বাংলারজমিন

শেষ হয়নি ২ ভাগ কাজও

উৎকণ্ঠায় মনুর তীরবর্তী বাসিন্দারা

ইমাদ উদ দীন, মৌলভীবাজার থেকে

২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, বুধবার, ৯:০৩ পূর্বাহ্ন

মনু নদীর মাঝখানে এখন হাঁটু পানি। কোথাও একটু পানি হলেও অধিকাংশই ধু ধু বালুচর। নদী জুড়ে জেগে উঠা চরই এখন খেলার মাঠ। পানিহীনতায় ব্যাহত হচ্ছে কৃষিক্ষেত। এমন দৃশ্যে ঐতিহ্য হারানো আক্ষেপ থাকলে ভয় জাগছে আগত বর্ষা মৌসুম নিয়ে। কারণ ২০১৮ সালের রাক্ষসী বন্যার করাল গ্রাস আর ক্ষয়ক্ষতির তাণ্ডব এখনো তাদের স্মৃতিপটে। আয়তন আর নাব্যহ্রাসে নদীর পানি ধারণক্ষমতা একেবারেই কমে যাওয়ায় গেল বছরের মতো আকর্ষিক বন্যার ভয় স্থানীয়দের। নদী পাড়ের কয়েক লাখ বাসিন্দা এখন থেকেই এমন দুশ্চিন্তায়। কারণ গেল বছরের ভয়াবহ বন্যায় ঘরবাড়ি আর ক্ষেত কৃষি হারানোর ক্ষয়ক্ষতি এখনো পুষিয়ে উঠতে পারেননি তারা। ওই ভয়াবহ বন্যার পর সরকারের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নানা প্রতিশ্রুতি আর আশ্বাসে আশান্বিত ছিলেন দুর্ভোগগ্রস্তরা। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তাদের সে স্বপ্ন প্রত্যাশা ফিকে হচ্ছে। শুধু ভাঙ্গা স্থানে জোড়াতালি দিয়ে গতানুগতিক নিয়মেই বাঁধ মেরামত করা হয়েছে। আবারো বাঁধ ভাঙন ও বন্যার ভয়ে নদী পাড়ের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ এখন ক্ষেত কৃষি আর ঘরবাড়ি নিয়ে মহা দুশ্চিন্তায়। উজান থেকে আসা পলিতে নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ায় পানির ধারণ ক্ষমতা এখন নেই বললেই চলে। তাই নাব্যহ্রাস হওয়া নদী খনন, স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতসহ সর্বপরি নদী শাসনের দাবি দীর্ঘদিন থেকে নদী পাড়ের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের। এই দাবিতে তারা শৃঙ্খলিত নানা আন্দোলনও করেছেন ও করছেন। তারপরও কিছুতেই টনক নড়ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। মনু নদীর এমন বেহাল অবস্থা ও খনন কাজের অনিয়ম নিয়ে ১২ই ফেব্রুয়ারি
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) মৌলভীবাজার জেলা শাখার উদ্যোগে মৌলভীবাজার পৌরসভার হল রুমে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। ওই সভায় মনু নদীর দুর্দশা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের নানা উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার বিষয়টি ওঠে আসে। মনু নদী খনন ও বর্তমান বাস্তবতা শীর্ষক ওই মতবিনিময় সভার আলোচনায় মৌলভীবাজারের মনু নদীর (মনু ব্যারেজ থেকে মনু মুখ পর্যন্ত) ২৩ কিলোমিটার নাব্যতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়াধীন বিআইডব্লিউটিএ’র ২৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকার প্রকল্প গ্রহণ করার বিষয়টি গুরুত্ব পায়। মতবিনিময় সভায় বলা হয় ওই প্রকল্পের কাজের মেয়াদ শেষ হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নানা অজুহাতে শতকরা ২ ভাগ কাজও এখনো শেষ করেনি। তাদের অভিযোগ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নানা ছুঁতায় প্রকল্পের পুরো টাকাই আত্মসাতের পাঁয়তারা করছে। তাদের কাজের ধরন
দেখে এমনটিই প্রতিয়মান হচ্ছে বলে সভায় সকলেই তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। সভায় উপস্থিত পৌর মেয়র, সুশীল সামাজের প্রতিনিধি ও শহরের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন আমাদের জীবন মরণ সমস্যা মনু নদী খনন, বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত নিয়ে কোন ধরনের টালবাহানা বরদাস্ত করা হবে না। সভায় সিদ্ধান্ত হয় বাপার সমন্বয়ে সকলের সম্মেলিত প্রচেষ্টায় তারা মনু নদী খনন কাজের অনিয়মসহ ভরাট হয়ে যাওয়া জেলার মৃত্যু পথযাত্রী নদী, হাওর, খাল, গাঙ্গ ও ছড়া খনন ও তার বাঁধ মেরামতের দাবিতে ২০শে ফেব্রুয়ারি মনু নদীর পাড়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে মানবন্ধনের। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) মৌলভীবাজার জেলা শাখার সমন্বয়ক আ.স.ম ছালেহ সুহেল বলেন মতবিনিময় সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মানবন্ধনের প্রস্তুতি চলছে। ২০শে ফেব্রুয়ারি সকালে মনু নদীর পাড়ে ওই মানববন্ধন সকলের সার্বিক সহযোগিতায় অবশ্যই সম্পন্ন হবে। এবিষয়ে মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র ফজলুর রহমান বলেন বিআইডব্লিউটিএ’র এই প্রকল্পের খনন কাজ নিয়ে সম্প্রতি এই বিষয়ে জেলায় একটি বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভায় ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের লোকজন উপস্থিত ছিলেন। সভায় মনু নদী খনন কাজের ধীরগতি ও গাফলতি নিয়ে সকলেই অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন সভায় ওই প্রকল্পের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খনন কাজ সম্পন্ন করতে বিআইডব্লিউটি ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বঙ্গ ড্রেজার লিমিটেডকে অনুরোধ করা হয়। অন্যথায় এই গাফলতির কারণে সকল ক্ষয়ক্ষতির দ্বায়ভার তাদের উপর বর্তাবে বলেও সতর্ক করা হয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status