এক্সক্লুসিভ

আরেক টাইটানিক আতঙ্ক

মানবজমিন ডেস্ক

২৫ মার্চ ২০১৯, সোমবার, ৮:৩২ পূর্বাহ্ন

এমভি ভাইকিং স্কাই জাহাজের ভেতর তখন বেশির ভাগ মানুষ মধ্যাহ্নভোজে ব্যস্ত। ঠিক তখনই প্রচণ্ডভাবে এদিক ওদিক দুলতে থাকে প্রকাণ্ড সেই জাহাজ। ১০ মিটারেরও বেশি উচ্চতার উত্তাল ঢেউয়ের নিচে বার বার যেন হারিয়ে যাচ্ছিল তা। কয়েক তলাবিশিষ্ট ওই জাহাজের জানালার কাঁচ ভেঙে  ভেতরে আছড়ে পড়তে থাকে লোনা পানি। ঐতিহাসিক টাইটানিক ডুবে যাওয়ার আগে যখন দিখণ্ডিত হয়ে যায়, দু’খণ্ড যখন খাঁড়া হয়ে ডুবে যেতে থাকে এবং মানুষগুলো, আসবাবপত্রগুলো যেভাবে মেঝের ওপর এপাশ ওপাশ গড়িয়ে যেতে থাকে- ঠিক তেমনি এই জাহাজের  ভেতরকার অবস্থা দাঁড়ায়। প্রকাশিত ভিডিওতে এ দৃশ্য ফুটে উঠেছে। এমন এক বিপদসঙ্কুল অবস্থায় জাহাজের ইঞ্জিন যায় বিকল হয়ে। প্রচণ্ড বাতাসের ধাক্কায় একবার এদিক, আবার ওদিক ঘুরে যেতে থাকে এমভি ভাইকিং স্কাই। আর  ভেতরে তখন বাঁচার করুণ আকুতি। দিশাহারা হয়ে পড়েন নাবিক ও যাত্রীরা। কেউ প্রার্থনা শুরু করে দেন। কেউ আর্তচিৎকারে শূন্য সমুদ্রের বাতাস ভারি করে তোলেন। মৃত্যুর এক ভয়ঙ্কর বিভীষিকা যেন তাদের সামনে হানা দেয়। ঠিক এমন অবস্থায় বিপদ সংকেত পাঠানো হয়। যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব উদ্ধার অভিযান শুরু করা হয়। উদ্ধার অভিযানে নামে ৫টি হেলিকপ্টার। কয়েকটি জাহাজ। এর মধ্যে আবার উদ্ধারকাজে নামানো দুটি ফ্রেইটার জাহাজের ইঞ্জিন যায় বিকল হয়ে। প্রচণ্ড বাতাসের ধাক্কায় উদ্ধার অভিযান ব্যাহত হতে থাকে। দুটি উদ্ধারকারী  হেলিকপ্টারের গতিপথ বাধ্য হয়ে পরিবর্তন করে দেয়া হয়।

শনিবার ভয়াবহ এ অবস্থার সৃষ্টি হয় নরওয়ের পশ্চিম উপকূলে। এ সময় চারদিকে ভয়াবহ এক আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। আরেকটি টাইটানিক দৃশ্য  চোখের ওপর ভাসতে থাকে সবার। এমন অবস্থায় নরওয়ের মোরে ওগ রোমসডাল কাউন্টির পুলিশ বলেছে, এমভি ভাইকিং স্কাই জাহাজের ইঞ্জিন বিকল হয়ে গিয়েছিল। এতে তখন ১৩০০’র মতো মানুষ ছিলেন। ক্যাপ্টেন বিপদসংকেত পাঠানোর পর উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এতে থাকা লোকজনকে উদ্ধার কাজ চলছিল বলে জানানো হয়েছে। উদ্ধার কাজে অংশ নেয়া একটি ফ্রেইট- হ্যাগল্যান্ড ক্যাপ্টেনের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। প্রচণ্ড বাতাস আর উত্তাল ঢেউয়ের কারণে এমনটা ঘটেছে। একই কারণে এমভি ভাইকিং স্কাইয়ের যাত্রীদের উদ্ধারে নামানো দুটি হেলিকপ্টারকে তাৎক্ষণিকভাবে হ্যাগল্যান্ড ক্যাপ্টেনের নাবিকদের উদ্ধারে গতিপথ পাল্টে দেয়া হয়। নরওয়ের স্থানীয় সময় বিকাল ২টার দিকে এমভি ভাইকিং স্কাই থেকে বিপদসঙ্কেত পাঠানো হয়। বলা হয়, এর ইঞ্জিন বিকল হয়ে গেছে। এতে জাহাজটি বিক্ষিপ্তভাবে ঢেউয়ের ওপর দুলছিল কলার খোসার মতো। সৌভাগ্য যাত্রীদের এবং জাহাজটির যে, এ সময় তা ডুবে যায় নি। তাহলে সত্যি সত্যি আরেকটি টাইটানিক ট্র্যাজেডির সৃষ্টি হতো নরওয়ের পশ্চিম উপকূলে।

অনেকটা পরে এমভি ভাইকিং স্কাইয়ের একটি ইঞ্জিন সচল হয়। ফলে তা খুব ধীরগতিতে উপকূলের কিছুটা কাছাকাছি আসতে সক্ষম হয়। সেখানে উদ্ধার কাজ চলছিল। ওই জাহাজে ছিলেন জন কারি নামে এক ব্যক্তি। তাকে হেলিকপ্টারে উদ্ধারের পর এনআরকে টেলিভিশনকে তিনি বলেছেন, তখন আমরা মধ্যাহ্নভোজে ছিলাম। অকস্মাৎ দুলতে শুরু করলো জাহাজ। জানালার কাঁচ ভেঙে গেল। তার ভেতর দিকে প্রচণ্ড বাতাসের সঙ্গে জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রবেশ করতে শুরু করলো পানি। আর চারদিকে তখন এক ভয়ঙ্কর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। মানুষ জীবনের মায়ায় চারদিকে দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। ভয়ে বুক শুকিয়ে যায় সবার। চোখ-মুখ শুকিয়ে পাথরের রূপ ধারণ করে। যেন বিস্ফোরিত হয়ে কোটর থেকে  বেরিয়ে আসছে চোখ।

 হেলিকপ্টারে উদ্ধার করা হয়েছে জ্যানেট জ্যাকব নামে একজনকে। তিনি বলেছেন, আমার জীবনে এত ভয়াবহতার মুখোমুখি কখনো হই নি। আমি তো প্রার্থনা শুরু করেছিলাম। প্রার্থনা করছিলাম জাহাজে থাকা প্রতিজন মানুষের নিরাপত্তার জন্য। এর মধ্যে হেলিকপ্টার এলো উদ্ধার করতে। তাতে যখন তোলা হলো সেই ট্রিপও ছিল ভয়াবহ।
এমভি ভাইকিং স্কাই যখন এমন বিপদে পড়ে তখন এর কাছেই ছিল মাছধরা বোট। জান এরিক নামে একজন জেলে তার বোট নিয়ে প্রথম উদ্ধার অভিযান শুরু করেন। তিনি আফটেনপোস্টেন পত্রিকাকে বলেছেন, সৌভাগ্য সবার। ভয়াবহ এক পরিণতি থেকে রক্ষা পেয়েছেন জাহাজের মানুষগুলো। যদি ইঞ্জিন সচল না হতো তাহলে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই তা পাথরের ওপর আছড়ে পড়তো। আর তাতে ঘটে যেতো সেই টাইটানিকের মতো হৃদয়বিদারক ঘটনা।

স্থানীয় সময় রাত ১০টা ৪০ মিনিট নাগাদ জাহাজটি থেকে ১৫৫ জনকে উদ্ধার করে তীরে আনা হয়েছে। এর মধ্যে আটজন আহত হয়েছেন। তার মধ্যে তিন জনের অবস্থা গুরুতর। এনআরকে’র মতে, জাহাজটির যাত্রীদের বেশির ভাগই বৃটিশ ও আমেরিকান। সমুদ্র উদ্ধার বিষয়ক সার্ভিসগুলো বলেছে, জাহাজটি বিপদমুক্ত আছে এবং উদ্ধার অভিযান চলছিল।

নরওয়ের আবহাওয়া বিষয়ক ইনস্টিটিউট বলেছে, ১০ মিটারের চেয়েও উঁচু ঢেউ ঘটনার সময় ওই সমুদ্রে উত্তাল মৃত্যুকূপ তৈরি করে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status