দেশ বিদেশ

খালেদা জিয়াকে হত্যা করতে উন্মত্ত হয়ে উঠেছে সরকার: রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার

২২ মার্চ ২০১৯, শুক্রবার, ৯:৩৪ পূর্বাহ্ন

 বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হত্যা করতে বর্তমান গণবিচ্ছিন্ন অবৈধ সরকার উন্মত্ত হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। গতকাল নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, চারদিন পরেই মহান স্বাধীনতা দিবস। হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়ে যিনি এই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে জীবন মৃত্যুকে পরম ভৃত্য করে রণাঙ্গনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, যার ঘোষণায় গোটা জাতি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল; সেই বীর উত্তম শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে হত্যা করতে উন্মত্ত হয়ে উঠেছে বর্তমান গণবিচ্ছিন্ন অবৈধ সরকার। আজ আর দেশের মানুষের বুঝতে এতটুকু বাকি নেই যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চরম প্রতিহিংসার বাসনা চরিতার্থ করতে পেয়ে বসেছে। তিনি পরিত্যক্ত অন্ধকার স্যাঁতসেঁতে কারাগারে ভয়াবহ অসুস্থ দেশনেত্রীর যন্ত্রণার ছটফটানি দেখে আনন্দ উপভোগ করছেন।
 রিজভী বলেন, আজ দিবালোকের মতো পরিষ্কার যে- তিনি (প্রধানমন্ত্রী) অকল্পনীয় জনপ্রিয় দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে জীবিত দেখতে চান না। খালেদা জিয়াকে তার ইচ্ছামাফিক বিশেষায়িত হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়ার দাবি জানিয়ে রিজভী বলেন, চিকিৎসার অভাবে গুরুতর অসুস্থ ৭৪ বছরের একজন নারী খালেদা জিয়াকে প্রহসনমূলক বিচারের জন্য কারাগারে স্থাপিত শেখ হাসিনার ক্যাঙ্গারু আদালতে টেনে-হিঁচড়ে প্রায় প্রতিদিনই হাজির করা হচ্ছে। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার বিবরণ দিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশনেত্রীকে চলৎশক্তিহীন করার জন্য তার সুচিকিৎসা করানো হচ্ছে না। আদালতে আনার আগে তিনি অসুস্থতায় থরথর করে কাঁপছিলেন। বারবার বমি করছিলেন। মাথা সোজা রাখতে পারছিলেন না। মরণাপন্ন অবস্থার মধ্যে টেনে নিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যই দেশনেত্রীকে কোনো চিকিৎসা না দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জোর জবরদস্তি করে হুইলচেয়ারে বসিয়ে হাজির করা হয় ক্যাঙ্গারু কোর্টে। গত পরশু আদালতে এনে বেগম জিয়াকে বসিয়ে রাখার পর তিনি চোখ মেলতে পারছিলেন না। মাথা স্থির রাখতে পারছিলেন না। বারবার মাথা কাত হয়ে যাচ্ছিল। আদালতে উপস্থিত আইনজীবীরাও তার এই অসুস্থ অবস্থা দেখে বিচলিত হয়ে পড়েন। রিজভী বলেন, কতটা অমানবিক, নিষ্ঠুর ও হিংসুক হলে একজন বৃদ্ধ নেত্রীর ওপর এমন নির্যাতন চালানো সম্ভব? কতটা নিষ্ঠুর হলে প্রৌঢ় মহীয়সী নারীর ওপর এমন বর্বর নিপীড়ন চালানো সম্ভব হয়? দেশের প্রতিটি সচেতন মানুষ এখন প্রশ্ন করছেন- কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ কি এতটা নির্মম-নির্দয় হতে পারেন? প্রধানমন্ত্রীর কথা ও কাজের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন- আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা, আমার ক্ষমতার দরকার নেই। আবার মিডনাইট নির্বাচনের মাধ্যমে অবৈধ প্রধানমন্ত্রিত্ব ধরে রাখেন। তিনি তো নৃশংসতায় হিটলার-হালাকু খানদের ছাড়িয়ে গেছেন। তিনি বলেন, এখন উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হতে নৌকা প্রতীক লাগে, জনগণের ভোট লাগে না। কারণ, অলিখিত বাকশাল তো এখনও চলছে। সেই সঙ্গে আছে বাকশালের রক্ষীবাহিনীও। দেশে এখন শুধুমাত্র একদল নয়, এক ব্যক্তির বেপরোয়া শাসন চলছে। কেবল প্রধানমন্ত্রী যা চাইবেন তাই হবে। রিজভী বলেন, চোখ কান খোলা রেখে জনগণের দিকে তাকিয়ে দেখুন তারা কি চাচ্ছে। তাদের ফুঁসে ওঠার সময় এসেছে। বেগম খালেদা জিয়া এখন প্রতিটি মানুষের ভালোবাসা। গণতন্ত্রের মায়ের জন্য তার আন্দোলনরত সন্তানরা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত হয়ে আছেন। সরকারের বিরুদ্ধে অভিমান, ক্ষোভ ও বিদ্রোহের জন্য জনগণ অগ্নিগর্ভ হয়ে আছে। যেকোনো সময় জনতার বিস্ফোরণ শুরু হবে- যা কল্পনাও করতে পারছেন না। তাই সরকারকে বলছি- আজই নিজেদের শোধরান। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন। বিএনপির এই নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার বিকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বলেছেন, শেখ মুজিবুর রহমান প্রবর্তিত বাকশাল কার্যকর থাকলে নির্বাচন নিয়ে কোনো বিতর্ক থাকতো না, প্রশ্ন উঠত না। বাকশাল ছিল সর্বোত্তম পন্থা। প্রধানমন্ত্রী এতদিন পর খোলস ছেড়ে আসল রূপে বেরিয়ে এসেছেন। গণতন্ত্র-গণতন্ত্র বলে কথার কুহেলিকা ভেদ করে প্রধানমন্ত্রীর গণবিরোধী নাৎসিবাদের মূল চেহারাটা জনগণের নিকট উন্মোচিত হলো। অনেকদিন পর প্রধানমন্ত্রী তার আসল রাজনৈতিক বিশ্বাসটি প্রকাশিত করলো। রিজভী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ধৈর্যের একটা সীমা আছে। জনগণের ধৈর্য ও সহ্যের বাঁধ ভেঙে গেছে। সরকার যেন নিজেদেরকে অশুভ পরিণতির দিকে ঠেলে না দেয়। মিডনাইট ভোট ডাকাতির পর গোটা দেশের ভোট বঞ্চিত মানুষ এমনভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে আছে যে, গণবিস্ফোরণ শুরু হলে গণভবনের ইট পাথরও থাকবে না। জনগণ কতটা ঘৃণা করছে এই সরকারকে তার সামান্য প্রমাণ হচ্ছে উপজেলা নির্বাচনে ভোটাররা ভোট দিতে না এসে নীরব প্রতিবাদ করছে। ভোট কেন্দ্রে এখন কুকুর-বিড়াল আর পুলিশ ছাড়া কেউ আসছে না। মাংস-খিচুড়ি খাইয়েও ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনতে পারছে না ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status