অনলাইন

মানবজমিনকে জাবি ভিসি

জাকসু নির্বাচন হবে, শিগগিরই প্রশাসনে রদবদল

জাবি প্রতিনিধি

১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, মঙ্গলবার, ১২:২৫ অপরাহ্ন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী ২৪শে ফেব্রুয়ারি শুরু হতে যাচ্ছে নতুন ব্যাচ (৪৮ তম) এর শিক্ষার্থীদের ক্লাস। বামপন্থি ছাত্রসংগঠনগুলো জাকসু দাবিতে আন্দোলন করছে। শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে ভরাডুবি ঘটেছে ভিসিপন্থি শিক্ষক সংগঠনের। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নে সরকার প্রায় ১৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের মধ্যে বিভাজন বহুদিন ধরে। থেমে থেমে বেপরোয়া হয়ে উঠছে ছাত্রলীগ। এসব বিষয়ে দৈনিক মানবজমিনের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেন ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। সাক্ষাতকার নিয়েছেন মানবজমিনের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি শাহাদাত হোসাইন স্বাধীন।

মানবজমিন: ২৪শে তারিখ নতুন ব্যাচের ক্লাস শুরু হতে যাচ্ছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত বেশ কয়েকবছর ধরে র‌্যাগিংয়ের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।  র‌্যাগিং বন্ধে আপনার প্রশাসন কি পদক্ষেপ নিবে?

ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম: প্রশাসন বলতে তো শুধু ভিসি, প্রো-ভিসিকে বুঝায় না। হল প্রভোস্ট, হলের হাউজ টিউটররাও প্রশাসনের অংশ। তাই সবাইকে মিলে র‌্যাগিং বন্ধে উদ্যোগ নিতে হবে। হলে হলে নজরদারি বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে। রাতে শিক্ষকদের হলে থাকতে বলা হয়েছে। হল প্রভোস্ট ও হাউজ টিউটরদের সময় ভাগ করে হলে ডিউটি দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া সিনিয়র ব্যাচের শিক্ষার্থীদের র‌্যাগ না দিতে মোটিভেট করার উদ্যোগ নেয়া হবে। প্রক্টরিয়াল বডি তো সার্বক্ষণিক সতর্ক থাকবেই। তিনি গণরুম নিয়ে বলেন, নতুন হল নির্মিত  হলে গণরুম বলে কিছু থাকবে না।
 
মানবজমিন: সম্প্রতি ছাত্র ইউনিয়ন,সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট,জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটসহ শিক্ষার্থীরা জাকসুর দাবিতে জোরালো আন্দোলন চালিয়ে আসছে। আপনি নিজেও জাকসু নির্বাচন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কবে নাগাদ জাকসু নির্বাচন দিবেন ?

অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম: জাকসু নির্বাচনের দাবি দীর্ঘদিনের। এই নির্বাচন হওয়াটা দরকার। আমি চেষ্টা করব চলতি বছরের মধ্যে জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের এবং সেটা সম্ভব। নির্বাচনের পরিবেশ বিনির্মানে প্রশাসন শীঘ্রই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করবে।

মানবজমিন: উইকেন্ড কোর্স চালুর ফলে এবং শিক্ষকদের বাইরে পড়ানোর কারণে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের পাঠদানে ব্যাহত হচ্ছে। এটা নিয়ে আপনি কি ভাবছেন?

অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম: উইকেন্ড ও বাইরে পড়াতে যাওয়া তো আজকে শুরু হয়নি। এটা অনেকদিন ধরে হয়ে আসছে। এমন শিক্ষকও আছেন যিনি আট মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ক্লাস পরীক্ষা নেননি। ভোটের ভয়ে কেউ কোনদিন এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি। কিন্তু এসব নিয়ে ভাবার সময় এসেছে।

মানবজমিন: সম্প্রতি আপনাকে সমর্থন করা শিক্ষক সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধু আদর্শের শিক্ষক পরিষদ’ শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে হেরে যায়। দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দালকে এই ভারাডুবির কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। আপনার মন্তব্য কি?

অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম: এসব অনুমান। কোন্দল কোন দলে নেই? সবদলেই কোন্দল থাকে। আওয়ামী লীগের একাংশ, বিএনপি, জামাত-শিবির বামদের সমন্বিত প্যানেলে বিরুদ্ধে গড়ে ২৪০ ভোট পাওয়া ও ৫টি পদে জিতে আসা কম না।

মানবজমিন: আপনার প্রশাসনে অনেক লোক রয়েছে একাধিক দায়িত্বে। এর ফলে প্রশাসনের কাজে কোন মন্থরতা তৈরী হচ্ছে কিনা!

অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম: প্রশাসনে একাধিক পদে যেমন আছে আবার একাধিক পদে থেকে আমার বিরোধীতাও করছে। তবে শিগগিরই প্রশাসনে একটা রদবদলের চিন্তা আছে।
মানবজমিন: বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল গেট সংলগ্ন মহাসড়কে প্রায় ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এছাড়া ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরেও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।

অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম: ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় সড়কবাতি লাগানোর জন্য সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর কর্তপক্ষকে বলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে অনেক জায়গায় লাইট লাগানোর পরে তা আবার ভেঙ্গে দেয়া হয়। তাই এবার ওপরে করে উন্নতমানের অধিক আলোকিত লাইট লাগানোর চিন্তা করছি।

মানবজমিন:  ছাত্রলীগের মধ্যে প্রায় একটা অসন্তোষ তৈরী হয়ে ক্যাম্পাসে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এছাড়া ছাত্রলীগের একটা গ্রুপের মধ্যেও একটা টানাপোড়ন চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থিতিশীলতার জন্য এসব বন্ধে প্রশাসন কোন উদ্যোগ নিবে কিনা?

অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম: ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগের বেশ কিছু দাবি দাওয়া  রয়েছে। তাদের মধ্যে যে সমস্যা তা প্রশাসন আলাপ আলোচনার মাধ্যমে নিরসন করার চেষ্টা করছে।

মানবজমিন: বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নে প্রায় ১৪০০ কোটি টাকার প্রজেক্ট শুরু হতে যাচ্ছে। এর আগে আপনি শিক্ষকদের মধ্যে একটি ঐক্য তৈরী করে সবার মতামতের ভিত্তিতে প্রজেক্টে হাত দিবেন কিনা ?

অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম: এখানে ঐক্যমতের নামে হালুয়া রুটি ভাগের আসর বসাতে চাই না। সরকারীভাবে টেন্ডারের মাধ্যমে প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করা হবে। প্রজেক্ট তদারকির দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরা ১ শতাংশ পরামর্শক সম্মানী পাবেন। জাহাঙ্গীরনগরে খুব একটা ভাল কাজ হয়নি। আমি চাই, এই প্রজেক্টের অধীনের প্রকল্পগুলো ভালভাবে বাস্তবায়ন হোক। আমি ভিসির দায়িত্বে থাকি, না থাকি এই মেগা প্রজেক্ট ঠিকঠাকভাবে বাস্তবায়ন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে আমূল উপকার হবে। সেটাই আমার কামনা।

মানবজমিন: শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে কি পদক্ষেপ নিবেন?
অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম: মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়িত হলে শিক্ষার মান উন্নয়ন হবে।
 
মানবজমিন: একসময়ে আপনার সঙ্গে শিক্ষকরাই আপনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে দীর্ঘ সময় ধরে। এটা চ্যালেঞ্জ কিনা?

অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম: চ্যালেঞ্জ ছিল, চ্যালেঞ্জ থাকবে। চ্যালেঞ্জের মধ্যেই কাজ করতে হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status