শেষের পাতা

মাটির ঘরে কবি

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে

১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, সোমবার, ১০:০৩ পূর্বাহ্ন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাটিতেই বেড়ে উঠেছিলেন আল মাহমুদ। শৈশব-কৈশোরের অনেক স্মৃতি জমা এখানে। ‘যেভাবে বেড়ি উঠি’-আত্ম জৈবনিক স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থে তার রয়েছে বিশদ বর্ণনা। নানা স্মৃতির সেই ক্যানভাসে শনিবার রাতে নিথর দেহ ফিরলেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি আল মাহমুদের। আর গতকাল রোববার জোহর নামাজের পর অন্তিম শয়ানে শায়িত হন পিতা-মাতা আর ভাইয়ের কবরের পাশে দক্ষিণ মেড়াইলের পারিবারিক গোরস্থানে 
। দুপুর পৌনে ৩টার দিকে তাকে সেখানে সমাহিত করা হয়। দাফনের সময় পরিবারের লোকজন ও কবির ভক্ত অনুরাগীরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে জেলা শহরের নিয়াজ মুহম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে কবি আল মাহমুদের তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জানাজার  নামাজ পরিচালনা করেন কবির মামাতো ভাই মাওলানা আশেক উল্লাহ ভূঁইয়া। জানাজায় অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন স্তরের হাজারো  মানুষ। এ সময় বক্তব্য রাখেন কবির ঘনিষ্ঠ বন্ধু প্রবীণ সাংবাদিক মুহম্মদ মুসা, জেলা বিএনপির সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব সভাপতি খ আ ম রশিদুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল  খোকন, কবির ছেলে মীর মাহমুদ মনির, ভাগিনা অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল শাকিল ও কবি আল মাহমুদের একান্ত সচিব আবিদ আজম। এ সময় কবির ছেলে মীর মাহমুদ মনির বলেন, আমার বাবা শুধু একজন কবি নন, একজন মুক্তিযোদ্ধাও। তিনি নদ, নদী ও প্রকৃতি নিয়ে লেখার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ, নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.), ইসলাম, ক্ষুদিরাম, তিতুমীরসহ অনেক বিষয় নিয়ে কবিতা লিখেছেন। আমার বাবার ভালো গুণ ছিল, তিনি অল্পতেই সন্তুষ্ট হতেন। পরে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা প্রিয় কবিকে শেষবারের মতো ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এসব সংগঠনের মধ্যে রয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতি, নিয়াজ মুহম্মদ উচ্চ বিদ্যালয়, জেলা উন্নয়ন পরিষদ, জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন, মোড়াইলবাসী, প্রথম আলো বন্ধুসভা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইউনেস্কো ক্লাব, সমতট বার্তা পরিবার। এর আগে সকাল সোয়া ১১টার দিকে কবির মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় নিয়াজ মুহম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। এই স্কুলেও পড়াশুনা করেছেন কবি মাহমুদ।

এ সময়  প্রভাষক মহিবুর রহিমের সঞ্চালনায় কবির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বক্তব্য রাখেন দৈনিক সমতট বার্তার সম্পাদক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মঞ্জুরুল আলম, ঢাকা থেকে আসা কবি মো. কামরুজ্জামান, ফরিদ ভূঁইয়া, আবিদ আজম, সাদমান শাহিদ, কবি ইব্রাহীম বাহারী প্রমুখ। শনিবার রাত সোয়া ৮টার দিকে কবির মরদেহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পৌঁছে। লাশ দেখতে ভিড় জমান স্বজন ও ভক্তরা। গতকাল সকালে বৃষ্টি উপেক্ষা করে একে একে আসতে থাকেন কবির ভক্ত-অনুরাগীরা। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার দিবাগত রাত ১১টা ৫ মিনিটে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান ‘সোনালি কাবিন’র কবি আল মাহমুদ। আল মাহমুদ ১৯৩৬ সালের ১১ই জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মোড়াইলে জন্মগ্রহণ করেন।

তাঁর আসল নাম মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ। তবে তিনি পিয়ারু নামে পরিচিত ছিলেন বাড়ির লোকজনের কাছে। তাঁর বাবা মীর আবদুর রব ও মা রওশন আরা মীর। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। পাঁচ ছেলে ও তিন কন্যা সন্তান এবং নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে চির নিদ্রায় শায়িত হয়েছেন কবি আল মাহমুদ। আল মাহমুদ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে মাঝেমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসতেন। অসুস্থতাজনিত কারণে গত কয়েক বছর তিনি একেবারেই আসেননি। বাড়িতে এলে ভক্ত ও ঘনিষ্ঠরা ভিড় জমাতেন তাকে ঘিরে। তাদের সঙ্গে গল্প করেই সময় কাটিয়ে দিতেন। দিনের বেশির ভাগ সময় বসে থাকতেন বাড়ির সামনের পুকুর ঘাটে। বড়শি দিয়ে মাছও শিকার করতেন তিনি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status