এক্সক্লুসিভ

মেয়র আরিফের মুখ বন্ধ

সিলেটের খাসদবির পয়েন্ট: অনেক প্রশ্ন

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

২৪ মার্চ ২০১৯, রবিবার, ৭:৫০ পূর্বাহ্ন

দেখলেই চোখ আটকে যায়। রাস্তা সরু হয়ে এসেছে। বাঁকা জায়গা বাঁকাই রইলো। এর মধ্যে ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রশ্ন জেগেছে- এটা কী সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর কাজ। যেখানে সব জায়গায় রাস্তা বড় হচ্ছে, তবে কেন ওখানে রাস্তা ছোটো রেখেই ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রশ্নের উত্তরও জানেন না সিলেট নগরীর খাসদবিরের মানুষ। এ কারণে ক্ষুব্ধ তারা। দৃশ্যপট সিলেট নগরীর ভিআইপি রুটের খাসদবির পয়েন্ট। বিমানবন্দর থেকে সিলেট নগরীতে প্রবেশের পথ এটি।

এই সড়কটি ৬ লেনে রূপান্তর করার প্রস্তাব রয়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনের উন্নয়ন তালিকায়। এরপরও এই সড়কে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার ড্রেন নির্মাণ করছে সিটি করপোরেশন। এই উন্নয়ন কাজের টাকা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চৌকিদেখি, খাসদবির, আম্বারখানা হয়ে যে সড়কটি সার্কিট হাউজে গেছে সেটি সিলেটের ভিআইপি রুট হিসেবে পরিচিত। সিলেটের প্রায় সব রুট থেকে এই রুটটি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রীসহ যত ভিভিআইপিরা সিলেটে আসেন তারা ব্যবহার করেন এই সড়কটি। কিন্তু মাত্র দুই লেনের সড়ক হওয়ার কারণে অসহনীয় যানজটে নাকাল অবস্থা এই সড়কের। ফলে প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবি হচ্ছে- এই সড়কটিকে চার কিংবা ৬ লেনে রূপান্তর করা।

এই অবস্থায় সিলেট সিটি করপোরেশন বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এই সড়কটির দুই পাশে প্রায় ১ হাজার ৬০০ মিটার আরসিসি ড্রেন নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। ওই প্রজেক্ট প্রধান ইঞ্জিনিয়ার সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন- প্রায় ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ওই সড়কের খাসদবির এলাকায় ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে। নতুন করে সময় বর্ধিত করা হবে বলে জানান তিনি। এদিকে- খাসদবির পয়েন্টে গিয়ে ড্রেন নির্মাণ কাজে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে প্রায় ৫ ফুট জমি অধিগ্রহণ করে মন্তু মিয়া বাড়ির সামনে রাস্তার ড্রেন নির্মাণের জন্য মার্ক করে দেন।

কিন্তু পরবর্তীতে পুরাতন ড্রেনের উপর নতুন করে ড্রেন নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। এতে আপত্তি তুলেন স্থানীয় খাসদবির এলাকাবাসী। তারা জানান- মরহুম মন্তু মিয়ার বাড়ির সামনে যে মাজার আছে সেটি কার মাজার চিহ্নিত নয়। অথচ একটি মাজারের অজুহাত তুলে রাস্তা প্রশস্তকরণের জন্য জমি ছাড়া হচ্ছে না। এ নিয়ে তারা সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে বিষয়টি জানান। গত বৃহস্পতিবার মেয়র নিজেও ওই এলাকা পরিদর্শনে যান। এ সময় আরিফুল হক চৌধুরী জানান- রোডস জমি সার্ভে করে তারা ভূমি বের করলে এখানে চত্বর নির্মাণ করা হবে। একই সঙ্গে রাস্তা প্রশস্তকরণ করা হবে। মেয়রের এই কথায়ও আশ্বাস মিলছে না। কারণ- কাজ বন্ধ না রেখে তড়িঘড়ি করে ওই এলাকায় ড্রেন নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ করা হয়েছে। গতকাল মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন- ভিআইপি রুটের ওই পয়েন্ট এভাবে ছোটো থাকবে না। এটিকে ভেঙ্গে নতুন করে বড় করা হবে। এর জন্য নতুন করে রোডস জমি সার্ভে করবে বলে জানান তিনি। খাসদবির পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি হাজী ইসরাইল মিয়া জানিয়েছেন- যে কাজ করা হচ্ছে তাতেই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে ওই এলাকা।

রাস্তায় বিপজ্জনক বাঁক ও সরু থাকার কারণে প্রতিদিনই এখানে দুর্ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে আমরা মেয়রের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু কাজ হয়নি, তড়িঘড়ি করে ওই এলাকার কাজ শেষ করা হয়েছে। তিনি বলেন- ওখানে যে মাজার রয়েছে সেটি নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। এরপরও মাজার রেখেই রাস্তা বড় করা সম্ভব। কিন্তু সেটি কার স্বার্থে করা হচ্ছে না এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। খাসদবির মসজিদ কমিটির মোতাওয়াল্লি সৈয়দ এহিয়া হোসেন জানিয়েছেন- মেয়রের অনুরোধের পর আমরা বিল্ডিং ভেঙ্গে রাস্তা বড় করেছি। এখন সে স্থানে ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু ওই একটি বাড়ির কাছে এসে মেয়র কোনো কথা বলেন না। এ নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ বিরাজ করছে বলে জানান তিনি। বিমানবন্দর সড়ক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হুমায়ূন আহমদ মাসুক জানিয়েছেন- ভিআইপি সড়কটি চার কিংবা ছয় লেনে করার প্রস্তাব এসেছে। এটি মন্ত্রী মহোদয়ের বিবেচনায় আছে। যদি রাস্তা চার কিংবা ছয় লেন হয় তাহলে এই ড্রেনের কোনো গুরুত্ব থাকবে না। এই টাকা অপচয় করা হচ্ছে। তিনি বলেন- এরপরও আমরা নিজ উদ্যোগে জমি ছেড়ে দিচ্ছি।

কিন্তু মন্তু মিয়ার বাড়ির সামনে যে জমি আছে সেটি রক্ষা করতে রাস্তার আকার ছোটো করা হচ্ছে। এতে করে গুরুত্বপূর্ণ খাসদবির পয়েন্ট দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন- খাসদবির পয়েন্টে জামে মসজিদ ও প্রাইমারি স্কুল রয়েছে। এ কারণে যানজট নিত্যসঙ্গী। আবার রাস্তা ছোটো হওয়ার কারণে এই এলাকায় প্রতিদিনই দুর্ভোগে পড়ছেন এলাকাবাসী। স্থানীয় ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম জানিয়েছেন- মাজার এবং যে দোকানপাট রয়েছে সেটি মরহুম মন্তু মিয়ার মৌরসী সম্পত্তিতে রয়েছে। এরপরও আমরা ৪ থেকে ৫ ফুট জমি অধিগ্রহণ করে ড্রেন নির্মাণ করছি। কিছু মানুষ বিষয়টিকে নিয়ে জল ঘোলা করার প্রয়াস চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়- গত বৃহস্পতিবার খাসদবির পয়েন্টের ড্রেন নির্মাণের কাজ নিয়ে সিটি করপোরেশনের নিয়মিত মাসিক বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এই কাজ নিয়ে পার্শ্ববর্তী ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা প্রশ্ন তুললেও ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তার যুক্তি খণ্ডন করেন। ৪নং ওয়ার্ডের ভিআইপি এলাকায় রাস্তার পরিসর আরো ছোটো আছে বলে দাবি করেন তিনি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status