বাংলারজমিন

বিয়ানীবাজারে আলো ছড়াচ্ছে নানকার বিদ্রোহ স্মৃতি পাঠাগার

মিলাদ জয়নুল, বিয়ানীবাজার (সিলেট) থেকে

২৭ মার্চ ২০১৯, বুধবার, ৯:১৯ পূর্বাহ্ন

 ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক সুনাই নদীর তীরঘেঁষা প্রত্যন্ত অঞ্চলে আলো ছড়াচ্ছে ‘নানকার বিদ্রোহ স্মৃতি পাঠাগার’। সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার ৮নং তিলপাড়া ইউনিয়নের উলুউরী গ্রামে অবস্থিত এ পাঠাগারটি ইতিমধ্যে পাঠক মহলে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। ১৮ই আগস্ট ১৯৪৯, ঐতিহাসিক নানকার বিদ্রোহ আন্দোলনে শহীদদের বিপ্লবী চেতনা ধারণ করে আলোকিত মানুষ গড়ার প্রত্যয়ে গ্রামের উদীয়মান তরুণরা মিলে এ আলোর পাঠশালা গঠনের উদ্যোগ নেয়। ফলশ্রুতিতে স্থানীয় নন্দকিশোর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে অবস্থিত ভূপেন্দ্র দাশ এর ভূমিতে অস্থায়ীভাবে নির্মাণ করা হয় লাইব্রেরির টিনশেডের ঘর। ২৬ মার্চ ২০১৮ লাইব্রেরির উদ্বোধন করেন শহীদ বজ্রনাথ দাসের পুত্র বরদা প্রসাদ দাস ও শহীদ পবিত্র দাসের পুত্রবধূ রাণী বালা দাস। এই দুই শহীদ নানকার বিদ্রোহ আন্দোলনে শাহাদৎ বরণ করেন। পাঠাগারে প্রতিদিন স্কুল, কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বই পড়তে আসেন। তবে পাঠকের চাহিদার তুলনায় বইয়ের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল। আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে পাঠাগারের অবকাঠামো উন্নয়ন, নতুন বই ক্রয়সহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্ভব হচ্ছে না জানিয়ে পাঠাগারের অন্যতম উদ্যোক্তা সপ্তর্ষি দাস বলেন, আমাদের নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে, পাঠকের চাহিদার তুলনায় আমাদের বই সংখ্যা খুব নগণ্য, রয়েছে চেয়ার টেবিলের অপ্রতুলতা। এমনকি বই রাখার জন্য এখন পর্যন্ত স্কুলের বেঞ্চ ব্যবহার করছি আমরা। বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে এখনও রাতে অন্ধকার থাকে পাঠাগার কক্ষ। আমাদের আর্থিক সহযোগিতার প্রয়োজন, বিত্তবানরা এগিয়ে এলে আমাদের চলারপথ আরো সুদৃঢ় হবে। যেভাবে যাত্রা শুরু: ২০১৭ সালের ১৮ই অক্টোবর উলুউরী গ্রামের তরুণরা মিলে ‘নবযাত্রা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন’ নামক একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে। মূলত গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণ, মানবিকতা ও শিক্ষা এই প্রধান ৩টি লক্ষ্য নিয়ে পথচলা শুরু করে সংগঠনটি। ‘জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব’ এই স্লোগানকে ধারণ করে সংগঠনের সৃজন মনস্ক তরুণরা একসময় গড়ে তুলেন তাদের স্বপ্নের ‘নানকার বিদ্রোহ স্মৃতি পাঠাগার’। পাঠাগার স্থাপনের শুরুর দিক এতো সহজ ছিল না। যে স্বপ্নবাজ তরুণরা উদ্যোগ নিয়েছিল তারা কেউই আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী ছিল না। কেউ সারা মাসের পকেট খরচ বাঁচিয়ে, কেউবা মাসের টিউশনির টাকা, আর স্কুল পড়ুয়া ছোট ছেলে মেয়েদের টিফিনের জমানো টাকায় এবং সবার স্বেচ্ছাশ্রমে গড়ে ওঠে এ পাঠাগার। নিজেদের ঘরে থাকা বই পাঠাগারে উপহার দিয়ে শুরু হয় বই সংগ্রহ অভিযান। তারপর অনলাইনের মাধ্যমে চলতে থাকে বই সংগ্রহ অভিযান। এরপর ক্রমাগত বই আসতে শুরু করে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, বিভিন্ন প্রকাশনী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী এবং প্রবাসীদের কাছ থেকে। এভাবেই অনেকে বই পাঠিয়ে সহযোগিতা করেন। পাঠাগারের মুখপত্র হিসেবে প্রতি ৬ মাস অন্তর বের হচ্ছে ‘নানকার সমাচার’ নামক পত্রিকা। পাঠাগার নিয়ে উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ জানান, কয়েকবছর আগে এখানে স্থানীয়দের সহযোগিতায় একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়। কিন্তু পাঠাগার উন্নয়নে আসলে কেউ এগিয়ে আসছে না। মুক্তিযোদ্ধা ও লেখক আবদুল মালিক ফারুক বলেন, গ্রামীণ জনপদে গড়ে ওঠা এসব পাঠাগারগুলো সঠিক তদারকি করলে দেশের কোনো ঘটনা নিয়ে কেউই ইতিহাস বিকৃতি করতে পারবে না।
বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী আরিফুর রহমান জানান, পাঠাগারটি সরজমিন দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি প্রেরণ করবো।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status