দেশ বিদেশ

কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাচন যেন নৌকা আর মন্ত্রীর লড়াই

ইকবাল আহমদ সরকার, গাজীপুর থেকে

২০ মার্চ ২০১৯, বুধবার, ৯:১০ পূর্বাহ্ন

আগামী ২৪শে মার্চ অনুষ্ঠিতব্য গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি। যিনি চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে আনারস প্রতীক নিয়ে লড়ছেন, তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সমর্থিত ও আস্থাভাজন প্রার্থী হিসেবে প্রচার রয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের সব ইউনিটের নেতৃবৃন্দের প্রতি আনারস প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে মন্ত্রীর নির্দেশ রয়েছে বলে প্রচার রয়েছে এলাকায়। বিভিন্ন পর্যায়ের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, এমনকি কর্মী-সমর্থকদের বক্তব্য ও প্রচারে এলাকাবাসীর অনেকের ধারণা হয়েছে, এই নির্বাচনে নৌকা আর মন্ত্রীর লড়াই। উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির আনারস প্রতীকের পক্ষে নেমে কোনো কোনো নেতা বলছেন, মন্ত্রীর নির্দেশেই তারা কামাল সিকদারের পক্ষে নির্বাচনে নেমেছেন। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর বিরুদ্ধে নৌকার প্রার্থীর রয়েছে অনেক অভিযোগ। দলীয় ভোটারদের মাঝেও ভয়-ভীতি আর বিভ্রান্তি রয়েছে। ভয়ে-শঙ্কায় আছেন। তাদের ভাষায় দলের আর মন্ত্রীর আলাদা প্রার্থী নিয়ে রয়েছে অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগ। অবশ্য দলীয় সিদ্ধান্তে বিএনপি-জামায়াতের কেউ প্রার্থী হননি এবারের নির্বাচনে, নেই জাতীয় পার্টি কিংবা অন্য কোনো দলের চেয়ারম্যান প্রার্থী। এরই মধ্যে জমে ওঠেছে ক্ষমতাসীন দলের দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী ও ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। দু’জন চেয়ারম্যান প্রার্থী একজন করে ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানকে সমর্থন দিয়ে যেন প্যানেল বানিয়েছেন। প্রার্থীগণ নানা প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি নিয়ে ভোটারদের কাছে ছুটে গেলেও ভোটাররা বলছেন, কেবল প্রতীক বা দল দেখে নয়, সৎ ও যোগ্য প্রার্থীদেরই নির্বাচিত করতে চান তারা।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চাওয়া, অতীতের নানা কর্মকাণ্ড ও অনেক ইস্যুতে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক নেই দলের মনোনয়ন পাওয়া উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রাসেলের। তবু রেজাউল করিম রাসেল নৌকা প্রতীক আনতে সক্ষম হয়েছেন কেন্দ্র থেকে। আর স্থানীয় সংসদ সদস্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সমর্থকরা একাট্টা হয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন বিদ্রোহী প্রার্থী কামাল উদ্দিন সিকদারের পক্ষে। আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী রেজাউল করিম রাসেলের অভিযোগ, এলাকার মানুষের ভালোবাসায় নির্বাচনী মাঠে তিনি এগিয়ে থাকলেও দলীয় মনোনয়ন ও নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমেই নানা প্রতিকূলতার মধ্যে পড়ছেন তিনি নিজে ও তার কর্মী-সমর্থকরা। আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজাউল করিম রাসেলের অভিযোগ, দলের অপর চেয়ারম্যান প্রার্থীর লোকজনরা প্রচারে নেমে বলছেন, এই নৌকা সংসদ নির্বাচনের নৌকা নয়, এই নৌকা আওয়ামী লীগের নৌকা নয়, এই নৌকা মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের নৌকা নয়, এমন বক্তব্য দিয়ে তারা আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের-ভোটারদের বিভ্রান্ত করছেন। তিনি অভিযোগে জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি কামাল সিকদার (আনারস)-এর লোকজন এরই মধ্যে ফুলবাড়িয়াসহ বিভিন্নস্থানে নৌকার কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে আহত করেছে। উপজেলার রতনপুরসহ কয়েকটি স্থানে নির্বাচনী অফিস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের দোহাই দিয়ে, নাম ভাঙিয়ে আরো অফিস বন্ধ করার নির্দেশ দিচ্ছে। যারা এই নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করবে, তাদের পদ-পদবি নির্বাচনের পর কেড়ে নেয়া হবে এবং মামলা-মোকদ্দমায় জড়ানোসহ নানা ধরনের হুমকি দেয়া হচ্ছে। কর্মীদের নিয়মিত ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে। এমন অবস্থায় তিনি প্রশাসনের কাছে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দাবি করেন। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় তার জনপ্রিয়তা ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতার কারণে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে গত নির্বাচনের চেয়েও তিনি আরো বেশি ভোটে নির্বাচিত হবেন বলে আশা করছেন।
এই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীক নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে জয়ের আশায় মাঠে আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি-সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন সিকদার।  নৌকার প্রার্থী রাসেলের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেছেন, গত নির্বাচনে দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে জনরায়ের ফলাফল গভীর রাতে পাল্টে দিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন রাসেল। এবার আর সেই সুযোগ নেই। অতীতে তিনি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন, এবারও জন ভোটে বিজয়ী হবেন। নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে আনারস প্রতীকের প্রার্থী কামাল উদ্দিন সিকদার বলছেন, আন্ধারমানিক এলাকায় নৌকার প্রার্থী রাসেলের নেতৃত্বে তার কর্মীদের ওপর অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। তাদের অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। ফুলবাড়িয়াতেও হামলা হয়েছে তার কর্মীদের ওপর। কামাল সিকদার সোমবার উপজেলার সফিপুরে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, রোববার রাতে আন্ধারমানিক এলাকায় আমার আনারস প্রতীকে প্রচার-প্রচারণা চলাকালে আমার কর্মী ও সমর্থনকারীদের নৌকার প্রার্থী রেজাউল করিম রাসেলসহ তার কর্মীরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ফিল্মি স্টাইলে হামলা চালিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টির দাবি জানিয়ে তিনি আরো অভিযোগ করেন প্রশাসনিক তৎপরতা এখনো সন্তোষজনক নয়। নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করা হোক, যাতে মানুষ ভোট দিতে পারে। এই সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুরাদ কবির, কালিয়াকৈর পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওহাব মিয়া, উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি আবুল কাশেমসহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
 চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মতো ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা নিজেদের পছন্দের শীর্ষনেতাদের কথা বলে, নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাত-দিন রয়েছেন নির্বাচনী মাঠে। স্থানীয়রা মনে করেন এবার হবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। কেউ কেউ বলছেন, গত সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে না পারলেও এবার ভোট দিতে পারবেন বলে মনে করছেন। এর কারণ হিসেবে বলছেন, এই নির্বাচনে তো আর অন্য পার্টি নেই, এক পার্টিরই দুজন প্রার্থী। এই জন্য হয়তো ভোট দিতে পারবেন। এই উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন করে প্রার্থী রয়েছেন। মোট ভোটার ৩ লাখ ৩২ হাজার ৪ শ’ ৯৭ জন । এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬৬ হাজার ৯ শ’ ৩৮ জন। আর নারী ভোটার ১ লাখ ৬৫ হাজার ৫ শ’ ৫৯ জন। ভোটকেন্দ্র ১২৬টি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status