ভ্রমণ কন্যাদের মতবিনিময়

ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশ “ভ্রমণ কন্যা” এর একটি প্রজেক্ট কর্ণফুলী প্রেজেন্টস ‘নারীর চোখে বাংলাদেশ’ ৬৪টি জেলা ট্রাভেলেটস এই স্লোগান নিয়ে ভ্রমণকন্যারা স্কুটারে করে সারা দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তারা হলেন- ভ্রমণ কন্যার প্রতিষ্ঠাতা ঢাকা মেডিকেল কলেজের ডা. মানসী সাহা, একই মেডিকেলের ডা. সাকিয়া হক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মুনতাহা রুম্মান অর্থি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলভী রহমান। ২টি স্কুটারে করে কয়েকটি পর্বে ৬৪টি জেলা ভ্রমণ করবেন তারা। ইতিমধ্যে ৫৪টি জেলা ভ্রমণ করেছেন তারা। ৮ম ধাপে সর্বশেষ ৫৫তম জেলা হিসেবে তারা হবিগঞ্জ ভ্রমণ করছেন। গতকাল সোমবার তারা বানিয়াচঙ ও নবীগঞ্জের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন করেন। তারা নবীগঞ্জের আউশকান্দি র. প উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ, বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং আত্মরক্ষা, খাদ্য ও পুষ্টি এবং বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বিষয়ে আলোচনা করেন। রাতে তারা হবিগঞ্জ প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় ভ্রমণ কন্যারা জানান, ২০১৭ সালের ৬ই এপ্রিল তারা যাত্রা শুরু করেন। এই যাত্রায় তারা দেশের ৫৫টি জেলা ভ্রমণ সম্পন্ন করেছেন। বাকি জেলাগুলো ভ্রমণ এ বছরেই সম্পন্ন করবেন। ভ্রমণকালে তারা জেলাগুলোর প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুলের মেয়েদের মধ্যে সচেতনতামূলক বিভিন্ন দিক তুলে ধরছেন। পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়ন, বয়ঃসন্ধিকালীন শারীরিক ও মানুষিক পরিবর্তন, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, আত্মরক্ষা, খাদ্য ও পুষ্টি বিষয় নিয়ে সতেচনতামূলক পরামর্শ দিচ্ছেন। স্কুলছাত্রীদের ইভটিজিং প্রতিরোধের কৌশল, তাদের মেধাবিকাশ ঘটানোতেও সচেতন করে তুলছেন। এ সময় তারা নারীদের হাতে কলমে শিখাচ্ছেন কিভাবে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে নিজেদের রক্ষা করতে হয়। ভ্রমণকন্যারা নারীদের জাগ্রত করে তুলছেন।

 তারা বলছেন যেকোনো পরিস্থিতিতে ভয় পেয়ে নিজেদের সাহসিকতার মাধ্যমে সামাল দিতে হবে। সমাজে নারী যেন কারো অবহেলার পাত্র না হয় এবং নারীর সম্মান মর্যাদা বৃদ্ধি পায় সেদিকে নারীদের কাজ করতে অনুপ্রেরণা দেন তারা। সব পরিস্থিতি ধৈর্য্য সহকারে মোকাবিলা করতে নারীদের পরামর্শ দেন ভ্রমণ কন্যারা। এ ছাড়াও বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, পর্যটনগুলোর ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে সাহায্য করছেন ভ্রমণ কন্যারা। ভ্রমণকালে তারা ম্যাপ দেখে দেশের বিভিন্ন জেলার অবহেলিত এলাকাগুলোতে গিয়েছেন। সেসব এলাকার ছিন্নমূল মানুষের সঙ্গে মিশছেন। তাদের সুখ দুঃখের কথা লিপিবদ্ধ করছেন। বিশেষ করে নারীদের বাল্যবিবাহের কুফল, যৌতুক প্রথা থেকে মুক্তি, একাধিক সন্তান জন্মদানে জীবনের হুমকির কারণ ও এসব সন্তানকে শিক্ষিত করে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলাও পরিবারের জন্য দুঃসাধ্যকর।
মতবিনিময়কালে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে ভ্রমণ কন্যারা বলেন- বাংলাদেশ পৃথিবীর মধ্যে একটি সুন্দর দেশ। দেশটি ঘুরে না দেখলে বোঝা যাবে না। তবে এ দেশের মানুষের সচেতনতার অভাব রয়েছে। আমরা মূলত মানুষকে সচেতন করে তুলতে এই যাত্রা শুরু করি। আমরা বোঝাতে চাই, নারী চাইলে পুরুষের মত সব কিছু করতে পারে। ভ্রমণকালে তারা প্রত্যেক জেলার ঐতিহ্যবাহী দর্শনীয় স্থানগুলো পরিদর্শন করছেন। এসব স্থানের ইতিহাস ঐতিহ্য লিপিবদ্ধ করছেন। স্থানগুলোকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ফটোসেশন করছেন। পরিদর্শনকালে সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজন তাদের আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করেছেন বলে জানান ভ্রমণ কন্যারা। প্রত্যেক জেলায় তারা প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলে মেয়েদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। গতকাল মঙ্গলবার তারা চুনারুঘাটের বিভিন্ন চা বাগান পরিদর্শন করবেন।
মতবিনিময়কালে ভ্রমণ কন্যারা হবিগঞ্জ প্রেস ক্লাবকে তাদের ভ্রমণের ওপর প্রকাশিত একটি স্যুভেনীর উপহার দেন। ভ্রমণ কন্যাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে অংশ নেন হবিগঞ্জ প্রেস ক্লাব সভাপতি এনটিভি প্রতিনিধি হারুনুর রশিদ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক একুশে টিভি ও যুগান্তর প্রতিনিধি সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন, প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ইত্তেফাক প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল, প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি দৈনিক খোয়াই সম্পাদক শামীম আহছান, প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি দৈনিক হবিগঞ্জ এক্সপ্রেস সম্পাদক মো. ফজলুর রহমান, প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি দৈনিক হবিগঞ্জ সমাচার সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা রফিক, প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক চ্যানেল আই প্রতিনিধি চৌধুরী মোহাম্মদ ফরিয়াদ, প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নির্মল ভট্টাচার্য্য রিংকু, সময় টিভি ও মানবজমিন প্রতিনিধি রাশেদ আহমদ খান, আরটিভি প্রতিনিধি সায়েদুজ্জামান জাহির, দৈনিক করতোয়া প্রতিনিধি টিপু চৌধুরী, একাত্তর টিভি প্রতিনিধি শাকিল চৌধুরী, নিউজটুয়েন্টিফোর টিভি প্রতিনিধি শ্রীকান্ত গোপ, দৈনিক হবিগঞ্জের বাণী সম্পাদক জিয়া উদ্দিন দুলাল, জিটিভি প্রতিনিধি মোহাম্মদ নুর উদ্দিন, এশিয়ান টিভি প্রতিনিধি এসএম সুরুজ আলী, এসএ টিভি প্রতিনিধি আব্দুর রউফ সেলিম প্রমুখ।