দেশ বিদেশ

গণঅনশন থেকে সরকারকে মির্জা আলমগীর

গণতন্ত্রের প্রতীক খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন

স্টাফ রিপোর্টার

২১ মার্চ ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৯:৩৩ পূর্বাহ্ন

বিএনপি চেয়ারপারসন কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে গণতন্ত্রের প্রতীক আখ্যায়িত করে তাকে মুক্তি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, এখনো সময় আছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন। কারণ তিনি গণতন্ত্রের প্রতীক, ১৬ কোটি মানুষের নেত্রী। তিনিই একমাত্র বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে পারবেন এবং আপনাদেরকেও রক্ষা করতে পারবেন। অন্যথায় এদেশের মানুষ অতীতের মতো জেগে উঠলে আপনারা সময় পাবেন না। গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় কেরানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন আয়োজিত গণঅনশনে তিনি এসব কথা বলেন। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বেলা ১১টায় শুরু হয়ে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে এই গণঅনশন।  

কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে সরকার পরিকল্পিতভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে অভিযোগ করে বর্তমান বিচারব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মির্জা আলমগীর। তিনি বলেন, মঙ্গলবার আমি আদালতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। আমি বলে বুঝাতে পারবো না- খালেদা জিয়াকে কখনো এমন দেখিনি। তিনি এতটা অসুস্থ যে, মাথা সোজা করে বসতে পারছিলেন না। তার সমস্ত শরীরে যন্ত্রণা-ব্যথা। তিনি কোনো কিছু খেতে পারছিলেন না। খালেদা জিয়াকে সুপরিকল্পিতভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে কোন রাষ্ট্র, কোন সমাজ তৈরি করেছে বর্তমান সরকার? যেখানে কোনো বিচার নেই, ইনসাফ নেই। কোথাও বিচার পাবেন না। বিচার বলতে সব উঠে গেছে। দুর্ভাগ্য আমাদের যে, সর্বোচ্চ আদালত থেকে নিম্ন আদালত পর্যন্ত আজকে তথাকথিত দখলদার সরকারের নির্দেশে চলে।

খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সারা দেশে আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা আলমগীর বলেন, একই মামলায় সব আসামি জামিন পেলেও দেশনেত্রীর জামিন হয় না। তাই আজকে আর বসে থাকার সুযোগ নেই। এই গণঅনশন ছোট কোনো অনুষ্ঠান নয়। এটা একটা বড় অনুষ্ঠান, বড় আন্দোলন। এটাকে সামনে নিয়েই আমাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। প্রতিটি উপজেলায়, প্রতি জেলায় বিএনপিসহ সমস্ত অঙ্গ সংগঠনকে এই অনশনকে ছড়িয়ে দিতে হবে। তিনি বলেন, আজ এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, আপনারা (সরকার) মানুষের মধ্যে নেই। আপনারা দেউলিয়া হয়ে গেছেন। সে কারণে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে, বন্দুক-পিস্তল দিয়ে ভয় দেখিয়ে, হাজার হাজার মিথ্যা-গায়েবি মামলা দিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে আপনাদের ক্ষমতায় থাকতে হচ্ছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এটা ছোটখাটো সংগ্রাম বা লড়াই নয়। এই লড়াইটা হচ্ছে আমাদের অস্তিত্বের লড়াই। জাতি হিসেবে অস্তিত্বের লড়াই। অনেকে বলেন যে, বিএনপির দুঃসময়ের সংকট। না, এই সংকট পুরো জাতির। আমাদের সমস্ত অর্জনগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে এ সরকার, যা আমরা জাতি হিসেবে অর্জন করেছিলাম। আমরা অর্জন করেছিলাম- আমাদের অধিকার একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বাস করবো, গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় বাস করবো। আমি কথা বলার সুযোগ পাবো, লেখবার সুযোগ পাবো। আজকে সমস্ত অধিকারগুলো কেড়ে নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আজকে আবার সমগ্র দেশের মানুষকে, ভুক্তভোগীদের আহ্বান জানাতে চাই, আসুন আমরা দলমতনির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হই। ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই যে স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকার আমাদের বুকের ওপর বসে আছে, তাকে সরিয়ে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করি। দেশনেত্রীকে মুক্ত করি। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ নির্মাণ করি।’

‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সারা দেশে যে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে, তারই প্রমাণ এটা। এই দখলদার সরকার মানুষকে শান্তি ও জননিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। সর্বত্র দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। আজকে কোনো বিচার নেই। যেখানে পদে পদে ঘুষ দিতে হয়। মির্জা আলমগীর বলেন, আমি কিছুক্ষণ আগে ঢাকা কোর্টে ছিলাম। সেখানে আমাদের অনেক নেতাকর্মী হাজিরা দিতে বা জামিনের জন্য গেছেন। তাদের মধ্যে একজন বলছিলেন, কোথায় কোথায় কত টাকা দিতে হয়। এমনকি জেলখানায় গিয়েও রক্ষা নেই। সেখানে ওয়ার্ডে থাকতে হলে ৪০০-৫০০ করে টাকা দিতে হয়। ভালো খাবার খেতে হলেও তাকে সেখানে টাকা দিতে হয়। কোথাও নিস্তার নেই। প্রতি জায়গায় দুর্নীতি।

সরকারের সমালোচনা করে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বর্তমান সরকার প্রধান ভীত সন্ত্রস্ত। খালেদা জিয়াকে জেলে রাখাটাই একমাত্র তার কাজ নয়। তিনি কখন খবর পাবেন গণভবনে বসে খালেদা জিয়ার জীবনাবসান ঘটেছে, সেইদিন হয়তো স্বস্তি পাবেন, শান্তি পাবেন। সেই কারণেই আমার মনে হয় সরকার পরিকল্পিতভাবে অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। খুব সুস্থ মাথায়, স্থির মাথায় তাকে হত্যার জন্য আজকে যে নীলনকশা তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও প্রতিবাদ আমাদের করতে হবে। তাদের এই ষড়যন্ত্র ধ্বংস না করা পর্যন্ত খালেদা জিয়া শুধু নয় বাংলাদেশের মানুষের কারো জীবন নিরাপদ নয়। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি এখন জাতির জন্য অনিবার্য। এই অনিবার্য কাজটি আমাদের যেকোনো সংকট মোকাবিলা করে করতে হবে। একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা পাওয়া তার মৌলিক অধিকার। কিন্তু পত্রপত্রিকায় আমরা যেসব খবর পাচ্ছি, তিনি শুধু অসুস্থই নন, উনার জীবন সংকটাপন্ন। তারপরও আদালত তাকে ছাড়ছে না। অর্ধমৃত দেহ নিয়ে আদালতে তাকে হাজিরা দিতে হয়। আদালত তার প্রতি ন্যায় বিচারের দৃষ্টান্ত দেখাতে পারছে না। এজন্য নেতাকর্মীদের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানান গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

পাঁচ ঘণ্টার এই অনশনের সমাপ্তি টানেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। কেরানীগঞ্জ (দক্ষিণ) বিএনপির সভাপতি নিপুণ রায় চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোজাদ্দেদ আলী বাবুর পরিচালনায় অনশনে অন্যদের মধ্যে- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম ও ঢাকা জেলা সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু আশফাক বক্তব্য দেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status