বাংলারজমিন

ময়মনসিংহে কৌশলে চলছে কোচিং বাণিজ্য

মতিউল আলম, ময়মনসিংহ থেকে

১৯ মার্চ ২০১৯, মঙ্গলবার, ৮:২৪ পূর্বাহ্ন

সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে নানা কৌশলে ময়মনসিংহে কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন নামি-দামি প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষক। নগরীর কোচিংপাড়া হিসেবে পরিচিত বাউন্ডারি রোড, নাহা রোড, নতুনবাজার, কালীবাড়ী, গোলকি বাড়ি এবং জিলা স্কুল রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে বহু কোচিং সেন্টার। এর সঙ্গে জড়িত সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষক। এর মধ্যে বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের শিক্ষক আনোয়ার কাদের, জিলা স্কুলের ভৌত বিজ্ঞানের শিক্ষক আশরাফুল হক ভূঁইয়া ও মোহাম্মদ মকবুল হোসেন, কাশিগঞ্জ কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক তোফায়েল আহমেদ সবুজ, আফরোজ খান মডেল স্কুলের বিজ্ঞানের শিক্ষক মাহবুব হোসেন, মুসলিম গার্লস স্কুলের গণিতের শিক্ষক বাবুল হোসেন ও জালাল উদ্দিন, প্রিমিয়ার আইডিয়াল হাইস্কুলের গণিতের শিক্ষক রিপন কুমার দাস এবং আশরাফুজ্জামান, ময়মনসিংহ কমার্স কলেজের বিজ্ঞানের প্রভাষক সুব্রতসহ ৫০-৬০ জন কোচিং বাণিজ্যে জড়িত রয়েছেন।
সরেজমিন জিলা স্কুল রোডে দরজা বন্ধ করে ক্লাস নিতে দেখা যায় বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের শিক্ষক আনোয়ার কাদের রতনকে। তবে কোচিং বাণিজ্যের কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি সরকারের নিয়ম মেনেই বাসায় প্রাইভেট পড়াচ্ছি, কোনো কোচিং নয়। কোচিং করতে আসা দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী যুবরাজ হোসাইন বলেন, আনোয়ার কাদের স্যার বিজ্ঞান ভালো পড়ান। স্যার প্রতিদিন ৮-১০টি ব্যাচ পড়ান। প্রতিটি ব্যাচে ২৫-৩০জন শিক্ষার্থী পড়ে। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রিয়াজ হাসান বলে, শিক্ষকদের কোচিং বন্ধে সরকারি নির্দেশনার আগে আনোয়ার কাদের স্যার বাসা ভাড়া নিয়ে কোচিং করাতেন। এখন নিজের বাসায় কোচিং করান। সকাল-বিকাল বিদ্যাময়ী এবং জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীদের বেশ কয়েকটি ব্যাচ পড়ান। আগে স্যার প্রতিমাসে ১৫শ’ টাকা করে কোচিং ফি নিতেন। এখন দিতে হয় ৩ হাজার টাকা। জিলা স্কুলের বিপরীতে রতন’স ক্রিয়েটিভ সায়েন্স কোচিং সেন্টারের পরিচালক ও ফুলবাড়ীয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের জীববিজ্ঞানের প্রভাষক হাসান মতিউর রহমান রতনের জমজমাট কোচিং চলছে। জিলা স্কুলের প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থীকে সেখানে ক্লাস করাতে দেখা যায়। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আগেই দুই মাসের টাকা অগ্রিম নেয়া হয়েছে। তাই দুই মাস শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোচিং বন্ধ করা যাবে না। জিলা স্কুলের বিজ্ঞানের শিক্ষক আশরাফুল হক ভূঁইয়া বলেন, শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকের চাপে ৮-১০ জন করে প্রাইভেট পড়াচ্ছি। সামান্য বেতনে জীবন চলে না। সরকার চাইলে তাও বন্ধ করে দেবে। প্রিমিয়ার আইডিলায় স্কুলের গণিতের শিক্ষক এনামউল্লাহ দৈনিক ৮-১০টি ব্যাচ পড়াচ্ছেন। প্রতিটি ব্যাচে ২৫-৩০ জন করে শিক্ষার্থী রয়েছেন। তিনি বলেন, স্কুল থেকে যে বেতন পাই তা দিয়ে সংসার চলে না। তাই বাধ্য হয়ে কোচিং চালু রেখেছি।
ময়মনসিংহ মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ  গোলাম সরওয়ার, জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহসিনা খাতুন ও বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক দিল খুরশীদ জামান বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষক আগে কোচিং করাতেন।  কোচিং বন্ধে সরকারের নির্দেশনার পর থেকে জানামতে কোনো শিক্ষক কোচিং করান না। তবে কেউ যদি কোচিং করান তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেলা শিক্ষা অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিষ্ঠানের কিছু কিছু শিক্ষক কোচিং এবং প্রাইভেট কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে শুনেছি। আমরা তাদের তালিকা তৈরি করছি। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা উপ-পরিচালক আবু নূর মোহাম্মদ আনিসুল ইসলাম চৌধুরী  বলেন, প্রতিষ্ঠানের বাইরে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ১০ জনের বেশি শিক্ষার্থী পড়ালে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সহজ হবে বলেও তিনি জানান।  সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ হাফিজুর রহমান বলেন, সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে কোচিং বাণিজ্যকারীদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। অচিরেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেলা প্রশাসক ড. সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কেউ কোচিং কিংবা প্রাইভেট পড়ালে তার দায়-দায়িত্ব তাদেরকেই বহন করতে হবে। আমরা কাউকেই ছাড় দেবো না। শিগগিরই তাদের শনাক্তে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status