প্রথম পাতা

যেভাবে হত্যা করা হয় ওয়াসিমকে

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

২৫ মার্চ ২০১৯, সোমবার, ৯:৪০ পূর্বাহ্ন

আউশকান্দির টোলপ্লাজা থেকে উদার পরিবহনের বাসে উঠেন নিহত ওয়াসিম আব্বাস ও তার ১০ সহপাঠী। তারা সবাই বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ করে সিলেটে ফিরছিলেন। বাসে ওঠার পর হেলপার মাসুক তাদের প্রত্যেকের কাছে ১০০ টাকা ভাড়া চায়। এতে আপত্তি তোলেন ওয়াসিম। ভাড়া তো এত নয়, বেশি চাচ্ছেন কেনো- এ প্রশ্ন করেন ওয়াসিম। এ নিয়ে বাসের হেলপারের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা হয়। এরই মধ্যে উদার পরিবহনের ওই বাস শেরপুর পৌঁছে যায়। ভাড়া নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ায় বাস থেকে নেমে যান ওয়াসিম ও তার সহপাঠীরা। সবার শেষে নামেন ওয়াসিম ও তার বন্ধু রাকিব হাসান। এমন সময় হেলপার ওয়াসিম ও তার বন্ধুদের নিয়ে কটূক্তি করে। বলে- ‘বাসে ওঠার  যোগ্যতা নেই, কম ভাড়া দেয়।’ এ কথা শুনেই শেরপুর মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে দাঁড়ানো বাসে উঠেন ওয়াসিম ও তার বন্ধু রাকিব। তারা উঠতেই চালক জুয়েল মিয়া বাসের স্পিড বাড়িয়ে দেয়। কটূক্তি কেনো করা হলো- এ নিয়ে ফের তর্ক বাধলে ওই সময় হেলপার মাসুক ধাক্কা দেয় ওয়াসিম ও তার বন্ধুকে। হেলপারের ধাক্কায় রাকিব ছিটকে রাস্তার উপর পড়ে। আর ওয়াসিম পড়ে যাওয়ার আগেই বাসের হাতল ধরে ফেলে। এ সময় হেলপার দরোজা বন্ধ করে দিলে অসহায় হয়ে পড়েন ওয়াসিম।

দ্রুতগতির বাসের ঝাঁকুনিতে এক সময় সে চাকার নিচে পিষ্ট হয়। এতেই গুরুতর আহত হয়ে পড়ে। তার দুই পায়ের উপর দিয়ে প্রথমে বাসের সামনের চাকা এবং পরে পেছনের চাকা উঠে যায়। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসার পথেই মৃত্যু হয় ওয়াসিমের। এমন ঘটনা এখনো ভুলতে পারছেন না ওয়াসিমের সঙ্গে থাকা সহপাঠীরা। চোখের সামনেই তারা ওয়াসিমের মৃত্যু দেখেছেন। আর এই মৃত্যু নিছক কোনো দুর্ঘটনা ছিল না বলে দাবি করেন তারা। ওয়াসিমের সঙ্গে আহত হওয়া রাকিব হাসান দুর্ঘটনার সময়ের কথা স্মরণ হলেই আঁতকে উঠেন। বলেন- হেলপার আমাকে ও ওয়াসিমকে ধাক্কা দেয়। আমি ছিটকে রাস্তায় পড়ে গেলেও ওয়াসিম হাতলে আটকে যায়। পরে সেখান থেকে চাকার নিচে পড়ে গুরুতর আহত হয়। রাকিব জানান, ‘আমরা মোট ১১ জন ছিলাম। সবাই বাস থেকে নেমে যাওয়ার পর ওয়াসিম নামে। পেছন থেকে কটূক্তি করে বাসের হেলপার ও সুপারভাইজার। এই কটূক্তি শুনেই আমরা বাসে উঠি।

এরপর বাসের স্পিড বাড়িয়ে দিলে এই দুর্ঘটনা ঘটে।’ রাকিব বলেন, ‘আমি ভাগ্যের  জোরে বেঁচে গেছি। আর ওয়াসিম নিহত হলো। আমি যখন পড়ে যাই এর একটু পরেই দেখি ওয়াসিম চাকার নিচে পিষ্ট হচ্ছে।’ ওয়াসিমের সঙ্গে থাকা আরেক প্রত্যক্ষদর্শী রঞ্জন ঘোষ জানিয়েছেন, প্রতিবাদ করতে বাসের গেটে ওঠার পরই চালক বলে ‘এদেরকে বাঁধ’। এ কথা বলার পর বাসের গতিও আস্তে আস্তে বাড়াতে থাকে। এরপর ভেতর থেকে আমাদের ধাক্কা দেয়া হয়। দু’জনকে আলাদাভাবে ধাক্কা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন- ‘পড়ে যাওয়ার পরও ওয়াসিম বাঁচতে চেষ্টা করে। কিন্তু বাস স্পিড বাড়িয়ে টার্ন নেয়ার কারণে বাসের  পেছনের চাকার নিচে পড়ে সে।’ এদিকে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) ছাত্র ওয়াসিম আব্বাসকে বাসচাপায় হত্যার ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন উদার পরিবহনের চালক ও হেলপার। শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে উদার পরিবহনের বাসচালক জুয়েল আহমদ ও রাত ২টার দিকে হেলপার মাসুককে পৃথক স্থান থেকে আটক করে  মৌলভীবাজার মডেল থানা পুলিশ। আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনা স্বীকার করেছেন। 

মৌলভীবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ারুল হক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বিকালে নবীগঞ্জের  টোলপ্লাজা থেকে সিলেট যাওয়ার উদ্দেশে উদার পরিবহনের বাসে ওঠেন সিকৃবির কয়েকজন ছাত্র। এ সময় হেলপার মাসুক মিয়া তাদের কাছে ১০০ টাকা ভাড়া দাবি করে। এতে ওয়াসিম ও তার বন্ধুরা ছাত্র পরিচয় দিয়ে ভাড়া কম দেয়ার কথা জানান। এতে হেলপার ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান। এক পর্যায়ে তারা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শেরপুর মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে নেমে যান। নামার সময় পেছন থেকে হেলপার তাদের গালি  দেন। এতে ওয়াসিম বাসের সিঁড়িতে উঠে হাতল ধরে কেন গালি দিলেন তা জিজ্ঞেস করতেই চালক গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেয়। ঠিক তখনই হেলপার মাসুক মিয়া ওয়াসিমকে ধাক্কা দিয়ে নিচে  ফেলে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে বাসের পেছনের চাকায় পিষ্ট হয়ে ওয়াসিম গুরুতর আহত হন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status