ষোলো আনা

এক মায়ের লড়াই

আবিদুল হক সোহেল

৮ মার্চ ২০১৯, শুক্রবার, ৮:৪২ পূর্বাহ্ন

ছয় বছর বয়সে ক্যানসারে মারা যান মা। পরে বাবা করেন দ্বিতীয় বিয়ে। ছয় ভাইবোনের মধ্যে হাজেরা বেগম চতুর্থ। বাবা বিয়ে করার পরও ভাইবোন সবাই নিজ গ্রাম কুমিল্লাতেই থাকতেন। সংসারে আর্থিক অনটন না থাকলেও সৎ-মা থাকার কারণে বেশি দূর পড়ালেখা করা সম্ভব হয়নি হাজেরা বেগমের। যখন তার ১৬ বছর বয়সে যোগ দিতে হয় গার্মেন্টসে। শুরু হয় তার কষ্টের জীবন। ২০ বছর বয়সে বিয়ে হয় নেত্রকোনার জেলার মদন থানার কান্দিপাড়ায়। স্বামীর নাম শাবুল, ছিল পায়ে সমস্যা। করতেন না নির্দিষ্ট কোনো কাজ। বিয়ের দেড় বছরের মাথায় তাদের একটি ফুটফুটে পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। নাম তার ইয়াসিন খান রিসাত। তাদের সংসার জীবন ভালোই যাচ্ছিল।

কিন্তু হঠাৎ চলে যায় সব সুখ। সন্তানের বয়স যখন মাত্র দেড় বছর, হারিয়ে ফেলেন বাবাকে। শোকের ছায়া কাটার আগেই হাজেরা বেগমের শুরু হয় নতুন সংগ্রাম। ধরেন সংসারের হাল। তার স্বামী মারা যাওয়ার ৯ মাসের মাথায় সন্তান রিসাত নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। এইখানে তিনি মাথা গোঁজার ঠাই করেন বোনের বাসায়। ফের শুরু হয় গার্মেন্ট কর্মীর জীবন। কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ভাগ্য এতটাই খারাপ যে ছোটবেলায় নিজের মাকে হারিয়েছি, বিয়ের দুই বছর ৮ মাস পার হতে না হতেই হারাই স্বামীকে। প্রায় ৮ বছর গার্মেন্টকর্মী হিসেবে কাজ করার পর তিনি বোন ও দুলাভাইয়ের সহযোগিতায় একটি বেসরকারি স্কুলে ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে যোগদান করেন। এরই মধ্যে তিনি আলাদা বাসা নিয়ে থাকতে শুরু করেন ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের বাইগারটেক, হাজীমার্কেট এলাকায়। স্কুলে চাকরি করে বাসায় এসে আবার সেলাই মেশিনে কাজ করেন। তার বর্তমান আয় দিয়ে কোনোভাবে সংসারকে চালিয়ে যাচ্ছেন।

কিন্তু কখনও সাহায্যের জন্য হাত পাতেননি। তিনি শুধু ছেলে এবং নিজের খরচই বহন করেন না। তার অর্জিত অর্থ শ্বশুরবাড়িতেও যতটুকু দেয়া সম্ভব তিনি টাকা পাঠিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, সবকিছু ভুলে থাকার জন্যই এখন নিজেকে সারাদিন কাজের মধ্যে ব্যস্ত রাখি। যাতে করে নিজের দুঃখ কষ্টগুলো ভুলে থাকতে পারি। শ্বশুরবাড়ি থেকেও অনেকবার চেষ্টা করেছে বিয়ে দিয়ে নতুন জীবন শুরু করার জন্য। কিন্তু আমি আমার সন্তানের কথা ভেবে এখন পর্যন্ত একাই রয়েছি। বাকি জীবনটাও একাই পার করে দিতে চাই। হাজেরা বেগম জীবন সংগ্রামে লড়াই করতে গিয়ে এখন প্রায় ক্লান্ত। এখন তার শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভালো না। তবুও তিনি তার কর্মকে ছেড়ে দেননি। তিনি জানেন না তার এই সংগ্রামী জীবন কবে শেষ হবে। বা ভবিষ্যতে তার জন্য কী অপেক্ষা করছে তাও নিতে জানেন না। ১২ বছর ধরে স্বামী হারা এই হাজেরার এখন সব স্বপ্ন শুধু ছেলেকেই নিয়েই। তিনি চান তার ছেলে যেন মানুষের মতো মানুষ হয়। সে যেন বড় হয়ে ভালো কিছু করতে পারে। ছেলেকে ঘিরেই তার বেঁচে থাকার একমাত্র অনুপ্রেরণা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status