শেষের পাতা

সানাইয়ের ভুল স্বীকার

রুদ্র মিজান

১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, সোমবার, ১০:০৯ পূর্বাহ্ন

সানাই মাহবুব সুপ্রভা। এক আলোচিত নাম। একের পর এক ফেসবুক লাইভ, টিকটকে উপস্থিতির মাধ্যমে আলোচনায় আসেন তিনি। এর নেপথ্যে কোনো মিউজিক ভিডিও বা ফিল্ম না। ব্রেস্ট ইমপ্লান্ট। প্রতিটি লাইভের আলোচনার বিষয়ও তা। তেমনি লাইভের নামে অঙ্গভঙ্গি, ব্রেস্ট ইমপ্লান্ট নিয়ে অনভিপ্রেত আলোচনার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতেই সানাই মাহবুবকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। রোববার দুপুরে তাকে ডিএমপির  সাইবার নিরাপত্তা ও অপরাধ দমন বিভাগে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরবর্তীতে মুচলেকা দিয়ে সেখানে থেকে ফিরেন সানাই।

ডিএমপিতে থাকাকালে ফেসবুক লাইভে গিয়ে নিজের কৃতকর্মের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন সানাই। লাইভে তিনি বলেন, এই দুপুর বেলা আমি সবাইকে একটি বিশেষ মেসেজ দিতে এসেছি। আমার সমালোচিত কন্টেন্টগুলো আমি কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য বা কোনো আর্থিক লাভের আশায় করি নাই। সাইবার ক্রাইম ইউনিটে এসে আমার বিশেষভাবে অনুধাবন হয়েছে যে কোনো শ্রেণির লোক বিশেষ করে শিশুরা যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
তার ‘অশালীন’ ভিডিওগুলো সম্পর্কে লাইভে সানাই বলেন, অতএব এটা নিশ্চিতভাবেই আমার ভুল ছিল। আমি এদেশের একজন নাগরিক হিসেবে এদেশের সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশে এদেশের আইন মেনে চলে একজন ভালো শিল্পী হতে চাই। ইতিপূর্বে আমার ব্যক্তিগত বা যৌথভাবে করা বিব্রতকর ছবি বা ভিডিও’র জন্য দুঃখিত। আমি ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকব। আমার নিয়ন্ত্রণে থাকা সবধরনের প্রোফাইল থেকে এ ধরনের কন্টেন্টগুলো মুছে ফেলব এবং অন্য কন্টেন্টগুলোর বিষয়ে সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সহায়তা চাচ্ছি। সেইসঙ্গে ইন্টারনেটকে নিরাপদ রাখতে সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা দেশের ইন্টারনেটকে নিরাপদ রাখবো এবং সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ স্লোগানকে এগিয়ে নিয়ে যাবো।

ডিএমপির সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) নাজমুল ইসলাম জানান, ভিডিও গুলোর জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন সানাই। এসব ভিডিও মুছে ফেলতে সম্মত হয়েছেন তিনি। মুচলেকা দিয়েছেন আর কখনো এ ধরনের ভিডিও ছড়াবেন না। সাইবার নিরাপত্তা ও অপরাধ দমন বিভাগ তার এসব কর্মকাণ্ডের ওপর নজর রাখবে। সেইসঙ্গে অন্যদের ক্ষেত্রেও পুলিশের এই তৎপরতা অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি। এডিসি নাজমুল জানান, নিরাপদ ইন্টারনেট ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে সানাইকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিএমপির সাইবার নিরাপত্তা ও অপরাধ দমন বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়।
এ বিষয়ে সানাই মাহবুব মানবজমিনকে বলেন, আমাকে আটক করা হয়নি। বিভিন্ন লাইভ ও ভিডিও নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আমি বুঝতে পেরেছি, এই ভিডিওগুলো দেখে অপ্রাপ্ত বয়স্করা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আমি এটি পজেটিভভাবে নিয়েছি।

সানাই হঠাৎ করেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার সৃষ্টি করেন। বিভিন্ন লাইভে তিনি নিজেই প্রকাশ করেন ব্রেস্ট ইমপ্লান্ট করে সৌন্দর্য বর্ধন করেছেন তিনি। এজন্য দেশের বাইরে গিয়ে বিপুল টাকা ব্যয় করে সার্জারি করাতে হয়েছে তাকে। প্রায় প্রতিটি লাইভে আলোচনায় ও দৃশ্যায়নে ছিল তার বেস্ট ইমপ্লান্ট। তারপর ডাক পড়ে বেশ কয়েক টিভি চ্যানেলেও। সেখানে একই বিষয়ে কথা বলেন সানাই। জনপ্রিয় উপস্থাপক শাহরিয়ার নাজিম জয়ের সঙ্গে একটি টকশোতে অংশ নেন, ওই টকশোটি ভাইরাল হয়ে যায় ইউটিউবে। এতে তিনি নিজেকে সবচেয়ে জনপ্রিয় সেলিব্রেটি দাবি করেন। শাহরিয়ার নাজিম জয়ের এক প্রশ্নের জবাবে সানাই জানান, সাম্প্রতিক সময়ে সবেচেয়ে বেশি পপুলারেটি তার। এখন যারা নায়িকা-গায়িকা তাদেরকে যোগ্য মনে করেন না সানাই। বলেন, ক্যাটরিনা কাইফ নিশ্চয়ই আমাকে নিয়ে আলোচনা করবে না। কারণ তার অবস্থান আমার চেয়ে ভালো। কিন্তু তাদের (দেশের  নায়িকাদের) আলোচনার বিষয় সানাই। এতেই বুঝা যায় তাদের চেয়ে আমার পপুলারেটি অনেক অনেক বেশি।

ওই অনুষ্ঠানে নিজেকে ভার্জিন দাবি করা সানাই দেশের শীর্ষস্থানীয় দুটি ব্যবসায়ী গ্রুপের নাম উল্লেখ করে জানান, বিয়ে করলে তাদের মতো শিল্পপতিদের কাউকে করবেন। এ ছাড়া মিডিয়ার কাউকে বিয়ে করলে সংগীতশিল্পী হাবিব ওয়াহিদকে বিয়ে করার ইচ্ছে প্রকাশ করেন তিনি। সানাই বলেন, তারকাদের মধ্যে বাংলাদেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী হাবিব ওয়াহিদকে বিয়ে করতে চাই। যেহেতু সে বর্তমানে সিঙ্গেল তাই সে আমার ব্যাপারে ভেবে দেখতে পারে। কারণ সেই ক্লাস সিক্স-সেভেন থেকেই আমি তাকে ভীষণ পছন্দ করি। এ সময় তিনি জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনে এমপি হতে চান বলে জানান। প্রায় ১৯টি মিউজিক ভিডিওতে কাজ করেছেন সানাই। নায়িকা হিসেবে ‘ময়নার ইতিকথা’ নামে একটি ফিল্মে কাজ করছেন তিনি। এটি এপ্রিলে মুক্তি পেতে পারে।

স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ’তে অধ্যয়নরত সানাই মাহবুব সুপ্রভা। তার বাবা সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা। দুই বোনের মধ্যে তিনি বড়। গ্রামের বাড়ি রংপুরে। মা-বাবার সঙ্গে থাকছেন ঢাকার গুলশানে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status