দেশ বিদেশ

নারায়ণগঞ্জে তিন নারীকে নির্যাতনের ঘটনায় তোলপাড়

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে

১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, মঙ্গলবার, ১০:০৫ পূর্বাহ্ন

নারায়ণগঞ্জের বন্দরে যৌনকর্মী আখ্যা দিয়ে তিন নারীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় তোলপাড় চলছে। সোমবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তিন সদস্য। তারা  নির্যাতনের শিকার এক নারীর সঙ্গে কথা বলে ঘটনা সম্পর্কে বিশদ জেনেছেন। একই সঙ্গে বন্দর থানার ওসিকে তিন নারীকে নির্যাতনের ঘটনায় মামলার নির্দেশ দেন এবং কমিশনের সদস্যরা নির্যাতিত নারী ও তার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা এবং সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। সোমবার দুপুরে কমিশনের সদস্য বাঞ্চিতা চাকমা, পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) আল মাহমুদ ফাইজুল কবির, উপপরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) গাজী সালাউদ্দিন নারায়ণগঞ্জ আদালতে আসেন। ওই সময় তাদের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্যরা নির্যাতনের শিকার ফাতেমা বেগম ওরফে ফতেহকে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতাল থেকে আদালতের কনফারেন্স রুমে এনে ঘটনা সম্পর্কে তার বক্তব্য শোনেন। পরে বন্দর থানার ওসি রফিকুল ইসলামকে ডেকে এনে মামলার নির্দেশ দেন এবং কী কী ধারায় মামলাটি রুজু হবে সে বিষয়েও দিকনির্দেশনা দেন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশে ঘটনার তিন দিন পর সোমবার সন্ধ্যায় ফাতেমা বেগমকে বাদী করে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় আরও ১৫-২০ জনকে আসামি করে মামলা করানো হয়।
ফাতেমা বেগমের শরীর জুড়ে আঘাতের চিহ্ন: গতকাল দুপুরে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্যদের সামনে হাজির করা হয় চিকিৎসাধীন ফাতেমা বেগমকে (৫৫)। ওই সময় তার চেহারা থেকে শুরু করে শরীরজুড়ে ছিল আঘাতের চিহ্ন। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিল তার। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ফাতেমা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন। ফাতেমা উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের তার শরীরের আঘাতের চিহ্ন দেখান। মারধরে তার মুখ বেঁকে গেছে, উঠে দাঁড়ানোর শক্তি হারিয়েছেন। হামলাকারীদের হাত থেকে রেহাই পায়নি তার ৫ বছর বয়সী নাতি আবদুল্লাহ। হামলাকারীরা আবদুল্লাহকে ঘটনার সময় ছুঁড়ে পাশের খালের পানিতে ফেলে দিয়েছিল। ঘটনার সময় উপস্থিত কেউ একজন তাকে খালের পানি থেকে তুলে বাঁচিয়ে দেয়।
দুই মেয়ের ঝগড়া থেকে পরিকল্পিতভাবে করা হয় হামলা: ঘটনার শিকার ফাতেমা বেগম বলেন, দুই আড়াই মাস আগে প্রতিবেশী মুরগী ব্যবসায়ী জীবন ও তার স্ত্রী উম্মেহানি তার কাছ থেকে দুই দফায় ১ লাখ ২২ হাজার টাকা ঋণ নেয়। অন্যদের সুদে টাকা ধার দিলেও প্রতিবেশী উম্মেহানিকে বিনা সুদে ঋণ দিয়েছিলেন সুসম্পর্কের কারণে। ফাতেমা বেগম বলেন, আমার স্বামী নেই। ২ ছেলে ২ মেয়ের মধ্যে আমার ২ ছেলের একজন প্রতিবন্ধী, অপরজন পাগল প্রায়। স্বামীহারা এক মেয়ে বিদেশে থাকে। অপর মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন বাড়ির পাশেই। বাড়ির পাশে যে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন সেই মেয়ের সঙ্গে ঘটনার নায়ক উম্মেহানির মেয়ে শারমিনের তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে ঝগড়া হয়। ওই সময়ই তারা আমাকে দেখে নিবে বলে হুমকি দিয়েছিল। এরপর আমি আমার টাকা ফেরত চাইলে তারা আমার কাছ থেকে কোনো টাকা নেয়নি বলে জানায়। এরপর আমাকে পুলিশ দিয়ে গত সপ্তাহে হয়রানী করার চেষ্টা করে স্থানীয় মেম্বার ইউসুফের মাধ্যমে। তাতে ব্যর্থ হয়ে পরিকল্পিতভাবে আমার বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটানো হয়।
অপর ২ নারী ঘটনার শিকার, তাদের হদিস নেই: শনিবারের ঘটনার সময় ঘটনার শিকার হয়েছেন আসমা বেগম ও বানু বেগম। আসমা ফাতেমা খালাতো বোন। ঘটনার সময় সে ফাতেমার বাড়ির পাশ দিয়ে যাবার সময় বোনের ওপর নির্যাতন হচ্ছে দেখে বোনকে বাঁচাতে এগিয়ে গিয়ে তিনিও নির্যাতনের শিকার হন। আর অপর নারী বানু বেগম ঘটনাস্থলের পাশ দিয়ে স্মার্টকার্ড আনতে যাচ্ছিলেন। তিনিও ঘটনার শিকার। তার বাড়ি ঘটনাস্থলের কয়েক কিলোমিটার দূরে কলাগাছিয়া ইউনিয়নের বুরুন্দি এলাকায়। আর ঘটনাটি ঘটেছে বন্দর ইউনিয়নের কলাবাগ খালপাড় এলাকায়। ফাতেমা বেগম বলেন, নির্যাতনের একপর্যায়ে তিনি অজ্ঞান হয়ে গেলে তার মাথার চুল কেটে দেয়া হয়। তার সঙ্গে অপর ২ নারীরও মাথার চুলও কেটে দেয়া হয়। ফাতেমা বলেন, ঘটনার মূল ইন্ধনদাতা ইউসুফ মেম্বার। ঘটনা ঘটায় প্রতিবেশী উম্মেহানি ও তার স্বামী জীবন, তাদের মেয়ে শারমিন, প্রতিবেশী মতিন ও তার স্ত্রী মাসুদা, ছেলে মুরাদ, সুমন ও তার মা এলিজা, আমান ও নাসির গং। এরা পরস্পরের আত্মীয় হন। তাদের চুল কাটেন মাসুদা। মতিন চলা দিয়ে মারধর করেন। বন্দর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম গতকাল সন্ধ্যায় জানান, ফাতেমা বেগম বাদী হয়ে মামলা করেছেন। আমরা আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। দেরিতে মামলা রুজু সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা আগে চেয়েছিলাম নির্যাতনের শিকার নারীরা একটু সুস্থ হয়ে মামলা করলে পুলিশ অ্যাকশনে যাবে। এ নিয়ে আমাদের কোনো অবহেলা ছিল না। কারণ, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশই তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছিল।

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status