দেশ বিদেশ

ডাকসু নির্বাচন: হলে ভোটকেন্দ্র সব ভোটারের ভোট প্রদান নিয়ে শঙ্কা

মুনির হোসেন

২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৯:৩৩ পূর্বাহ্ন

আগামী ১১ই মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নেতৃত্ব বিকাশের কারখানা বলে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল ছাত্র সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন চলছে মনোনয়ন বিতরণ। তবে দীর্ঘ ২৮ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই শঙ্কা বাড়ছে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হওয়ার নিশ্চয়তা নিয়ে। সরকারবিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলো এখনো বিভিন্ন দাবিতে মাঠে রয়েছে। দাবি আদায় না হলে নির্বাচন বয়কটেরও ঘোষণা দিয়েছে বেশ কয়েকটি ছাত্র সংগঠন। যদিও নির্দিষ্ট সময়ে ভোট অনুষ্ঠানের জন্য যাবতীয় কার্যক্রম সময়মতোই সম্পন্ন করছে কর্তৃপক্ষ।

ছাত্র সংগঠনগুলোর অন্যতম দাবি হচ্ছে হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র স্থাপন। হলে ক্ষমতাসীনদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের দখলদারিত্বের অভিযোগ এনে একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের জোর দাবি করে আসছে ছাত্র সংগঠনগুলো ও স্বতন্ত্র প্যানেলে নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী প্রার্থীরা। এ নিয়ে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন জরিপও চালানো হয়েছে। গতকাল এ জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করা হয়েছে ভিসি বরাবর। ছাত্রলীগের দখলদারিত্ব ছাড়াও ছাত্র সংগঠনগুলো হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের যে যুক্তি উপস্থাপন করেছে তা হচ্ছে- ১৮টি হলে ৪৩ হাজার ভোটারের ভোটগ্রহণে অবকাঠামোগত পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। এ ছাড়াও সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সময় ভোটগ্রহণের জন্য যথেষ্ট নয়। তাই ভোটগ্রহণের সময়ও দুই ঘণ্টা বাড়িয়ে ৮টা থেকে ৪টা করার দাবি তাদের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)’র ২৫টি ও হল ছাত্র সংসদের ১৩টি পদে ভোট প্রদান করতে প্রত্যেক ভোটারের প্রয়োজন ন্যূনতম ৩ মিনিট। সেক্ষেত্রে ১৮টি হলে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ভোট সম্পন্ন করতে হলে প্রয়োজন কমপক্ষে ১৮ থেকে ২০টি বুথ। অন্যথায় নির্ধারিত সময়ে সবার ভোটগ্রহণ সম্ভব না বলে আশঙ্কা করছে ছাত্র সংগঠনগুলো। এদিকে তফসিল ঘোষণার পর ভোটকেন্দ্র নিয়ে গত সাত দিন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন ক্যাম্পাসে গণস্বাক্ষর অভিযান পরিচালনা করে। এতে স্বাক্ষর করেছে ৩ হাজার ১৪৫ জন শিক্ষার্থী।

যাদের মধ্যে ২ হাজার ৮৮১ জনই একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের পক্ষে মত দিয়েছে। আর হলে ভোট চেয়ে স্বাক্ষর করেছে মাত্র ১৫৯ জন শিক্ষার্থী। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী বলেন, হলগুলোর বর্তমানে যে অবস্থা সেখানে কোনো হলেই ১৮ থেকে ২০টি বুথ করার মতো অবকাঠামোগত ব্যবস্থা নেই। তাই আমরা বারবারই এ দাবিটি করে আসছি যেন সব নির্ধারিত সময়ে ভোট সম্পন্ন করতে হলের বাইরে একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। কারণ সেখানে সে ব্যবস্থা রয়েছে। তিনি বলেন, সকাল ৮টা থেকে ২টার যে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে তাও ভোটগ্রহণের জন্য যথেষ্ট নয়। তাই আমরা এখনো দাবি করছি শেষ সময় ২টার পরিবর্তে ৪টা করা হোক। সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নাসির উদ্দিন প্রিন্স বলেন, আমরা এখনো বলছি হলে ভোটগ্রহণের পরিবেশ নেই। তাই আমরা চাই হলের বাইরে একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হোক। দাবি আদায় না হলে আমরা প্রয়োজনে নির্বাচনও বয়কট করতে পারি। এদিকে একই দাবিতে অনড় থেকে মনোনয়ন সংগ্রহে বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান বলেন, আমরা মনে করি হলে ভোট গ্রহণের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। তাই আমরা প্রথম থেকেই হলের বাইরে ভোটগ্রহণের দাবি জানিয়ে আসছি। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ থেকে বিরত থাকবো। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, হলে সব শিক্ষার্থীর ভোট গ্রহণের যাবতীয় ব্যবস্থাই রয়েছে। শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় বুথ স্থাপন করা হবে। বিষয়টি নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।

আর সময়ের ব্যাপারে প্রশাসন বলছে- নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হলের মূল গেইটে যারা প্রবেশ করবে তাদের প্রত্যেকেরই ভোটগ্রহণ করা হবে। সেটা সময় শেষ হয়ে গেলেও। গতকাল সন্ধ্যায় ডাকসু নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. এস এম মাহফুজুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, হলে ১৮ থেকে ২০টি বুথ করার অবকাঠামোগত ব্যবস্থা নেই বলে যারা অভিযোগ করছে তাদের বক্তব্য সঠিক নয়। আমরা নির্ধারিত সময়ে হলে সব ভোটারের ভোটগ্রহণের জন্য যতগুলো বুথ করার প্রয়োজন হবে ততগুলোই করবো। যেন সব ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মু. সামাদ বলেন, আমরা এ কথা আগেও বলেছি, এখনো বলছি কারো শঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। এখানে আমরা শিক্ষকরা নির্বাচন পরিচালনা করবো। এটা নৈতিকতার বিষয়। হলে সবার ভোট গ্রহণ নিশ্চিত করতে আমরা যাবতীয় ব্যবস্থাই গ্রহণ করবো। যারা দুপুর ২টার মধ্যে হলের মূল গেইটের ভেতরে প্রবেশ করবে তাদের ভোটগ্রহণ করা হবে। সেটা নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত সময় লাগলেও গ্রহণ করা হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status