প্রথম পাতা

২৭ বছরেও ক্ষতিপূরণ পায়নি সাংবাদিক মন্টুর পরিবার

শাহনেওয়াজ বাবলু

১৯ মার্চ ২০১৯, মঙ্গলবার, ১০:১২ পূর্বাহ্ন

সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন মন্টু। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ হারান। মন্টুর মৃত্যুর পর তার স্ত্রী রওশন আখতার  বাদী হয়ে মামলা করেন। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ২৭ বছর পর রায় দেয় আদালত। ২০১৬ সালে নিহতের পরিবারকে এক কোটি ৭১ লাখ ৪৭ হাজার ৮ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার আদেশ দেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। কিন্তু রায় ঘোষণার দুই বছর কেটে গেলেও ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে না নিহত মন্টুর পরিবার। রওশন আখতারের অভিযোগ, ক্ষতিপূরণের টাকা না পাওয়ার পেছনে প্রভাবশালীরা জড়িত।

অর্থ আদায়ে ডিক্রি জারি মামলা হলে বিচারিক আদালত বিবাদীপক্ষের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেন। ওই কোম্পানির পাঁচ বিঘা জমি নিলামে বিক্রি করে মন্টুর পরিবারকে অর্থ পরিশোধের নির্দেশ দেন আদালত। কয়েক দফা নিলাম ডাকা হলেও রহস্যজনক কারণে ওই জমি বিক্রি করা যাচ্ছে না। খবর নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের তেজগাঁও এলাকার জমিটি একটি ব্যাংকের কাছে দায়বদ্ধ রয়েছে। তাই এই জমি কেউ কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। আবার যদিও কেউ কেনার আগ্রহ দেখায়, তাহলে একটি প্রভাবশালী পক্ষ থেকে তাদের বাধা দেয়া হয়। আদালতের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত ৬ বার নিলামের আয়োজন করা হয়েছে। আগামী নিলামের তারিখ ২৫শে মার্চ।

১৯৮৯ সালের ৩রা ডিসেম্বর রাজধানীর শান্তিনগরের আনন্দ ভবনের সামনে রাস্তা পার হওয়ার সময় বাংলাদেশ বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পানীয়বোঝাই একটি মিনিট্রাক মোজাম্মেলকে ধাক্কা দেয়। তিনি মাথা ও মুখমণ্ডলে আঘাত পেলে স্থানীয় লোকজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। ১৩ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর ১৬ই ডিসেম্বর মারা যান তিনি। ১৯৯১ সালের ১লা জানুয়ারি মোজাম্মেল হোসেনের স্ত্রী রওশন আখতার ৩ কোটি ৫২ লাখ ৯৭ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৫ সালের ২০শে মার্চ ঢাকার তৃতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালত এক রায়ে বাংলাদেশ বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে ৩ কোটি ৫২ লাখ ৯৭ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেন। ৩০ দিনের মধ্যে ওই অর্থ দিতে বলা হয়। চালকের ভুলে মালিকের ক্ষতিপূরণ দেয়ার কোনো বিধান নেই উল্লেখ করে ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালে বাংলাদেশ বেভারেজ হাইকোর্টে আপিল করে। ২০১০ সালের ১১ই মে হাইকোর্ট ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২ কোটি ১ লাখ ৪৭ হাজার ৮ টাকা দেয়ার ডিক্রি দেন।
আইনজীবী সূত্র বলেছে, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরই লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে বাংলাদেশ বেভারেজ। শুনানি নিয়ে ২০১৪ সালের ২০শে জুলাই আপিল বিভাগের রায়ে ক্ষতিপূরণের অর্থ পুনর্মূল্যায়ন করা হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়। তবে ওই রায় পূর্ণাঙ্গ আকারে স্বাক্ষরের মাধ্যমে প্রকাশিত না হওয়ায় ২০১৬ সালের এপ্রিলে পুনঃশুনানি হয়। এরপর ২০১৬ সালের ১৩ই এপ্রিল আপিল বিভাগ পর্যবেক্ষণসহ লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে রায় দেন।

এ নিয়ে আইনজীবী খলিলুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের দুই বছর পরেও বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড সেই টাকা এখনো দেয়নি। সর্বোচ্চ আদালত থেকে রায়ের পর ক্ষতিপূরণের অর্থ না দেয়ায় বাধ্য হয়ে আমরা তা আদায়ের জন্য ডিক্রি জারির মামলা করি। ওই আদালত বিবাদীপক্ষের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেন। এরপর ওই কোম্পানির তেজগাঁওয়ের পাঁচ বিঘা জমি নিলামে বিক্রির নির্দেশ দিয়ে ওই অর্থ পরিশোধের সিদ্ধান্ত দেন আদালত। তবে কয়েক দফা নিলাম ডাকা হলেও রহস্যজনক কারণে ওই জমি বিক্রি করা যাচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, আমি যতদূর জানি বাদীপক্ষ কিছু কম ক্ষতিপূরণ হলেও মেনে নিতে রাজি আছে। কিন্তু তারপরও বিবাদীপক্ষ থেকে তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

মামলার বাদী রওশন আখতার মানবজমিনকে বলেন, ক্ষতিপূরণের টাকা এখনো আদায় হয়নি। মামলা চালাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। আদালত তাদের জমি নিলাম করে টাকা দেয়ার নির্দেশ দিলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। কারণ এর পেছনে প্রভাবশালীরা জড়িত। নিলামে জমির দাম ওঠে না। বারবার নিলাম বাতিল হয়। জমিটি একটি ব্যাংকের কাছে দায়বদ্ধ থাকার কারণে অনেকেই কিনতে চাইছে না। আমি নিজ উদ্যোগে এটা বিক্রির জন্য দুইবার পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছি। এতে আমার প্রায় ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আর আদালতে প্রত্যেকবার বিভিন্নভাবে আমার অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। আমি এই ক্ষতিপূরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

১৯৪৫ সালের জানুয়ারিতে মুন্সীগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন মোজাম্মেল হোসেন মন্টু। ১৯৬৮ সালে তিনি দৈনিক সংবাদে সহ-সম্পাদক হিসেবে যোগ দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু করেন। পরে তিনি বার্তা সম্পাদক হন। লেখক ও নাট্যকার হিসেবে পরিচিত এই সাংবাদিক মুক্তিযুদ্ধেও অংশ নেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status