বিনোদন

টিভি নাটকে মুক্তিযুদ্ধ

এন আই বুলবুল

২৬ মার্চ ২০১৯, মঙ্গলবার, ৭:১১ পূর্বাহ্ন

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ টিভিতে প্রচার হওয়া প্রথম নাটকটিই ছিল মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে। নাটকের নাম ‘বাংলা আমার বাংলা’। ড. ইনামুল হকের লেখা নাটকটি নির্মাণ করেছিলেন আবদুল্লাহ আল মামুন। পরের বছর আরেকটি আলোচিত নাটক প্রচার হয়। ‘জনতার কাছে আমি’ শিরোনামের নাটকটি রচনা ও পরিচালনা করেছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। একটা সময় স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসের বাইরেও মুক্তিযুদ্ধের নাটক প্রচার হতো বাংলাদেশ টেলিভিশনে। নতুন প্রজন্ম টেলিভিশনে মুক্তিযুদ্ধের নাটকের মাধ্যমে অনেক অজানা ইতিহাস জেনে থাকে। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় বেড়েছে আমাদের টিভি চ্যানেলের সংখ্যা। নাটক নির্মাণের সংখ্যাও বেড়েছে। তবে কমেছে মুক্তিযুদ্ধের নাটক নির্মাণ। বর্তমানে ডিসেম্বর কিংবা মার্চ মাস এলেই টেলিভিশনে মুক্তিযুদ্ধের নাটক প্রচার হতে দেখা যায়। এ ছাড়া বছরের বাকি সময়গুলোয় টিভিতে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কোনো কিছুই প্রচার হয় না। আবার মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক যে নাটক, টেলিফিল্মগুলো প্রচার হয় সেগুলোয়ও পরিপূর্ণভাবে মুক্তিযুদ্ধের গল্প প্রতিফলিত হয় না। জানা যায়, অনেক নির্মাতার নির্মাণের আগ্রহ থাকার পরও চ্যানেল কর্তৃপক্ষের অনিচ্ছার কারণে তারা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নির্মাণ করছেন না। একটি  দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিতে টিভি নাটক দারুণ ভূমিকা রাখে। সেখানে নির্দিষ্ট বৃত্তের মধ্যে এখন নির্মাণ হচ্ছে নাটকগুলো। প্রেম ভালোবাসা ছাড়া অন্য কোনো বিষয় খুব একটা থাকে না এসব নাটকে। এই প্রসঙ্গে ড. ইনামুল হক বলেন, এটি সত্যি পরিতাপের বিষয়। এখন আগের মতো মুক্তিযুদ্ধের নাটক নির্মাণ হচ্ছে না। যার কারণে নতুন প্রজন্মও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানার সুযোগ পাচ্ছে না। আমি মনে করি, এখন অনেক নির্মাতাও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখেন না। যার কারণে তারা এসব নাটকে উৎসাহ পান না। মুক্তিযুদ্ধের নাটক নির্মাণের জন্য নির্মাতাকে ’৭১-এর দিনগুলো নিয়ে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সমুন্নত রাখার জন্য মুক্তিযুদ্ধের বেশি বেশি নাটক নির্মাণ হওয়া প্রয়োজন। টিভি নাটকে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট কতটুকু ফুটিয়ে তোলা সম্ভব? এই প্রশ্নের উত্তরে নির্মাতা এসএ হক অলিক বলেন, নতুন প্রজন্মের মানুষদের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানাতে হলে বেশি বেশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার গল্প নিয়ে কাজ করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের গল্প নিয়ে ধারাবাহিক নাটক নির্মাণ হতে পারে। একক নাটকগুলোয় মুক্তিযুদ্ধের বিচ্ছিন্ন বিষয় চিত্রিত হয়। মুক্তিযুদ্ধ অবশ্যই অনেক বড় ক্যানভাস। এক খণ্ডের নাটকে এটির খণ্ডাংশ তুলে ধরা হয়। ধারাবাহিক নাটক নির্মিত হলে গল্পের একটি ঘটনার ছায়া এখানে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব। নির্মাতা মাসুদ সেজান বলেন, যদি আমরা ’৭১-এ গিয়ে গল্পটা বলতে চাই, তাহলে সেই সময়কে বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য পরিবেশ তৈরি করতে হয়। সেটি অনেকটা কষ্টসাধ্য এবং এটা বাজেটের ওপর নির্ভর করে। টিভি নাটকে সেই বাজেট পাওয়া যায় না। সেই কারণে নাটকগুলোকে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না। যদি টিভি চ্যানেলগুলো মুক্তিযুদ্ধের নাটকের প্রতি ব্যাপকভাকে আগ্রহী হতো তাহলে নির্মাতারা তেমন নাটক বেশি বেশি নির্মাণ করতো। নাটক সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ভালোবাসা দিবসসহ বেশ কিছু দিবসে প্রায় প্রতিটি চ্যানেল নাটক নিয়ে নানা রকম আয়োজন করে। অথচ দেশের নাটকের জন্য তাদের সেই আয়োজন ও বাজেট থাকে না। এটি আমাদের জন্য বেদনাদায়ক। ডিসেম্বর কিংবা মার্চের বাইরেও মুক্তিযুদ্ধের নাটক নির্মাণের জন্য চ্যানেল-নির্মাতা সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status