বাংলারজমিন

বগুড়ায় বিএনপি নেতা খুন

বগুড়া প্রতিনিধি

১৬ এপ্রিল ২০১৯, মঙ্গলবার, ৯:২৬ পূর্বাহ্ন

বগুড়ায় বিএনপি নেতা খুনের মধ্য দিয়েই যাত্রা শুরু করলো বাংলা নববর্ষ। বর্ষ বরণ আয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতা লক্ষ করা গেলেও রাতের শুরুতেই প্রকাশ্যে খুনের শিকার হলেন বগুড়ায় সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডঃ মাহবুল আলম শাহীন (৪৫)।
গত রোববার রাত তখন সবেমাত্র সাড়ে দশটা। শহর থেকে চাল কিনে ধরমপুরের বাসায় ফিরছিলেন নিজস্ব প্রাইভেট কারে। উপশহর এলাকায় পরিচিত এক চেয়ারম্যানের সঙ্গে একটি চায়ের দোকানে নেমে তিনি এবং ওই চেয়ারম্যান চা-পান করছিলেন। এ সময় ৭-৮ জনের একটি দুর্বৃত্ত দল ওই নেতার ওপর হামলা চালায়। হামলাকারীরা শাহীনের বুকে তিন জায়গায় উপর্যুপরি  চাকু চালায়। সেই সঙ্গে দু’পায়েও ছুরিকাঘাত করে। এতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। কয়েক মিনিটের অপারেশ শেষে দুর্বৃত্তরা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এ সময় আশেপাশে উপস্থিত সাধারণ মানুষ এগিয়ে এসে শাহীনকে পাশের নামাজগড়ে একটি ক্লিনিকে নিয়ে যায়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে তাৎক্ষণিকভাবে বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল এবং পরে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।  বগুড়া সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদের পাশাপাশি শাহীন পরিবহন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল। এদিকে পরিবহন মালিকদরে সংগঠন মোটর মালিক গ্রুপ নিয়ে চলমান বিরোধের সঙ্গে এই হত্যাকাণ্ড হতে পারে বলে অনেকেই ধারণা করছে। এমন দাবি করেছেন নিহতরে স্বজনরাও। এ ছাড়াও উপশহর স্নিগ্ধা আবাসিক এলাকায় একটি জমি নিয়েও শাহীনের সঙ্গে একটি  বিরোধ ছিল। পুলিশ এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখে কাজ করছে। নিহতের স্ত্রী আকতার জাহান শিল্পী জানান, মোটর মালিক গ্রুপের চলমান বিরোধ নিয়ে প্রতিপক্ষের লোকজন তার স্বামীকে কয়েক দিন ধরে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছলি।
নিহত শাহীনের ভাতিজা মেজবাহ জানান, মোটর মালিক গ্রুপের দ্বন্দ্ব ছাড়াও উপশহর স্নিগ্ধা আবাসিক এলাকায় জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল শাহীনের। জমি সংক্রান্ত বিষয়ে তার কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করছিল স্থানীয় কিছু চাঁদাবাজ। চাচা তাদের হাতেও খুন হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
জানা যায়, অ্যাডভোকেট শাহীনের বাড়ি ঘটনাস্থল থেকে এক কিলোমিটার দূরে ধরমপুর এলাকায়। তিনি প্রতি রাতে নিজেই গাড়ি চালিয়ে উপশহর বাজারে আসতেন। তিনি এলাকায় একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি হিসেবে পরচিত ছিলেন। বিএনপির রাজনীতিতে সক্রীয় হলেও আওয়ামী লীগের এক অংশের নেতাদরে সঙ্গে তার বেশ সখ্য ছিল। তিনি বিগত বিএনপি সরকারের সময়ে বগুড়া মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ ছাড়া তিনি বগুড়া মোটরমালিক গ্রুপের সদস্য, বগুড়া অ্যাডভোকেট বার সমিতির সদস্য এবং জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামরে সক্রীয় সদস্য ছিলেন।
তদন্তে মাঠে পুলিশের একাধিক টিম: বিএনপি নেতা অ্যাড. মাহবুব আলম শাহীন খুনরে সঙ্গে জড়িতদরে শনাক্ত করতে মাঠে নমেছে পুলিশের একাধিক টিম। খুনের ঘটনাটি নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পবিআিই) সদস্যরা ইতিমধ্যেই মাঠে নেমেছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তারা বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করছে। ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি টিভির ফুটেজ দেখে পুলিশ জড়িতদের শনাক্ত করতে কাজ করছে। খুনের ঘটনার সঙ্গে ৭-৮ জন জড়িত ছিল বলে পুলিশ প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানতে পেরেছে।
বগুড়া জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) সনাতন চক্রবর্তী জানান, একাধিক বিষয় সামনে রেখে পুলিশ অনুসন্ধান চালাচ্ছে। প্রাথমিক সুনির্দিষ্টভাবে কাউকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, তার পরেও  দ্রুত সময়ের মধ্যে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।
প্রথম জানাজা জেলা বিএনপির কার্যালয়ে: জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে বিকাল ৪টায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে মরহুমের প্রথম নামাজে জানাজা করা হয়। পরে নিহতের গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার ধরমপুরে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এই খুনের প্রতিবাদে সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় বগুড়া আইনজীবী বার সমিতির পক্ষ থেকে শোক সভার আয়োজন করা হয়। দুপুর আড়াইটায় আদালত চত্বরে আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষাভ করা হয়েছে। এ ছাড়াও জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে শাহীন হত্যার প্রতিবাদে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে শোক র‌্যালি বুধবার সকালে দলীয় কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ এবং বৃহস্পতিবার বগুড়া প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করা হবে।  জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চান গভীর রাতে হাসপাতালে ছুটে যান। তারা এই খুনের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে খুনিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status