প্রথম পাতা

ওয়াসিম হত্যা

সেই চালক-হেলপারের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট ও মৌলভীবাজার থেকে

২৬ মার্চ ২০১৯, মঙ্গলবার, ৯:৫১ পূর্বাহ্ন

ওয়াসিমের শোকে স্তব্ধ ক্যাম্পাস। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ ক্যাম্পাস হয়ে পড়েছে শোকাতুর। ক্লাস, পরীক্ষা বন্ধ। হলে হলে শিক্ষার্থীদের নীরব অবস্থান। শিক্ষক-কর্মকর্তারাও নীরব। এমন ঘটনায় কখনো কাম্য ছিল না তাদের। ওয়াসিমের মৃত্যু কাঁদিয়ে গেল সবাইকে। এই শোক সইবার শক্তি নেই কারো। গতকাল বিকালে ক্যাম্পাসে এক ঘণ্টার মানববন্ধন কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের ঢল নেমেছিল। পুরো ক্যাম্পাসজুড়েই ছিল শিক্ষার্থীদের অবস্থান। এ সময় তারা দাঁড়িয়ে ওয়াসিমকে স্মরণ করে এক মিনিট নীরবতা পালন করে। এ কারণে আগামীকাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করেছেন শিক্ষকরা। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ছাত্র ওয়াসিম আব্বাসীর মৃত্যুর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বাদী হয়ে মৌলভীবাজার থানায় মামলা করেছেন। ওয়াসিম আব্বাসকে বাস থেকে ‘ধাক্কা মেরে ফেলে হত্যার’ ঘটনায় ঘাতক বাসের চালকসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

সোমবার দুপুরে মৌলভীবাজার সদর থানায় ‘হত্যা’ আইনে এ মামলা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. মৃত্যুঞ্জয় কুণ্ডু। মামলার বাদী প্রফেসর ড. মৃত্যুঞ্জয় কুণ্ডু জানিয়েছেন, মামলায় বাসের চালক জুয়েল মিয়া, হেলপার মাসুক মিয়া ও সুপারভাইজার সেপুল মিয়াকে আসামি করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মতো তিনি এই মামলা করেন বলে জানান। মামলায় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ১০ ছাত্রকে সাক্ষী করা হয়েছে।

গতকাল তারাও প্রক্টরের সঙ্গে সিলেট থেকে মৌলভীবাজারে গিয়ে এ মামলা করেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মামলা করলেও পরিবারের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় আইনি কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। রোববার ময়না তদন্ত ছাড়াই নিহত ছাত্র ওয়াসিম আব্বাসের মরদেহ হবিগঞ্জের নবীগঞ্জের রুদ্রগ্রামে দাফন করা  হয়েছে। ঘটনার পর রাতেই সিলেট মহানগর পুলিশ অভিযান চালিয়ে সিলেট নগরীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে বাস চালক জুয়েল মিয়া এবং ছাতকের সিংচাপইড় এলাকা থেকে হেল্পার মাসুক মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছিল। রোববার মৌলভীবাজার সদর থানা পুলিশ তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সদর থানার ওসি সুহেল আহমদ।

তিনি জানান, মামলার আসামি বাসের সুপারভাইজার সেপুল মিয়া গ্রেপ্তার হয়নি। তাকে গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান চালাবে বলে জানান তিনি। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন কাউন্সিলের আহবায়ক ড. মো. আবুল কাশেম জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীরা আগামীকাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয়ায় আমরাও ওই দিন পর্যন্ত ক্লাস পরীক্ষা স্থগিত রেখেছি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমরাও একাত্ম। এমন ঘটনা কেউ চাই না। এখন সবাই শোকাহত বলেও জানান তিনি। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তিন দিনের ক্লাস বর্জন কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন গতকাল শেষ হয়েছে।

এই আন্দোলনের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। এ কারণে কোনো ক্লাস ও পরীক্ষা হয়নি। ক্যাম্পাসে সবার উপস্থিতি থাকলেও প্রাণবন্ত ক্যাম্পাসজুড়েই বিরাজ করছে শোকের নীরবতা। এর কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন কেউ নেই যে নিহত ওয়াসিম আব্বাসকে চিনতো না। খেলার মাঠ, সাংস্কৃতিক অঙ্গন এমনকি রাজনীতি সবখানেই ছিল তার বিচরণ। এই প্রিয় মানুষটিকে হারিয়ে ক্যাম্পাস শোকাতুর হয়েছে। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলো ছেড়ে সব শিক্ষার্থী চলে আসেন ক্যাম্পাসে। এ সময় তারা প্রধান ফটক থেকে ক্যাম্পাসের ভেতরে বিশাল মানববন্ধন কর্মসূচি শুরু করে। এতে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেয়। মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে- ওয়াসিম খুনের ঘটনার বিচারে যেন কোনো প্রহসন না হয়। হত্যা মামলা করা হয়েছে। এই মামলা যেন নিজ গতিতে চলে সেটিই এখন তাদের মুখ্য দাবি। একই সঙ্গে সড়ক নিরাপদ করতে তারা সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর দাবি জানান। বিশেষ করে উদাহরণ পরিবহনের বাস সার্ভিসের রুট পারমিট বন্ধের দাবি জানান তারা। মানববন্ধন শেষে তারা ওয়াসিম স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নয়ন রঞ্জন ঘোষ শুভ জানিয়েছেন- শিক্ষার্থীরা শোকাহত। এমন একটি মেধাবী প্রাণ অকালে চলে যাবে কেউই বিশ্বাস করতে পারছে না। এরপরও বিশ্ববিদ্যায়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রক্টর হত্যা মামলা করেছেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হলেই ওয়াসিমের বন্ধুরাসহ আমরা সবাই শান্তি পাবো বলে জানান তিনি। ওয়াসিমের রুমমেট ও বন্ধু সোহান ও মশিউর জানিয়েছেন- ‘আমরা বিচার চাই। সবাই বলছে ওয়াসিমকে খুন করা হয়েছে। সুতরাং আসামিদের সর্বোচ্চ বিচার আমরা দাবি করছি।’ এদিকে গতকাল বাদ আসর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে নিহত ওয়াসিম আব্বাসের রূহের মাগফিরাত কামনা করে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status