ৮৭.০৯ মিলিয়ন ডলারের প্লাস্টিকজাত পণ্য। এই খাতে প্রবৃদ্ধি ১৮.৩৪ শতাংশ।

সিমেন্ট রপ্তানিতে ১৬.৩৯ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি। গত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ৯.৭৬ মিলিয়ন ডলারের সিমেন্ট রপ্তানি হলেও এবার হয়েছে মাত্র ৮.১৬ মিলিয়ন ডলার।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status