শেষের পাতা

‘খালেদা জিয়া কবে মুক্তি পাবেন?’

বিএনপির আলোচনা সভায় হট্টগোল

স্টাফ রিপোর্টার

২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৯:৫৭ পূর্বাহ্ন

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তি নিয়ে নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়েছেন দলটির সিনিয়র নেতারা। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় নেতারা তোপের মুখে পড়েন। স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বক্তব্যের এক পর্যায়ে দর্শক সারি থেকে এক নেতা বলে ওঠেন- ‘খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা বলেন, কবে এবং কীভাবে মুক্তি পাবেন? খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি নেই কেন? আজকে হলরুম খালি কেন?’ প্রথমে মওদুদ আহমদ সেই কথা শুনতে পাননি।

দর্শক সারি থেকে দ্বিতীয়বার একই প্রশ্ন করা হলে মুহূর্তের মধ্যেই পুরো পরিস্থিতি পাল্টে যায়। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে স্লোগান তুলেন নেতাকর্মীরা। সে স্লোগান জোরালো হয়ে উঠলে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বক্তব্য থামিয়ে দেন। স্লোগান শেষ হলে ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনকে আজ কোর্র্টে আনার কথা ছিল। কিন্তু অসুস্থতার কারণে তিনি আসতে পারেন নি। আজকে উনাকে কোর্টে হাজির করতে পারেনি তারা (প্রসিকিউশন)। আজকে তাকে দেখার সৌভাগ্যও হয়নি। এই কথাই বলতে চাচ্ছিলাম।’ ব্যারিস্টার মওদুদের বক্তব্যের সময় সূত্রপাত হওয়া হট্টগোল ফের জোর পায় দলের মহাসচিব মির্জা আলমগীরের বক্তব্যের সময়। সভায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ নেতারা ফের স্লোগানে স্লোগানে উত্তপ্ত করে তোলে সভাস্থল। এবারও দর্শক সারি থেকে এক নেতা মহাসচিবকে উদ্দেশ্য করে বলেন- ‘আজকে হল খালি কেন? বিএনপির কমিটি ভেঙে দেন।’ এ সময় নেতাকর্মীরা সমস্বরে প্রশ্ন করতে থাকেন- ‘খালেদা জিয়া কবে মুক্তি পাবেন? তার মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে না কেন?’ নেতাকর্মীদের জোরালো স্লোগানে ক্ষুব্ধ হয়ে মহাসচিব মির্জা আলমগীর বলেন, ‘দাঁড়ান, হলে বসে চিৎকার করলে হবে না। চাইলেই কর্মসূচি দেয়া যায় না।

কর্মসূচি পালন করতে হবে তো। কর্মসূচি দেয়া হবে, ধৈর্য্য ধরেন। এখানে হলের মধ্যে বসে চিৎকার করলে হবে না। কথা শুনুন, থামেন আপনারা। এ সময় নেতাকর্মীরা বলেন, ‘হয় কর্মসূচি দেন, না হয় কমিটি ভেঙে দেন।’ পরে পরিস্থিতি সামলে মির্জা আলমগীর বলেন, ‘বন্ধুগণ- আপনাদের যে ক্ষোভ ও ব্যথা, এটা আমরা বুঝি। কিন্তু আপনাদের বুঝতে হবে, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যখন গণতান্ত্রিক শক্তি লড়াই করে তখন অতি সহজে সফলতা অর্জন করা যায় না। আপনারা কেন ভাবছেন, ব্যর্থ হয়েছেন। কেনো বলছেন আপনারা ব্যর্থ হয়েছেন। আপনারা ব্যর্থ হননি, বিজয়ী হয়েছেন। দেশ ও বিশ্বের কাছে প্রকাশ হয়েছে, এটি একটি ফ্যাসিবাদী শক্তি। আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসন কায়েম করতে ১০ বছর ধরে নির্যাতন চালাচ্ছে।’ তিনি বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া কখনো বলেন নি মনোবল হারাতে। তিনি বলেছেন, সাহসের সঙ্গে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে। আমাদের অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। সেই জন্য আমাদের তৈরি থাকতে হবে। ভবিষ্যৎ আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে মির্জা আলমগীর বলেন, এই সংগ্রামে আমাদের অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। তাই আসুন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আমরা সংগঠনকে আরো শক্তিশালী করি। ফ্যাসিবাদী শক্তিকে মোকাবিলা করার জন্য আমাদের অবশ্যই সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। আর আমরা দীর্ঘকাল ধরে লড়াই করছি। এই লড়াইকে আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ এবং সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে মির্জা আলমগীর বলেন, কখনো মনের জোর ও মনোবলকে হারিয়ে ফেলবেন না।

দুর্বল ও হতাশায় নিমজ্জিত হবেন না। স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবশ্যই রুখে দাঁড়াতে হবে। একথা কেনো ভাবছেন যে, আপনারা পরাজিত হয়েছেন? আমরা লড়াই করবো, আর সেই লড়াইয়ে অবশ্যই আমরা বিজয়ী হবো। বাংলাদেশের মানুষ বিজয়ী হবেই হবে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে কখনো বিশ্বাস করেনি। এরা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। আর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করে তারা প্রমাণ করেছে, আওয়ামী লীগ কোনো গণতান্ত্রিক শক্তি নয়। বক্তব্যের এক পর্যায়ে অবিলম্বে খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবি জানিয়ে মির্জা আলমগীর বলেন, খালেদা জিয়াকে নির্জন কারাগারে রেখে মানবাধিকার লঙ্ঘন করার জন্য তাদের বিচার করা হবে। এ সময়ও নেতাকর্মীরা স্লোগান দিয়ে সমস্বরে বলেন, ‘কর্মসূচি দেন।’

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ নেতাকর্মীদের বলেন, আপনারা স্লোগানকে বাস্তবায়ন করতে চান না? আপনারা খালেদা জিয়ার কথা শুনতে চান না। খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। আইনি প্রক্রিয়ায় তার মুক্তি সম্ভব না। একমাত্র আন্দোলনের মাধ্যমেই তাকে মুক্ত করা সম্ভব। সুপরিকল্পিত আন্দোলন কর্মসূচি দিতে হবে। যাতে এবার আমরা পরাজিত না হই। আর বেগম জিয়ার মুক্তি হবে আমাদের এক নম্বর এজেন্ডা। ভাষা আন্দোলনে নিজের অংশগ্রহণের স্মৃতিচারণ করে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, একুশের চেতনা ধূলিসাৎ করে দিয়েছে বর্তমান সরকার। তারা কখনোই চায় না দেশে কোনো বিরোধী দল থাকুক। দেশে একটি নির্বাচন হয়েছে, এটা কেউ বিশ্বাস করে না। ৩০শে ডিসেম্বর দেশে কোনো নির্বাচন হয়নি। তারা ভোট চুরি করে রাষ্ট্র পরিচালনায় দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, আজকে আমাদের করণীয় কি, জয়প্রিয়তাই যথেষ্ট নয়।

আমাদের বিশাল জনপ্রিয়তা, কিন্তু এটা যথেষ্ট নয়। কারণ প্রমাণ হয়েছে, সংগঠন ছাড়া জনপ্রিয়তা কিছু নয়। প্রবীণদের ও নতুনদেরকে নিয়ে করতে হবে। যারা মার খেয়েছে, জুলুম-নির্যাতন সহ্য করেছে, তাদেরকে সুযোগ দিতে হবে। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, দেশের প্রাণশক্তি হচ্ছে ছাত্ররা। আর বিএনপির প্রাণশক্তি হচ্ছে ছাত্রদল। তাই বলবো, আপনারা ছাত্ররা এগিয়ে আসুন- আমরা রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করবো। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, এক বছর হলো- কিন্তু আমরা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারি নি।

বিএনপি এত বড় একটি রাজনৈতিক দল। আমাদের অনেক সমর্থন আছে, সারা দেশে সংগঠন আছে, কর্মী-সমর্থক আছে তবু কেন আমাদের নেত্রীর মুক্তি হচ্ছে না? এখন একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে সবাই মিলে এক সঙ্গে নামলে বিএনপি চেয়ারপারসনকে মুক্ত করা অবশ্যই সম্ভব। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান ও মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক হেলেন জেরিন খান বক্তব্য দেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status