দেশ বিদেশ

চট্টগ্রামে স্বামীকে গলা কেটে হত্যা, আশা কারাগারে

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে

২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৯:৫৭ পূর্বাহ্ন

আগের স্ত্রী ও সন্তানের কথা গোপন রেখে বিয়ে করায় ঘুমন্ত স্বামীকে গলা কেটে হত্যা করে স্ত্রী আশা আক্তার (২৩)। চট্টগ্রাম পাহাড়তলী থানার আবদুল আলী নগর এলাকার একটি বাসায় এই ঘটনা ঘটে। পুলিশ বগুড়া থেকে আশা আক্তারকে গ্রেপ্তার করে বুধবার চট্টগ্রাম আদালতে নিয়ে যায়। সেখান থেকে আদালত কারাগারে পাঠায় আশাকে। তবে আদালতে তোলার আগে বুধবার সকালে নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে সংবাদ সম্মেলনে আশা আক্তারের ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তুলে ধরেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন) কুসুম দেওয়ান। তিনি বলেন, গত ১৬ই ফেব্রুয়ারি নগরীর পাহাড়তলী থানার আবদুল আলী নগর এলাকার একটি বাসা থেকে অজ্ঞাত এক যুবকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের কোনো ক্লু খুঁজে পাচ্ছিল না পুলিশ। ঘটনার একদিন পর বাসার মালিকের মেয়ের মোবাইল নাম্বারের কললিস্ট থেকে নিহতের পরিচয় শনাক্ত করতে সক্ষম হয় পুলিশ। সেই নম্বরের সূত্র ধরে আশা আক্তারের পরিচয়ও শনাক্ত করা সম্ভব হয়। একপর্যায়ে ফোন নম্বর ট্র্যাকিং করে আশা আক্তারের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। এরপর মঙ্গলবার অভিযান চালিয়ে পুলিশ আশা আক্তারকে গ্রেপ্তার করে। আশা আক্তারের বাসা থেকে রক্তমাখা পোশাকও উদ্ধার করা হয়। কুসুম দেওয়ান বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আশা আক্তার তার স্বামী শামীমকে গলা কেটে হত্যার কথা স্বীকার করে। প্রধানত তিনটি কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয় বলে জানান আশা আক্তার। আশা জিজ্ঞাসাবাদে বলেন, এক বছর আগে ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে শামীমের সঙ্গে চার মাস আগে বিয়ে হয় তার। বিয়ের পর আশা আক্তার জানতে পারেন, শামীম আগেও বিয়ে করেছেন এবং তার দুইটি বাচ্চা আছে। সেই থেকে ক্ষোভ জমে তার।
এরমধ্যেও শামীমকে নিজের করে পাওয়ার জন্য বগুড়াতে স্যাটেল করতে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে একটি ইজিবাইক কিনে দেয় আশা আক্তার। কিন্তু শামীম আশা আক্তারকে না বলে ইজিবাইক বিক্রি করে দিয়ে চট্টগ্রাম চলে আসায় ক্ষোভ আরো বেড়ে যায়। এরপরই খুনের পরিকল্পনা করে আশা।
এ সময় যোগাযোগ করলে শামীম ফোনে আশা আক্তারকে চট্টগ্রাম চলে আসার জন্য বলে। এতে রাজি হয়ে যায় আশা। কিন্তু সে কোনো সময় চট্টগ্রামে না আসায় পরে শামীম গিয়ে আশা আক্তারকে নিয়ে আসেন। আসার আগে বগুড়া সদরের রেললাইনের খোলা বাজার থেকে একটি ধারালো ছুরি কিনে আশা।
১৬ই ফেব্রুয়ারি সকালে ভাড়া বাসায় উঠে তারা। আসার আগে আশা বাসার মালিকের মেয়ের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলে। কিন্তু বাসায় আশা আক্তার আসার খবর মালিকের মেয়ে জানতো না। আর এদিন রাতে বাসার ভেতর থেকে অজ্ঞাত যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে বাসার মালিকের মেয়ের সঙ্গে কথা বলে তার মোবাইলফোনের কললিস্ট থেকে শামীমের পরিচয় শনাক্ত করা হয়।
শামীমের পরিবারের কেউ আশা আক্তারকে চিনতো না, কখনও দেখেও নি। না চিনলেও শামীমের সঙ্গে এক মেয়ের মোবাইলফোনে কথা হয় এমন তথ্য পুলিশকে দেয় শামীমের পরিবার। এ তথ্য এবং মুঠোফোনে কথোপকথন থেকে আশা আক্তারের পরিচয় পেয়ে পুলিশ দুইদিন বগুড়ায় অভিযান চালিয়ে সদর এলাকা থেকে আশাকে গ্রেপ্তার করে। উল্লেখ্য, আশা আক্তার বগুড়া সদরের ঠনঠনিয়া নতুনপাড়া এলাকার আবদুল আজিজের মেয়ে।  সে বগুড়ায় বহুমাত্রা বায়িং হাউজে চাকরি করে। মঙ্গলবার ওই কর্মস্থল থেকে আশাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর নিহত শামীমের গ্রামের বাড়ি ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলায়। সে পেশায় একজন বাবুর্চি। সংবাদ সম্মেলনে সিএমপির উপ-কমিশনার (পশ্চিম) ফারুক-উল-হক, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কামরুল ইসলাম, সিনিয়র সহকারী কমিশনার (পাহাড়তলী জোন) পংকজ বড়ুয়া, পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুদীপ কুমার দাশ উপস্থিত ছিলেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status