বাংলারজমিন

হরিণাকুণ্ডু ও শৈলকুপায় যে কারণে নৌকার ভরাডুবি

আমিনুল ইসলাম লিটন, ঝিনাইদহ থেকে

২৭ মার্চ ২০১৯, বুধবার, ৮:২৪ পূর্বাহ্ন

নৌকা প্রতীকের দুই প্রার্থী হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় মশিয়ার রহমান জোয়ারদার ও শৈলকুপা উপজেলায় নায়েব আলী জোয়ারদারের পরাজয়ের কারণ বিশ্লেষণ করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাধারণ মানুষ। অন্য কোনো দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও, কি কারণে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হয়েও পরাজয় বরণ করতে হলো এমন আলোচনা-সমালোচনার ঝড় চলছে চায়ের দোকান ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। শৈলকুপার একটি অভিজাত পরিবারের সন্তান হচ্ছে নৌকার প্রার্থী নায়েব আলী জোয়ারদার। দীর্ঘদিন ধরে শৈলকুপার রাজনীতিতে বড় একটি জায়গার নেতৃত্ব দখল করে রেখেছে এই পরিবারটি। নায়েব আলী জোয়ারদারের ভাই তৈয়ব আলী জোয়ারদার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বহুদিন। দুই ভাই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। নায়েব আলী সংসদ নির্বাচনে একাধিকবার মনোনয়ন চেয়ে পাননি। ব্যক্তিগত জীবনে সফল একজন ব্যবসায়ী হিসাবে নায়েব আলী জোয়ারদারের পরিচিতি রয়েছে। গত সংসদ নির্বাচনেও দলীয় প্রার্থীর দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন। শেষ পর্যন্ত ছিটকে পড়েন। মনোনয়ন পান বর্তমান এমপি আবদুল হাই। নায়েব আলী জোয়ারদার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পাওয়ার পর দলীয় বিভেদ আরো বেড়ে যায়। সেই বিভেদ থেকে কপাল পোড়ে নায়েব আলী জোয়ারদারের। বিএনপির একটি বড় অংশ নায়েব আলী জোয়ারদারের বিপক্ষে ভোট করে। শেষ পর্যন্ত মাত্র ৩৬০ ভোটে হেরে যায় নৌকার প্রার্থী নায়েব আলী জোয়ারদার। মূলত দলের একজন শীর্ষ নেতা নৌকার পক্ষে ভোট না করে বিদ্রোহী প্রার্থী আনারস প্রতীকের শিকদার মোশারফ হোসেন সোনার পক্ষে ভোট করার কারণে নৌকার ভরাডুবির অন্যতম কারণ বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এদিকে হরিণাকুণ্ডুতে স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর হোসেন নির্বাচিত হয়ে এলাকায় ব্যাপক চমক সৃষ্টি করেছেন। তার ব্যক্তিগত ইমেজ ও কৌশলী প্রচারণাই জয়ের মুকুট পরতে সক্ষম হয়। জাহাঙ্গীরের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের মশিয়ার রহমান জোয়ারদার প্রায় ৮ হাজারের বেশি ভোটে পরাজিত হয়েছেন। তার পরাজয়ের পেছনেও রয়েছে দলীয় কোন্দল। দলের একটি বড় অংশ তার পক্ষে কাজ করেনি। অনেকে প্রকাশ্যে নৌকার পক্ষে থাকার ঘোষণা দিলেও গোপনে জাহাঙ্গীর হোসেনের মোটরসাইকেলের পক্ষে কাজ করেছেন বলে গুজব রয়েছে। বিভিন্ন চায়ের দোকানে আলোচনা সমালোচনা রয়েছে যে মশিউর রহমান দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন এবং দলের কোনো আন্দোলন সংগ্রামে তাকে পাওয়া যায় না। তিনি দলীয় কোনো নেতা-কর্মীর খোঁজখবরও রাখেন না। এছাড়া বিএনপি-জামায়াতের ছিটেফোঁটা কিছু ভোট পড়লেও সেটি জাহাঙ্গীরের বাক্সে জমা হতে পারে বলেও শোনা যাচ্ছে। জাহাঙ্গীর হোসেনের তরুণ নেতা হিসেবে শুধু হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় নয়, সারা জেলায় ভালো ইমেজের ছাত্র নেতা হিসেবে পরিচিতি রয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র নেতা হিসেবে ইবি জাহাঙ্গীর নামে ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে সকল শ্রেণির নেতা-কর্মীদের কাছে। বিভিন্ন সময়ে নানা আন্দোলনে তার সম্পৃক্ততার কথা সবারই জানা। ব্যক্তিগত ইমেজের পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মকে জাহাঙ্গীর ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছেন। আর এ কারণেই বিজয়ের সোনার হরিণটি ধরা দেয় তার হাতে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status