এক্সক্লুসিভ

হুইলচেয়ারে বসে আন্দোলনের নেতৃত্বে উজ্জ্বল

স্টাফ রিপোর্টার

২১ মার্চ ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৯:৫২ পূর্বাহ্ন

পিচঢালা সড়ক। মাথার ওপর তপ্ত সূর্য। তীব্র রোদ। এরই মাঝে আন্দোলনে শামিল শিক্ষার্থীরা। ওয়েদার ডট কম’র হিসাব অনুযায়ী গতকাল বুধবার সারাদিন তাপমাত্রা ছিল ৩৩ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই গরমেও হার মানেননি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। উজ্জ্বল বৈদ্য। শক্তি নেই হাঁটার। হুইলচেয়ার তার সঙ্গী। তিনি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। অধ্যয়নরত আছেন মাল্টিমিডিয়া অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি ডিপার্টমেন্টের পঞ্চম সেমিস্টারে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবি ও মঙ্গলবার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালের শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরীর হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলন করেন। গতকাল বুধবার ধানমণ্ডি ২৭ থেকে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করেন। এই অবরোধ ও আন্দোলনের মধ্যমণি হয়ে ছিলেন হুইলচেয়ারকে সঙ্গী করে চলা উজ্জ্বল বৈদ্য।

‘উই ওয়ান্ট জাস্টিজ’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিজ’ এই ধ্বনিতে প্রকম্পিত হতে থাকে ধানমণ্ডির সড়কটি। এ ছাড়াও শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে থাকেন ‘রাস্তায় এমন মানুষ মরে, প্রশাসন কি করে?’, ‘নিরাপদ সড়ক চাই’, ‘আমার ভাইয়ের হত্যাকারীর ফাঁসি চাই দিতে হবে’, ‘আমার ভাই মরলো কেন? বিচার চাই বিচার চাই’, ‘আমার বাবার কান্না কেন? বিচার চাই বিচার চাই’, ‘আমার মায়ের কান্না কেন? বিচার চাই বিচার চাই’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেবো না’ ইত্যাদি। এই পুরো সময়ে শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। আর উজ্জ্বল বৈদ্য পুরো সময়টিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে দিতে থাকেন স্লোগান। গতকাল বুধবার সকাল ১০টা থেকেই উপস্থিত হতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।

ক্যাম্পাসের সামনে সারিবদ্ধভাবে স্লোগান দিতে থাকেন তারা। এরপর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী দুপুর ১১টার দিকে ধানমণ্ডি ৩২ থেকে একটি মিছিল ধানমণ্ডি ২৭-এ আসে। করে সড়ক অবরোধ। তারা ধানমণ্ডি ২৭ থেকে ধানমণ্ডি ৩২মুখী অংশটি অবরোধ করে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে এই সড়কমুখী যানবাহনগুলো ঝিগাতলা সড়ক দিয়ে চলাচল করে। ধানমণ্ডি ২৭ থেকে ধানমণ্ডি ৩২মুখী অংশটি ছিল খোলা। এসময় শিক্ষার্থীরা বেশ কয়েকটি বাসের চালকের লাইসেন্স যাচাই করেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন বাসে থাকা ‘হাফ পাশ নাই’ লেখা স্টিকার ছিঁড়ে ফেলেন। সেই সঙ্গে বাসে থাকা শিক্ষার্থীদের কাছে অর্ধেক ভাড়া নেয়া হয়েছে কিনা জানতে চান। বেশ কিছু বাসে অর্ধেক ভাড়া না নেয়ায় অভিযোগ মেলে। তখন তারা সুপারভাইজারের কাছে সেই অর্থ ফেরত নিয়ে সেইসব শিক্ষার্থীদের দিয়ে দেন।

আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীরা বেশ সজাগ ছিলেন এম্বুলেন্স, শিক্ষার্থীদের পরিবহনসহ জরুরি পরিবহনের বিষয়ে। এসব পরিবহনের জন্য তারা সড়ক ছেড়ে দেন। আবার খোলা সড়কের অংশটিতে করেন ইমারজেন্সি লেন। এই লেনে চলাচল করে জরুরি পরিবহন। এ ছাড়াও বাকি অংশ দিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে গাড়ি চলাচলে বাধ্য করা হয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হাতে শোভা পায় নানা ধরনের প্ল্যাকার্ড। যাতে লেখা ছিল ‘আর কত?’, ‘হয়তো হবো দীর্ঘশ্বাস, নয়তো ইতিহাস’, ‘নিরাপদ সড়ক চাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিজ’, ‘একটা জীবন ২০ লাখ, আর কত প্রাণ ঝরলে তোমাদের টাকা ফুরাবে?’ ‘হ্যালো হানি বানি, চলো আইন মানি’, ওস্তাদ সামনে স্টুডেন্ট, জোরে চলেন’, ‘এখন জেব্রা ক্রসিংয়ে মরতে হবে স্টুডেন্টদের?’ ইত্যাদি।

শিক্ষার্থীরা সাত দফা দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। এগুলো হচ্ছে- আবরারের হত্যাকারীর ফাঁসি প্রদান। জাবালে নুর পরিবহন বাতিলকরণ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে বাস স্টপেজ করা। শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়া নিশ্চিত করা। রাস্তায় চেকিং সিস্টেম বন্ধ করা। বাসে চালকের ছবি ও লাইসেন্স প্রদর্শন করা এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ওভারব্রিজ নির্মাণ। আন্দোলনরত দ্বিতীয় সেমিস্টারের সফটওয়্যার ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী হাসিবুল হাসান বলেন, জেব্রা ক্রসিং ব্যবহারের পরেও কেন মরতে হলো আবরার ভাইকে? আমাদের জীবনের কি কোনো মূল্য নেই? আরেকজন শিক্ষার্থী মৃন্ময় চাকমা বলেন, আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে।

প্রশাসনের টনক না নড়া পর্যন্ত চালিয়ে যাবো আমাদের আন্দোলন। ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের অষ্টম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী তুবা জাহান বলেন, আর কত লাশ চাই তাদের? প্রতিদিন লাশের মিছিল। এই মিছিলে যুক্ত হতে দেবো না আর কোনো নতুন নাম। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী এই আন্দোলন দুপুর ৩টায় শেষ করার কথা ছিল। দুপুর ৩টা ২০ মিনিটের দিকে ধানমণ্ডি ২৭ সড়ক ছেড়ে দেয় তারা। এরপর শিক্ষার্থীরা একটি মিছিল নিয়ে উজ্জ্বলের নেতৃত্বে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে আসে। সেখানে আন্দোলন গতকালের মতো শেষ বলে জানানো হয়। এসময় উজ্জ্বল বৈদ্য ঘোষণা দেন, আগামীকাল (আজ) ফের আমরা আন্দোলনে নামবো। সকাল ১০টায়। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা সড়ক ছাড়বো না। এই আন্দোলন আমাদের জীবনের আন্দোলন। এই আন্দোলন নিরাপদ সড়কের আন্দোলন। এই আন্দোলন নিরাপদে বাড়ি ফেরার আন্দোলন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status