শেষের পাতা

সুহেল ও আব্দালকে নিয়ে সিলেটে জল্পনা

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

২২ মার্চ ২০১৯, শুক্রবার, ৯:৪০ পূর্বাহ্ন

২০১৪ সালের উপজেলা নির্বাচনে বিশ্বনাথে সুহেল আহমদ চৌধুরী ও বালাগঞ্জে আব্দাল মিয়াকে নিয়ে বাজি ধরেছিলেন তাহসিনা রুশদীর লুনা। স্বামী ইলিয়াস আলী নিখোঁজের পর এটি ছিল তার প্রথম পরীক্ষা। নিজেও প্রচারণায় নেমেছিলেন ওই দুই প্রার্থীর পক্ষে। এতেই সফলতা পেয়েছিলেন সুহেল ও আব্দাল। দু’জনই নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর আসনে আওয়ামী লীগের কর্তৃত্ব থেকে বিজয় ছিনিয়ে আনেন। কিন্তু ৫ বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বদলে গিয়েছিলেন সুহেল ও আব্দাল। বিএনপি কিংবা এম ইলিয়াস আলীর পরিবারের নিষেধে তারা কর্ণপাত করেননি। সবার মতামত উপেক্ষা করে এবারের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু জয় তাদের ভাগ্য জুটলো না। আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের কাছে  শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করেন দুই প্রার্থী।

উপজেলা নির্বাচনের পর এখন গোটা সিলেটের বিএনপিতে তাদের নিয়ে চলছে আলোচনা। কেউ কেউ বলছেন- লোভ সামলাতে না পেরে তারা প্রার্থী হয়েছিলেন। অতি লোভের কারণেই এমনটি ঘটেছে। এখন দাবি উঠেছে- তাদের দলে আর না ফেরানোর জন্য। কারণ তারা দলে ফিরলে ক্ষোভ বাড়ার আশঙ্কা করছেন নেতারা। সুহেল আহমদ চৌধুরী বিশ্বনাথের রাজনীতিতে ছিলেন অখ্যাত ব্যক্তি। ইলিয়াসের জমানায় লন্ডন থেকে সিলেটে ফিরে তিনি উপজেলা নির্বাচনের প্রস্তুতি নেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ইলিয়াস পরিবারের উপর ভরসা করে তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। জনগণ তাকে হতাশ করেনি।

ওই নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রার্থী আলহাজ পংকি খানকে পরাজিত করে জয়লাভ করেন। এবারের নির্বাচনে বিএনপি ঘোষণা দিয়ে অংশগ্রহণ করেনি। ইলিয়াস পরিবার আগেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। কিন্তু সরে দাঁড়াননি বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরী। তিনি বিএনপি কিংবা ইলিয়াস পরিবারের বারণকে অগ্রাহ্য করে নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনী প্রচারণার মাঝামাঝি সময়ে এসে দেখেন তিনি একা। তার সঙ্গে নেই সিনিয়র বিএনপি নেতারা। নির্বাচনে সুহেল আহমদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ প্রার্থী এসএম নুনু মিয়ার কাছে ১৩ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন। নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুনু মিয়া পেয়েছেন ৩১,৫১২ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী সুহেল আহমদ চৌধুরী পেয়েছেন ১৮,৫৯৬ ভোট। বিশ্বনাথে ভোটার উপস্থিতি তেমনটি ছিল না।

বিএনপির বেশির ভাগ ভোটার নির্বাচনে আসেনি। এমনটি স্বীকার করেছেন বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক লিলু মিয়া। তিনি গতকাল মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ‘বিএনপি এবারের নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় বিশ্বনাথের কেন্দ্রগুলোতে ভোটারের উপস্থিতি ছিল কম। জনগণ প্রার্থী তো দূরের কথা এই নির্বাচনই বর্জন করেছে। আমরাও নির্বাচনে ছিলাম না।’ সুহেল আহমদ চৌধুরী বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়ার পর তাকে সিলেট জেলা বিএনপির সহসভাপতি পদ দেয়া হয়েছিল। দলের সিদ্ধান্ত না মেনে তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কারণে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে।

এদিকে- বালাগঞ্জের আব্দাল মিয়াকে নিয়েও ২০১৪ সালের নির্বাচনের বাজি ধরেছিলেন ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা। তখন বালাগঞ্জের উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন মোস্তাকুর রহমান মফুর। আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় এ নেতাকে পরাজিত করে বিএনপির আব্দাল মিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়া ছিল চমক। এই চমকে জয় হয়েছিল লুনারও। এদিকে এবারের উপজেলা নির্বাচনেও দলীয় এবং ইলিয়াস পরিবারের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছিলেন আব্দাল মিয়া। তার সঙ্গে কেবল সক্রিয় ছিলেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান। আর কোনো নেতা তার পক্ষে ভোটের মাঠে সক্রিয় হননি। এ কারণে এবার প্রায় ১৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে সেই মফুরের কাছেই পরাজিত হলেন আব্দাল মিয়া।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বালাগঞ্জ থেকে ওসমানীনগর আলাদা হওয়ার পর আব্দাল মিয়া হয়ে যান ওসমানীনগরের বাসিন্দা। এরপরও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। এবারের নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের মোস্তাকুর রহমান মফুর পেয়েছেন ২৫,৩৮৪ ভোট। আর প্রতিদ্বন্দ্বী আব্দাল মিয়া পান ৮,০৮৮ ভোট। বালাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামরুল হুদা জায়গীরদার জানিয়েছেন, ‘বালাগঞ্জে বিএনপির কেউ নির্বাচনে ছিল না। দল নির্বাচনে না আসায় আমরা কেন্দ্রে যাইনি। কে প্রার্থী হয়েছিলেন সেটিও আমরা জানি না।’
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status