শেষের পাতা

সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিজয় এনে দিয়েছে

মরিয়ম চম্পা

২০ মার্চ ২০১৯, বুধবার, ৯:৩৪ পূর্বাহ্ন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সংসদ নির্বাচনে সুফিয়া কামাল হলে স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন তানজিনা আক্তার সুমা। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন যৌক্তিক আন্দোলনে তিনি অংশ নিয়েছেন। সাধারণ শিক্ষার্থীরাই তাকে ভোট দিয়ে ভিপি নির্বাচিত করেছেন বলে মনে করেন সুমা। মানবজমিন এর সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, শুরুর দিকে বলতে গেলে ডাকসু’র বিষয়টি ওভাবে মাথায় ছিল না। ডাকসু নির্বাচন হবে কি হবে না এটা নিয়ে একটি দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ছিলাম। আমাদের বন্ধুদের অনলাইনে আলাদা একটি গ্রুপ ছিল। সেখানে হলের বিভিন্ন সমস্যার পাশাপাশি ডাকসু’র বিষয়ে প্রথম দিকে কম-বেশি আলোচনা হতো। আমাদের হলে ক্যান্টিন ও আবাসন সমস্যাসহ অনেক সমস্যা রয়েছে। এই সমস্যাগুলো সমাধান করতে আমাদের প্যানেলের কাছে মনে হয়েছে যে ডাকসুটাই একটি প্ল্যাটফর্ম। যেখানে সবার সমস্যাকে নিজের করে দেখার সুযোগ আছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা মানেই আমরা। এখানে আলাদা করে কিছু দেখার নেই। এই চিন্তাধারা থেকেই নির্বাচনে আসা। আমাদের প্যানেলটির নাম ছিল সুমা-মনিরা স্বতন্ত্র প্যানেল। যেখানে সদস্য সংখ্যা ছিল ৯ জন।

প্রথমদিকে নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে আমাদের কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে। আমরা সবাই নতুন। তার ওপর একা। যেহেতু আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের না। এক্ষেত্রে আমাদের একটু চিন্তা-ভাবনা করেই এগোতে হয়েছে। প্যানেলের সদস্যরা মিলে নিজেরাই নিজেদের কাজগুলো করতাম। নিজেদের ল্যাপটপ নিয়ে নিজেরাই লিফলেট বানাতে বসে যেতাম। টিউশনি ও হাত খরচের টাকা থেকে সঞ্চয়কৃত অর্থ দিয়ে নির্বাচনের খরচ চালানো হতো। দৈনিক অন্তত তিনবার করে হলেও প্রত্যেক মেয়ের রুমে গিয়ে কথা বলেছি। কারণ মুখ না চিনলে তারা আমাদের কেন ভোট দেবেন। কাজেই শিক্ষার্থীদের মনে আস্থা তৈরি করতে তাদের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করে জানানোর চেষ্টা করেছি আমাদের উদ্দেশ্য কি। এবং কোন বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে চাই। আমরা মূলত পুরো প্যানেলটিকেই পরিচিত করাতে চেয়েছি। বোঝাতে চেয়েছি যে, আমরা আপনাদের মতোই সাধারণ শিক্ষার্থী। আমাদের ইশতেহার সর্বপ্রথম অনলাইনে দিয়ে মেয়েদের মতামত নেয়ার চেষ্টা করেছি। ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কথা বলেছে। তাদের মতো করে ইশতেহার তৈরি করেছি। সত্যি বলতে তো ‘তারাই আমরা’।

সুমা বলেন, নির্বাচনের আগের দিন রাত থেকেই আমরা হলের চারপাশে নজর রাখছিলাম। কখন কি হয় এই চিন্তা থেকে। রাত জেগে আমরা পালাক্রমে পাহারা দেয়ার চেষ্টা করেছি। সকাল থেকে নির্বাচন ভালোই চলছিল। এরপর যখন অন্য হলগুলোতে ঝামেলা শুরু হয় তখন আমাদের মনে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়। এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে ম্যামদের সহায়তার ব্যালট বাক্স চেক করতে চাইলে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। পরবর্তীতে পুনরায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। নির্বাচন যেন সুষ্ঠু হয় এটাই আমাদের প্রধান দাবি ছিল। যদিও পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। তবে আমাদের হলের নির্বাচনে আমরা একা ছিলাম না। আমাদের সঙ্গে হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা একত্মতা প্রকাশ করেছে এবং ভোটগ্রহণ থেকে শুরু করে ভোট গণনা ও ফলাফল ঘোষণার পুরো বিষয়টিই সাধারণ শিক্ষার্থীদের সামনে রেখেই করা হয়। বলতে গেলে শিক্ষার্থীরা দাঁড়িয়ে থেকে নিজ দায়িত্বে আমাদের জন্য একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর ফলাফল বয়ে এনেছে। নির্বাচনে আমাদের হল থেকে ভিপি পদে ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। আমার প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ৮শ’ থেকে কিছুটা বেশি। ব্যালট নং-২।   

নির্বাচিত হল সংসদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নির্বাচিত প্রার্থী এবং হল প্রশাসনের মধ্যে একটি জবাবদিহিতার প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা। কারণ আমি যে কাজটি করবো সেটা নিয়ে যদি সাধারণ শিক্ষার্থীদের জবাবদিহিতার একটি নির্দিষ্ট জায়গা না থাকে তাহলে প্রকৃতপক্ষে মনে হয় কাজটি হয় না। সাধারণ শিক্ষার্থীরা যেন বলতে পারে আপনারা এটা করলেন না কিংবা করেছেন এই বিষয়টির একটি প্ল্যাটফর্ম থাকা দরকার। আমাদের ইশতেহারের মূল বিষয় ছিল হলের একটি মাত্র ক্যান্টিন দিয়ে শিক্ষার্থীদের খাবারের চাহিদা মেটানো সম্ভব না। পুরো দুই হাজার শিক্ষার্থীর জন্য আমার মনে হয় না একটি ক্যান্টিন পর্যাপ্ত। এর খাবারের মান নিয়েও সংশয় রয়েছে। তাই খাবারের মানটা যেন আরেকটু উন্নত করা যায়। এবং অবশ্যই সেটা যেন স্বাস্থ্যসম্মত হয়। পাশাপাশি আবাসন সংকটের বিষয়টি সমাধানে জোর দিতে চাই।

আমি মনে করি হলে আবাসন ব্যবস্থা মেধায় নয় প্রয়োজন অনুযায়ী হওয়া উচিত। কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীই মেধাবী। এক্ষেত্রে আমরা যেটা করবো- আগামী জুন মাস নাগাদ যাদের আইডি কার্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে তাদের স্থানে নতুনদের আবাসনের ব্যবস্থা করা। এছাড়া ডাবলিং এর বিষয়টি নিয়েও কাজ করতে চাই। ভবিষ্যতে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করার ইচ্ছা নেই। তবে ডাকসু পুনঃনির্বাচনের বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা যদি চায় তাহলে আমি তাদের সঙ্গে একমত পোষণ করবো।   

ফার্মেসি বিভাগের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী সুমার গ্রামের বাড়ি রংপুরে। বাবা মো. শাহজাহান আলী সরকারি চাকরি করেন। চার বোনের মধ্যে সুমা তৃতীয়। মা শামসুননাহার চম্পা। রংপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং কারমাইকেল কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করেন তিনি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status