এক্সক্লুসিভ

ফাগুনের প্রথম বৃষ্টিতেই বড় ধাক্কা বইমেলায়

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার

১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, সোমবার, ৯:৩৫ পূর্বাহ্ন

ফাগুনের পঞ্চম দিন। সকাল সাড়ে ৬টায়ও পূর্ব আকাশে উঁকি দিচ্ছিল লাল সূর্য। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই নিকশ কালো মেঘে ঢেকে যায় ঢাকার আকাশ। মুহূর্তের মধ্যে ধমকা হাওয়ার রূপ নিয়ে শহরে নেমেছে ঝড়োবৃষ্টি। বৃষ্টির সঙ্গে পড়েছে শিলাও। পরপর দুই দফায় বৃষ্টিতে প্রকৃতিতে শান্তির পরশ বিরাজ করলেও অমর একুশে বইমেলায় তা অভিশাপ হয়ে নেমেছিল। গত কয়েকদিন যাবৎ মাইকে মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি ঝড়োবৃষ্টির আভাস দিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু বৃষ্টির ক্ষয়ক্ষতি থেকে বেশ একটা রক্ষা পায়নি প্রকাশনাগুলো। তবে পূর্ব প্রস্তুতি না থাকলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো বেশি হতে পারতো বলেই জানিয়েছে প্রকাশকরা। গতকাল দুপুরে মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চের সামনে হাঁটু পরিমাণ পানি জমে আছে। স্টলগুলোতেও প্রবেশ করেছে পানি। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তখনও মেশিনের সাহয্যে পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার শাহরিয়ার বলেন, দুই ঘণ্টা ধরে পানি শোকানোর চেষ্টা করতেছি। সম্পূর্ণ শেষ হতে আরো এক ঘণ্টারও বেশি সময় লাগবে। এছাড়াও বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকা স্টল ও প্যাভেলিয়নগুলোর ছাদ থেকে পানি পড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কারো কারো পাঁচ-সাত লাখ টাকার বই নষ্ট হয়েছে বলে দাবি করেছে প্রকাশনাগুলো। ক্ষয়ক্ষতির বর্ণনা দিয়ে আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমিকে দিয়েছে চিঠিও। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে বই রোদে শুকাতে দেখা গেছে- বাংলা প্রকাশ, অন্য প্রকাশ, গদ্য-পদ্য, নালন্দা, অ্যাডর্ন, নাগরী, নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠচক্র, আহমেদ পাবলিশার্স, জাতীয় প্রকাশ, জনপ্রিয় প্রকাশনী, নব সাহিত্য প্রকাশনী, জাতীয় সাহিত্য প্রকাশ, শিকড়, জাগৃতি প্রকাশনাী, অন্য রকম প্রকাশনী, বাংলার প্রকাশ, বাবুই প্রকাশনী, বলাকা, বাংলা একাডেমি, সাহিত্য বিকাশ, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রসহ অনেক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে। অনন্ত ৫০ শতাংশ স্টল ও প্যাভেলিয়ন বৃষ্টির কারণে ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে। এছাড়াও ২০ শতাংশ স্টলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল খুব বেশি। প্রকাশনাগুলো জানিয়েছে, ওপরে পানি যাওয়ার জন্য যে পাইপ দেয়া হয়েছে তা কাভার করে নাই। যার কারণে লাইটের হোল্ডার দিয়ে পানি ভেতরে ঢুকেছে। উপরে টিন থাকার পরও কোথায়ও কোথায়ও ধমকা হাওয়ার কারণে টিন নির্দিষ্ট স্থান থেকে সরে গিয়েছে। যার কারণে ওপর থেকে পানি পড়ায় বেশি ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও পাশ থেকে বৃষ্টির পানি পড়ে বই ভিজিয়ে দিয়ে গেছে। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বৈদ্যুতিক সংযোগেরও। সকাল সকাল বৃষ্টির হানার কারণে এসে ক্ষয়ক্ষতি কমানোর চেষ্টাও বৃথা গেছে বলে জানিয়েছে প্রকাশনাগুলো। অন্যদিকে বাংলা একাডেমি অংশের স্টলগুলোতে ছিল একই চিত্র। এছাড়া বাংলা একাডেমি চত্বরে প্রচুর পরিমাণ পানি জমায় সেচ দিলেও এখনো কাঁদার ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে দর্শনার্থীদের। জানতে চাইলে নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠচক্র স্টলের মনির বলেন, ছাদ দিয়ে পানি পড়ে নিচে রাখা সব বই ভিজে গেছে। পানিতে অবস্থা কাহিল। ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক। অন্য প্রকাশের পরিচালক সিরাজুল কবির চৌধুরী বলেন, আমাদের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ো বৃষ্টির কারণে প্যাভেলিয়নের ওপরে টিন থাকলেও তার মধ্য দিয়েও পানি ভেতরে প্রবেশ করেছে। অনন্ত লাখ দেড় লাখ টাকার বই নষ্ট হয়েছে আমাদের। আমরা বাংলা একাডেমিকে বিষয়টি জানিয়েছি। বাংলা প্রকাশের বিক্রয়কর্মী রূপা মজুমদার বলেন, আমাদের প্যাভেলিয়নেরও ওপর থেকে পানি পড়ে অনেক বই ভিজে গিয়েছে। এতে অনন্ত আমাদের লাখ টাকার বই নষ্ট হয়েছে। নাগরী প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী আবুল হাসনাত বলেন, আমাদের অনেক বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপরের ছাউনি সরে গিয়েছে। অনন্ত ৫-৭ লাখ টাকার বই নষ্ট হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। গদ্য-পদ্যের নিশাত আঞ্জুম বলেন, বৃষ্টিতে আমাদের অনেক বই ভিজে গেছে। তবে আগ থেকে বৃষ্টির পূর্বাভাস পাওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি নিজেদের কম হয়েছে বলে জানান নিশাত। এদিকে বৃষ্টি পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে অমর একুশে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব জালাল আহমেদ বলেন, আমরা সকাল ৮টা থেকে কাজ করছি। বৃষ্টির সম্ভাবনা জানিয়ে আমরা দু-তিন ধরে মাইকিং করেছি। যার কারণে এবার ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে। মেলার কার্যক্রম যথাসময়ে শুরু হয়েছে বলেও জানান তিনি। এদিকে রাতে বাংলা একাডেমির জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকাল মেলার ১৭তম দিনে নতুন বই এসেছে ৭১টি। মেলা চলে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় একুশের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক : শ্রদ্ধাঞ্জলি শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন খালেদ হোসাইন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মফিদুল হক, আসাদ মান্নান, শিহাব সরকার এবং আনিসুল হক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কবি মনজুরে মওলা। প্রাবন্ধিক বলেন, সৈয়দ শামসুল হকের জীবনাচরণের প্রতিটি ক্ষেত্রে ছিলেন সপ্রতিভ। আর তাঁর বিপুলায়তন সাহিত্যসৃষ্টিতে লক্ষ করা যায় এক নিহিত ও বস্তুনিষ্ঠ পরিকল্পনা। উন্মাদনাময় এই সৃষ্টিশীলতাকে সাবলীলভাবে নিয়ন্ত্রণের সামর্থ্যই তাঁকে বাংলা সাহিত্যে অগ্রগণ্য প্রতিনিধি হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে। অন্যদিকে লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন প্রকাশিত গ্রন্থ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন বদরুল হায়দার, ফরিদুর রহমান, মারুফ রসুল, স্নিগ্ধা বাউল, অঞ্জন আচার্য। কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি মোহাম্মদ সাদিক, খালেদ হোসাইন। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী লায়লা আফরোজ এবং মো. মাসুদুজ্জামান। মানজারুল ইসলাম সুইটের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী’ এবং অনন্যা ওয়াফী রহমানের পরিচালনায় নৃত্য সংগঠন ‘নৃত্যমঞ্চ’ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে। সংগীত পরিবেশন করেন শাহনাজ নাসরিন ইলা, মামুন জাহিদ খান, মো. মনিরুজ্জামান ভূইয়া, রাকিবুল ইসলাম রাকীব, নীপা সাহা, শামীমা নাসরিন এবং অপর্ণা খান। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন দীপক কুমার দাস (তবলা), শেখ আবু জাফর (বাঁশি), মো. বরকত নেওয়াজ (কী-বোর্ড) এবং এস এম রেজা বাবু (ঢোলক)।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status