বিশ্বজমিন

এএফপির রিপোর্ট

শামিমা ইস্যুতে হাত ধুয়ে ফেলেছে বৃটেন ও বাংলাদেশ

মানবজমিন ডেস্ক

২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ১:০৪ পূর্বাহ্ন

আইএসে যোগ দেয়া বৃটিশ শামিমা বেগমের নাগরিকত্ব বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বৃটেন। অন্যদিকে তাকে গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছে বাংলাদেশ, যে দেশ থেকে তার পরিবার বৃটেনে এসেছে। এর ফলে রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়ার মুখে টিনেজ বয়সে আইএসে যোগ দেয়া শামিমা বেগম। বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।
‘বৃটেন অ্যান্ড বাংলাদেশ ওয়াশ দেয়ার হ্যান্ডস অব আইএস টিন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, শামিমার বয়স যখন মাত্র ১৫ বছর তখন ২০১৫ সালে তিনি সিরিয়া চলে যান। তিনি এখন বৃটেনে ফিরতে চান। গত সপ্তাহে তিনি সিরিয়ার একটি শরণার্থী শিবিরে একটি পুত্রসন্তান জন্ম দিয়েছেন। ওদিকে বৃটিশ সরকার তার নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়ায় শামিমা হতাশ। নাগরিকত্ব বাতিল সংক্রান্ত বিষয় তার পরিবারের কাছে জানিয়ে দিয়েছে বৃটিশ সরকার।

রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে যে, শামিমা এমনিতেই বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার বৈধতা রাখতে পারেন। কারণ, তার মা বাংলাদেশ থেকে বৃটেনে গিয়েছেন বলে মনে করা হয়। কিন্তু শামিমাকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা বলেছে, জন্মগতভাবে শামিমা বৃটিশ নাগরিক। তিনি কখনোই দ্বৈত নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশে আবেদন করেন নি। এ ছাড়া তার পিতামাতার এ দেশের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও তিনি কখনোই বাংলাদেশ সফরে আসেন নি। ফলে তাকে বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
ওদিকে সিরিয়ার শরণার্থী ক্যাম্প থেকে বিবিসিকে শামিমা বলেছেন, তিনি একজন বৃটিশ। তার ভাষায়- ‘আমার একটিই নাগরিকত্ব আছে। যদি তা আমার কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয়, তাহলে আমার আর কিছুই থাকবে না। আমার মনে হয় না তাদের এটা করার অধিকার আছে।

এর আগে তিনি আইটিভি নিউজকে বলেছে, তার নাগরিকত্ব বাতিলের বৃটিশ সিদ্ধান্ত ন্যায়সঙ্গত নয়। তবে যেহেতু তার স্বামী, আইএস যোদ্ধা একজন ডাচ নাগরিক তাই তিনি নেদারল্যান্ডে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার কথা বিবেচনা করতে পারেন। ধারণা করা হয়, তার ওই স্বামী বর্তমানে সিরিয়ায় কুর্দি বাহিনীর হাতে বন্দি আছেন। এ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শামিমা বেগম বলেন, আমি হল্যান্ডে নাগরিকত্বও চাইতে পারি। স্বামীর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি তাকে হল্যান্ডে ফিরে যেতে দেয়া হয় এবং জেলে রাখা হয়, তাহলে তার জন্য আমি অপেক্ষায় থাকবো সেখানে।

শামিমার এমন কথায় মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ডাচ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শামিমার নাগরিকত্বের আবেদন গ্রহণ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ, নাগরিকত্ব পেতে হলে চাহিদার লম্বা তালিকা পূরণ করতে হয়।  
ওদিকে শামিমার পারিবারিক আইনজীবী তাসনিম আকুঞ্জে বলেছেন, বৃটিশ সরকারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য তিনি আইনের সব দিক বিবেচনা করবেন।

এখন থেকে চার বছর আগে স্কুলপড়ুয়া বান্ধবী খাদিজা সুলতানা ও আমিরা আবাসকে সঙ্গে নিয়ে শামিমা সিরয়ায় চলে যান আইএসে যোগ দিতে। তখন থেকেই বিষয়টি নিয়ে তীব্র বিতর্ক। এখন শামিমার ভবিষ্যত বা পরিণতি কি হবে তা নিয়ে চলছে আরো বিতর্ক। এ ঘটনাটি নিয়ে ইউরোপের বহু দেশ যে উভয় সঙ্কটে রয়েছে তা সামনে চলে এসেছে। তা হলো, জিহাদে যাওয়া বা আইএসের প্রতি সহানুভূতিশীলদের কি দেশে ফিরে বিচারের মুখোমুখি করা অনুমোদন দেয়া হবে নাকি নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ থাকায় তাদেরকে আটকে রাখা হবে।
বুধবার বৃটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ আইন প্রণেতাদের বলেছেন, নাগরিকত্ব বাতিল একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। এটা হালকাভাবে ব্যবহার হতে পারে না।

শিশুকে দুর্ভোগ পোহাতে দেয়া উচিত নয়
বৃটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ বুধবার নাগরিকত্ব বাতিল ইস্যুতে বলেছেন, আন্তর্জাতিক আইন বলে যে, বৃটেন নাগরিকত্ব বাতিল করতে পারে শুধু যদি দেখা যায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি রাষ্ট্রহীন হয়ে না পড়েন, যদি তার দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকে, অথবা সীমাবদ্ধ কিছু ক্ষেত্রে তার অন্য কোথাও নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার থাকে তখনই। তিনি ইঙ্গিত দেন, এক্ষেত্রে শামিমার নবজাতককে ভিন্নভাবে দেখা হতে পারে। তিনি বলেন, শিশুদের দুর্ভোগ পোহাতে দেয়া উচিত নয়। যদি কোনো শিশুর পিতামাতা বৃটিশ নাগরিকত্ব হারান তবে তাতে ওই শিশুর অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

শামিমা তার সন্তানকে বৃটেনে বড় করার অনুমতি দেয়ার জন্য বৃটিশ কর্তৃপক্ষকে সহানুভূতি দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু তিনি বৃটেনে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে দিয়েছেন গত সপ্তাহে দ্য টাইমসকে দেয়া প্রথম সাক্ষাতকারে। তাতে তিনি বলেছেন, জিহাদে যোগ দেয়ার জন্য তিনি অনুতপ্ত নন। তবে বিবিসিকে দেয়া সর্বশেষ সাক্ষাতকারে তিনি অধিক পরিমাণে অনুশোচনা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, আমি আশা করি বৃটেন বুঝতে পারবে যে আমি একটি ভুল করেছি। অনেক বড় ভুল করেছি। কারণ, ওই সময়টাতে আমার বয়স কম ছিল। তার আইনজীবী বলেছেন, শামিমার জন্ম বৃটেনে। তার কাছে কখনো বাংলাদেশী পাসপোর্ট ছিল না। তিনি দ্বৈত নাগরিকও নন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status