শেষের পাতা

সিলেটের ‘ভোটের নায়ক’ ৫ বিদ্রোহী

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

২০ মার্চ ২০১৯, বুধবার, ৯:৩১ পূর্বাহ্ন

সিলেট-৪ আসন। কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর। প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদের নির্বাচনী এলাকা এটি। এই নির্বাচনী আসনের তিনটি উপজেলায় এবার বাজিমাত করলেন বিদ্রোহী প্রার্থীরা। ধরাশায়ী হলেন নৌকার প্রার্থীরা। এভাবে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারে বিদ্রোহীরা চমক দেখিয়েছেন। গোটা সিলেটজুড়ে এখন আলোচিত হচ্ছে এই ৫ বিদ্রোহীর কথা। ভোটের নায়ক হিসেবে পরিণত হয়েছেন তারা। তবে নির্বাচনে জয়লাভ করেও তারা সতর্ক। নির্বাচন পরবর্তী সংঘাত-সহিংসতা এড়াতে তারা করছেন না কোনো বিজয় মিছিল।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে এবার শুরু থেকে ব্যাপকভাবে আলোচনায় ছিলেন বর্তমান চেয়ারম্যান আলহাজ আবদুল বাছিরের ছেলে হাজী শামীম আহমদ। কিন্তু আওয়ামী লীগ থেকে তিনি মনোনয়ন পাননি। এই উপজেলায় মনোনয়ন পান আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। এ কারণে পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী শামীম আহমদ বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ভোটের মাঠে নানা ঘটনা। নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে নিজ পরিবারের বিজয় ধারা অব্যাহত রেখেছেন শামীম আহমদ। নির্বাচনে বিদ্রোহী শামীম আহমদ পেয়েছেন ৩১,৫০০ ভোট আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর আলম পেয়েছেন ২১,৮০০ ভোট।

এদিকে রাতে ফলাফল ঘোষণার পর শামীম আহমদ কোনো ধরনের আনন্দ উল্লাস না করতে নেতাকর্মীদের অনুরোধ জানান। এ কারণে কোম্পানীগঞ্জে কোনো আনন্দ উল্লাস হয়নি। শামীম আহমদ গতকাল মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ‘আমিও আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। নিজেও আওয়ামী লীগের কর্মী। কিন্তু গোটা কোম্পানীগঞ্জের দলমত নির্বিশেষে সব মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। সবার চেয়ারম্যান হয়ে আমি কোম্পানীগঞ্জকে সাজাতে কাজ করবো।’ গোয়াইনঘাটে ভোটের আগে কথা বলেননি বিজয়ী বিদ্রোহী প্রার্থী ফারুক আহমদের ভোটাররা। এই উপজেলায় নীরব ভোট বিপ্লব হয়েছে। বিদ্রোহী ফারুক আহমদ যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।

২০০৮ সাল থেকে তিনি সংসদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন চাচ্ছিলেন। না পেয়ে এবার তিনি উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু উপজেলা নির্বাচনেও তাকে দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। দল থেকে মনোনয়ন পান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া হেলাল। এখানে তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম স্বপন। বিদ্রোহী ফারুক আহমদ নির্বাচনে ৩০,০৭৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। আর প্রতিদ্বন্দ্বী শাহ আলম স্বপন পান ২০,৫৪২ ভোট। জৈন্তাপুরে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুই নেতা। কিন্তু উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কামাল আহমদকে টপকে নৌকার কাণ্ডারি হন সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত আলী। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও উত্তেজনাকর ভোটে প্রায় ১০ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেন বিদ্রোহী কামাল আহমদ। তিনি পেয়েছেন ৩১,১০৬ ভোট। প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী লিয়াকত আলী পান ২১,৯৯৫ ভোট।

কামাল আহমদ ও লিয়াকত আলীর মধ্যে দলীয় ভোটের লড়াইয়ের চেয়ে এলাকাভিত্তিক ভোটের লড়াই হয়েছে। কামালের ভোটের আঘাত করতে না পারার কারণে এবারের নির্বাচনে পরাজয় বরণ করলেন লিয়াকত আলী। কামাল আহমদ জানিয়েছেন- জৈন্তাপুরের মানুষ এবার উন্নয়ন ও অগ্রগতির পক্ষে ভোট দিয়েছেন। এলাকার মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে তিনি নিরলসভাবে কাজ করবেন বলে জানান। সিলেট-৬ আসনের অন্তর্গত বিয়ানীবাজার। এ উপজেলার এমপি হচ্ছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। বিগত ১০ বছর ধরে নাহিদের অংশের নেতাদের ঘোর বিরোধী তরুণ নেতা ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লব। এ কারণে তাকে বিয়ানীবাজারের রাজনীতিতে নানা রাজনৈতিক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হয়। কিন্তু ভোটের মাঠে জনপ্রিয় আবুল কাশেম পল্লব। এবারের উপজেলা নির্বাচনে আবুল কাশেম পল্লব দলের কাছে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ বর্তমান চেয়ারম্যান আতাউর রহমানকে মনোনয়ন দিয়েছে। এতে বিদ্রোহী হন পল্লব। শুধু তিনি নন এ উপজেলায় বিদ্রোহী হন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেনও। নির্বাচনে জয়ের হাসি হাসলেন বিদ্রোহী আবুল কাশেম পল্লব। তার সঙ্গে নৌকার প্রার্থী নয়, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আরেক বিদ্রোহী জাকির হোসেন।

নির্বাচনে বিজয়ী আবুল কাশেম পল্লব পেয়েছেন ২১,৩০০ ভোট। আর প্রতিদ্বন্দ্বী আরেক বিদ্রোহী জাকির হোসেন পান ১১,৯১০ ভোট। এদিকে বিয়ানীবাজারের মানুষ এবার উন্নয়ন ও শান্তির পক্ষে ভোট দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পল্লব। ফেঞ্চুগঞ্জে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন সাংবাদিক শাহ মুজিবুর রহমান জকন। সাবেক এই ছাত্রনেতা বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুল ইসলামের কাছে পরাজিত হয়েছেন। নুরুল ইসলাম সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী নুরুল ইসলাম-১২,৬৬৯ ভোট। আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী ওহিদুজ্জামান চৌধুরী সুফি-৬৬৮৭ ভোট পেয়েছেন। এই ৫ বিদ্রোহী নিয়ে এখন সিলেটে আলোচনা চলছে। ভোটাররা জানিয়েছেন, সিলেটের উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী না থাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা জমেনি। তবে কয়েকটি এলাকায় বিদ্রোহীরা জমিয়ে তুলেছিলেন নির্বাচন। এ কারণে জনরায় তাদের দিকেই গেছে।

এমপির কেন্দ্রে হারলো নৌকা : সিলেট-৩ আসনে এমপির কেন্দ্রে হেরেছে নৌকা। শুধু হারেনি নৌকার চেয়ে বিএনপি নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কেন্দ্রে ৩৮ গুন ভোট বেশি পেয়েছে। আর এ নিয়ে গোটা ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় চলছে আলোচনা-সমালোচনা। তবে এ ভোটের পর প্রকাশ্য মুখ খুলেন নৌকার পরাজিত প্রার্থী শাহ মুজিবুর রহমান জকন। তার সমর্থকরা ক্ষুব্ধ। ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে সংসদ সদস্য মাহমুদুস সামাদ চৌধুরী কয়েসের কেন্দ্র দরগাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নৌকা পেয়েছে ২৭ ভোট। এ কেন্দ্রে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী ওহিদুজ্জামান ছুফি পেয়েছেন ১০৩৩ ভোট। স্থানীয়রা বলছেন- আত্মীয়তার সূত্রে পারিবারিক সম্পর্কে এই কেন্দ্রে সুফির পক্ষেই গেছে সব ভোট। বিদ্রোহী নুরুল ইসলামকে আটকাতেও এ প্রক্রিয়া হয়েছে বলে জানান তারা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status