ফেসবুক ডায়েরি
ফেসবুকে শিক্ষক
রক্তাক্ত নয় আবরারের ফাগুনের ছবি দিলাম
ফাতেমা তুজ জোহরা
২০ মার্চ ২০১৯, বুধবার, ১১:৫৯ পূর্বাহ্ন
আবরার। সড়ক দুর্ঘটনায় অকালে ঝড়ে যাওয়া তালিকায় আরও একটি নাম। মেধাবী আবরার ডিপ্লোম্যাট হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে পড়ছিল বিইউপিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে। শিক্ষক ফাতেমা তুজ জোহরার ছাত্র আবরার নিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, সবাই রক্তাক্ত আইডি কার্ডের ছবি দিচ্ছে। আমি দিলাম ফালগুনের খুব সুন্দর হাসি খুশি একটি ছবি। ফালগুনের ক্লাসে ও বলেছিল - ‘ম্যাডাম, আমরা আগে কখনো ফালগুন উদযাপন করিনি। এবার খুব ভালো লাগছে।’
ছেলেটি আমার ছাত্র। আবরার নাম। বিইউপিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছিলে।
বাকিদের মতো ও হয়তো হাসি মুখে বলেছিল ‘আমি ডিপ্লোম্যাট হব।’ প্রথম বেঞ্চে বসতো। স্নায়ুযুদ্ধ, উপনিবেশবাদ নিয়ে লেকচার এর সময় আমার আগেই অনেক কিছু পটাপট বলে দিতো। এসির রিমোট নিয়ে বসে থাকতো দেখে বকাও দিয়েছিলাম। ক্লাস টেস্টের খাতা পেয়ে বলেছিলো,‘ম্যাডাম, আমি তো সব পয়েন্ট লিখেছি। আর কি লিখলে আমি দশে দশ পাব!’
আমার আজকে ৮.৩০ এ ক্লাস ছিল ওদের সাথে (মঙ্গলবার)। আমার ক্লাস করার জন্যই ও বাসা থেকে বের হয়েছিল। রাস্তা পার হবার সময় ও কি ভাবছিল জানিনা। কয়েক সেকেন্ড আগেও হয়তো ভাবছিল ক্লাসে গেয়ে প্রথম বেঞ্চে বসবে। বাবা একটু দূরে দাঁড়ানো। নিজের রক্ত পানি করে লালন পালন করা ১৮-১৯ বছরের সন্তানকে বাস চাপা দিয়ে চলে গেল। ১১টায় গেয়ে দেখলাম জেব্রা ক্রসিং রক্তে ভেজা। সবাই যখন ‘ডঊ ডঅঘঞ ঔটঝঞওঈঊ’ বলে স্লোগান দিচ্ছে, ও তখন অন্য জগতে। ও হয়তো জানেও না ওর বন্ধুরা হাউমাউ করে কাঁদছে ওর জন্য।
ওর বন্ধুরা একদিন ব্যাচ ট্যুরে যাবে, পাস করবে, চাকরি করবে, বৃদ্ধ হবে। আবরারের কথা মনে করলে হয়তো এই সুন্দর বাচ্চা ছেলেটির কথা স্মরণ করবে। ওর বয়স বাড়বেনা। ইউক্যামে ওর নাম আর রোল ৫৯ থেকে যাবে। ওর বাবা-মা, ভাই কিভাবে এই শোক নিয়ে বাঁচবে জানিনা। আল্লাহপাক ওনাদের ধৈর্য দান করুক আর আবরারকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসিব করুক। আমীন। ছেলেটির মৃত্যু যন্ত্রণা ভাবলে চোখের পানি আটকানো যাচ্ছে না। আমি কিভাবে ওদের ক্লাস নিব জানিনা।
আগামীকাল আমি বেঁচে থাকব কিনা সেটাও অনিশ্চিত। মৃত্যু এই দেশে খুব সহজ, অনেক বেশি সহজ।
লেখক: শিক্ষক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, বিইউপি
ছেলেটি আমার ছাত্র। আবরার নাম। বিইউপিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছিলে।
বাকিদের মতো ও হয়তো হাসি মুখে বলেছিল ‘আমি ডিপ্লোম্যাট হব।’ প্রথম বেঞ্চে বসতো। স্নায়ুযুদ্ধ, উপনিবেশবাদ নিয়ে লেকচার এর সময় আমার আগেই অনেক কিছু পটাপট বলে দিতো। এসির রিমোট নিয়ে বসে থাকতো দেখে বকাও দিয়েছিলাম। ক্লাস টেস্টের খাতা পেয়ে বলেছিলো,‘ম্যাডাম, আমি তো সব পয়েন্ট লিখেছি। আর কি লিখলে আমি দশে দশ পাব!’
আমার আজকে ৮.৩০ এ ক্লাস ছিল ওদের সাথে (মঙ্গলবার)। আমার ক্লাস করার জন্যই ও বাসা থেকে বের হয়েছিল। রাস্তা পার হবার সময় ও কি ভাবছিল জানিনা। কয়েক সেকেন্ড আগেও হয়তো ভাবছিল ক্লাসে গেয়ে প্রথম বেঞ্চে বসবে। বাবা একটু দূরে দাঁড়ানো। নিজের রক্ত পানি করে লালন পালন করা ১৮-১৯ বছরের সন্তানকে বাস চাপা দিয়ে চলে গেল। ১১টায় গেয়ে দেখলাম জেব্রা ক্রসিং রক্তে ভেজা। সবাই যখন ‘ডঊ ডঅঘঞ ঔটঝঞওঈঊ’ বলে স্লোগান দিচ্ছে, ও তখন অন্য জগতে। ও হয়তো জানেও না ওর বন্ধুরা হাউমাউ করে কাঁদছে ওর জন্য।
ওর বন্ধুরা একদিন ব্যাচ ট্যুরে যাবে, পাস করবে, চাকরি করবে, বৃদ্ধ হবে। আবরারের কথা মনে করলে হয়তো এই সুন্দর বাচ্চা ছেলেটির কথা স্মরণ করবে। ওর বয়স বাড়বেনা। ইউক্যামে ওর নাম আর রোল ৫৯ থেকে যাবে। ওর বাবা-মা, ভাই কিভাবে এই শোক নিয়ে বাঁচবে জানিনা। আল্লাহপাক ওনাদের ধৈর্য দান করুক আর আবরারকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসিব করুক। আমীন। ছেলেটির মৃত্যু যন্ত্রণা ভাবলে চোখের পানি আটকানো যাচ্ছে না। আমি কিভাবে ওদের ক্লাস নিব জানিনা।
আগামীকাল আমি বেঁচে থাকব কিনা সেটাও অনিশ্চিত। মৃত্যু এই দেশে খুব সহজ, অনেক বেশি সহজ।
লেখক: শিক্ষক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, বিইউপি