প্রথম পাতা

জামায়াত নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

মঞ্জু মুখ খুললেন

স্টাফ রিপোর্টার

১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, রবিবার, ১০:৩৩ পূর্বাহ্ন

জামায়াতে ইসলামীর সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে দলটির ঢাকা মহানগরীর নেতা মজিবুর রহমান মঞ্জুকে। সংগঠন নিয়ে আত্মবিশ্লেষণমূলক বক্তব্য দেয়ায় তার বিরুদ্ধে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে জামায়াত। বহিষ্কারের বিষয়টি জানিয়ে মঞ্জু এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এতে তিনি দলে সংস্কারের পক্ষে এবং বিপক্ষে নেতাকর্মীদের মতামত ও সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছেন যা এতদিন দলটির অনেক নেতাকর্মীর কাছেই অজানা ছিল। এদিকে ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের পদত্যাগ, নতুন দল গঠনের আলোচনার বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তারা বলছেন, সামনে পরিস্থিতি দেখেই আসল মূল্যায়ন হবে আগাম কিছু বলা যাবে না।

মঞ্জু যা বললেন: দল থেকে বহিষ্কারের পর মঞ্জু ফেসবুকে যে স্ট্যাটাস দিয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তা হুবহু তুলে ধরা হলো-
১৫ই ফেব্রুয়ারি শুক্রবার, আনুমানিক রাত সাড়ে সাতটার দিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সম্মানিত আমীর জনাব মকবুল আহমদের পক্ষ থেকে নির্বাহী পরিষদের একজন সম্মানিত সদস্য আমাকে জানান যে আমার দলীয় সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে।
বেশ কয়েক বছর যাবত সংগঠনের কিছু বিষয়ে আমি দ্বিমত করে আসছিলাম। মৌখিক ও লিখিতভাবে বৈঠকসমূহে আমি প্রায়ই আমার দ্বিমত ও পরামর্শের কথা সম্মানিত দায়িত্বশীলদের জানিয়েছি।

অভ্যন্তরীণ ফোরামের পাশাপাশি আকারে ইঙ্গিতে প্রকাশ্যেও আমি আমার ভিন্নমত প্রকাশ করে এসেছি। আমি যেহেতু সামাজিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে কাজ করি এবং প্রকৃতিগত কারণে আমাকে নানা ধরনের আড্ডা, ঘরোয়া আলোচনা, সেমিনারে অংশ নিতে হয়। সেহেতু বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিবর্তন-পরিবর্তন প্রসঙ্গে আমি অনেক জায়গায় খোলামেলা মত প্রকাশ করে থাকি। এসব আলোচনায় প্রসঙ্গক্রমে মিসর, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, তিউনিশিয়ার ইসলামী ধারার রাজনীতির উত্থান-পতন ও বাংলাদেশে জামায়াতের রাজনৈতিক সংস্কারের বিষয়গুলো উঠে আসে। জামায়াতে রাজনৈতিক সংস্কারের যৌক্তিকতা, ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ভূমিকা প্রসঙ্গে আমার সুস্পষ্ট মত ছিল যে, জামায়াতে প্রয়োজনীয় সংস্কার না হলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াতের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। আমার এরূপ খোলামেলা মত নিয়ে জামায়াতের সম্মানিত নেতৃবৃন্দের মাঝে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয়।

মঞ্জুর লিখেন, বছর কয়েক আগে শিবিরের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল শিশির মুহাম্মদ মনিরের মোবাইল ফোন হ্যাক করে পুলিশ তুরস্কের গুলেন মুভমেন্ট সংক্রান্ত একটি মতামত জাতীয় মেসেজ পায়। যার ভিত্তিতে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাকে গ্রেপ্তারের জন্য তার বাসায় অভিযান চালায়। শিবিরের সাবেক সভাপতি জাহিদুর রহমান ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের কৌশলী আসাদ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন সংবাদপত্রে এ নিয়ে একটি বানোয়াট রিপোর্ট ছাপা হয়। রিপোর্টে গুলেন মুভমেন্টের আদলে বাংলাদেশে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রকারী ও পরিকল্পপনাকারী হিসেবে আমিসহ ১১ জনের একটি কল্পিত বৈঠকের বর্ণনা করা হয়। এর ভিত্তিতে আমাদের সকলের বিরুদ্ধে একটি রাষ্ট্রবিরোধী (সেডিশন) মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়। তখন আমি গ্রেপ্তার ও পুলিশি নির্যাতন এড়ানোর জন্য আত্মগোপনে চলে যাই। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় আমি জানতে পারি যে, সংগঠনের ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীলদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জেলা ও অধস্তন শাখাগুলোতে আমিসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে একটি মৌখিক সার্কুলার জারি করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, আমি গুলেন মুভমেন্টের আদলে একটি ভিন্ন সংগঠন গড়ে তোলার জন্য কাজ করছি, অতএব আমার কথাবার্তা ও কার্যকলাপে জনশক্তি যাতে বিভ্রান্ত না হয়। তারা যাতে আমাকে এড়িয়ে চলে।

আমি জামায়াতের একজন সদস্য অথচ আমার কাছ থেকে কিছু জানতে না চেয়ে, আমাকে জবাবদিহির আওতায় না এনে বা আমি যদি দোষ করে থাকি সে বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে আমার বিরুদ্ধে সার্কুলার জারি করায় আমি এর প্রতিকার চেয়ে আমীর বরাবর আবেদন জানাই। তথ্য প্রমাণসহ আমার স্পষ্ট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াতের সম্মানিত আমীর, সেক্রেটারি জেনারেল, এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল, মহানগরী আমীরসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ সম্মিলিতভাবে আমাকে নিয়ে বসেন। তারা আমাকে জানান যে, বিষয়টা নিয়ে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তবে আমি যেরকম সার্কুলারের কথা শুনেছি বিষয়টা তা নয়। তারা আমাকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন যে, বিভিন্ন সামাজিক সংস্থা বা ঘরোয়া সেমিনারে কিংবা ফেসবুকে আমি পরোক্ষ পন্থায় যে ধরনের খোলামেলা মত প্রকাশ করি তা শৃঙ্খলা ও গঠনতন্ত্র বিরোধী। আমি লিখিতভাবে আমার বক্তব্য উপস্থাপন করি ও তাদের অভিযোগ খণ্ডন করি। বিনয়ের সঙ্গে জানাই যে, আমি সংগঠনের অভ্যন্তরীণ নানা অনিয়ম ও সংস্কার প্রসঙ্গে সংগঠনের ফোরামে আমার সুস্পষ্ট মত-দ্বিমত উল্লেখ করি। কিন্তু জনসম্মুখে আমার সকল মত পরোক্ষ। তাতে শৃঙ্খলা ও গঠনতন্ত্রের কোনো লঙ্ঘন হয় না। তাছাড়া আমি সংগঠনের পদস্থ কোনো দায়িত্বশীলও নই।

তারা বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি আয়োজিত ‘চলমান রাজনীতি ও আগামীদিনের বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে আমার উপস্থাপিত একটি প্রবন্ধ সেখানে প্রমাণ হিসেবে হাজির করেন। যাতে আমি বলেছি, বাংলাদেশে সেকুলার, গণতন্ত্রী ও ইসলামী সব রাজনৈতিক দল ব্যর্থ হতে চলেছে। তৃতীয় শক্তি নামে যারা এসেছে তাদের প্রতিও জনগণের কোনো আস্থা নেই। ফলে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের উন্মেষ অপরিহার্য যারা মানবাধিকার, সুশাসন ও ন্যায়ভিত্তিক আধুনিক বাংলাদেশ উপহার দিতে পারে। যারা হবে ধর্মীয় বিশ্বাস ও শ্রদ্ধাবোধে অনুপ্রাণিত কিন্তু ধর্মীয় দল নয়। যে দল হবে গণমুখী ও আপাত: উদারনৈতিক। এই প্রবন্ধে ইসলামী রাজনৈতিক দল ব্যর্থ হতে চলেছে মর্মে আমি যে, বিশ্লেষণ দিয়েছি সে ব্যাপারে তারা আপত্তি তোলেন।
জামায়াতে ইসলামীর সদস্য হয়ে একটি প্রকাশ্য সভায় ইসলামী দল ব্যর্থ হতে চলেছে এরকম মত দিতে পারি কি-না তারা সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন।

মঞ্জু লিখেন, আমি আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলি যে, এখানে আমি সামগ্রিকভাবে ইসলামী দলগুলোর কথা বলেছি, জামায়াতের নাম সুস্পষ্টভাবে বলিনি। তাছাড়া এটা একটা ঘরোয়া সেমিনার এবং এতে রাষ্ট্র ও রাজনীতির একজন পর্যবেক্ষক হিসেবে আমি বক্তব্য দিয়েছি। জামায়াতের নেতা বা কর্মী হিসেবে মত প্রকাশ করিনি। আমি শুধু জামায়াতের সদস্য নই, রাষ্ট্রের একজন সচেতন নাগরিকও বটে। আমি যখন জাতীয় রাজনীতির কথা বলবো তখন সব মত পথ ও মতাদর্শের রাজনৈতিক কথাই বলতে হবে। আমি প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগ বিএনপির সমালোচনা করতে পারবো, কিন্তু নিজেদের প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাব তা কীভাবে সম্ভব। আমিতো ইসলামী রাজনীতির গুরুত্ব ও প্রভাব নিয়ে অনেক ইতিবাচক কথা বলেছি। কিন্তু আত্মসমলোচনামূলক বিষয়গুলো এড়িয়ে গেলে আমার মতটা তো একপেশে হিসেবে গণ্য হবে। অতএব আমি মনে করি এ জাতীয় মতপ্রকাশে কোনো সমস্যা নেই।
যাই হোক, নেতৃবৃন্দ আমার সব কথা শোনার পর স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, জামায়াতের একজন সদস্য হিসেবে এরকম মত প্রকাশ করার সুযোগ নেই। এটা শৃঙ্খলা ও গঠনতন্ত্র পরিপন্থি কাজ। তারা আমাকে এ বিষয়ে সতর্ক করে দেন। আমি বিনয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করি এবং আমার অবস্থানে অটল থাকি।

আমি ভেবেছিলাম এই স্পর্ধা ও মতামতের পর নেতৃবৃন্দ আমার ওপর চরমভাবে অসন্তুষ্ট হবেন এবং সাংগঠনিক ব্যবস্থা স্বরূপ আমার সদস্যপদ বাতিল করবেন। কিন্তু তারা আমার প্রতি যথেষ্ট সহানুভূতিশীল, উদার ও দরদি আচরণ করেন। তারা আমাকে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় বিশ্বস্ত কাজে সংযুক্তও করেন। সদ্য সমাপ্ত ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনে জামায়াতের অংশগ্রহণ নিয়ে আমার দ্বিমত ছিল। তার পরও নির্বাচনের পূর্বে আমি সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে জাতীয় নেতৃবৃন্দের সমন্বয়, সংলাপ, বৈঠকসহ একটি নির্বাচনী আসনে নির্ধারিত দায়িত্ব পালন করেছি।

সম্প্রতি গত ৪ঠা ফেব্রুয়ারি’ ২০১৯ তারিখে আমি ফেসবুকে ‘তরুণ ও তরুণোর্ধ্বদের নতুন রাজনীতি’ নামে একটি স্ট্যটাস দিই। যাতে বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলের ব্যর্থতার পরিপ্রেক্ষিতে সম্ভাবনাময় তরুণদের তাদের দলমতের গন্ডি থেকে বেরিয়ে এসে একটি জাতীয় মুক্তি আন্দোলন সংগঠিত করার আহ্বান জানাই। এ আহ্বানে অনেকেই উৎসাহ বোধ করেন। এ বিষয়ে বিভিন্ন দলীয়, নির্দলীয়, আমার পরিচিত বন্ধু স্বজনদের কৌতূহল তৈরি হয়। ফেসবুকে নামে বেনামে বিভিন্ন আইডি থেকে আমি জামায়াত ভেঙে নতুন দল করছি বলে প্রচারণা চলতে থাকে।

গত কয়েক সপ্তাহে আমি ব্যক্তিগত বা পেশাগত কাজে যেখানেই গিয়েছি আমার বন্ধু স্বজনদের অনেকেই এ বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়ে কথা বলেন। কেউ কেউ তাদের নিজস্ব বন্ধু সার্কেলে আমাকে দাওয়াত দেন। আমি সিলেট ও ঢাকার উত্তরায় এ রকম দুটি সার্কেলে যোগদান করি এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন, জাতীয় মুক্তি আন্দোলন ইত্যাদি নিয়ে কথা বলি। সেসব আলোচনায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত, ঐক্যফ্রন্ট সকল বিষয়েই আলোচনা হয়। আমি আমার মত ও বিশ্লেষণ উপস্থাপন করি। আমি জানতে পারি যে, ফেসবুকের নানা প্রচারণা ও আমার এসব মতপ্রকাশে জামায়াতের দায়িত্বশীলগণ পুনরায় অসন্তোষ বোধ করছেন এবং আমার গতিবিধি চলাচল মনিটরিং করছেন।

তারা আবারও অধস্তন শাখা ও জেলাসমূহে আমার বিরুদ্ধে মৌখিক সতর্কবার্তা পাঠিয়েছেন।
গত ১৩ই ফেব্রুয়ারি জামায়াতের একজন নির্বাহী পরিষদ সদস্যের নেতৃত্বে ৩ জন সম্মানিত দায়িত্বশীল আমার সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। তারা আবারো আমার বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বিনয়ের সঙ্গে আমি তাদের জানাই যে, আমি জামায়াতের একজন নগণ্য সদস্য এবং দেশের নাগরিক। স্বাধীন মতপ্রকাশ আল্লাহ প্রদত্ত এবং রাষ্ট্রীয় অধিকার। আমার মতপ্রকাশে জামায়াতের গঠনতন্ত্র বা শৃঙ্খলার কোন লঙ্ঘন হয় না বলে আমি মনে করি। আমি যা করি তা স্বচ্ছ ও প্রকাশ্য। এখানে ষড়যন্ত্র বা গোপনীয়তার কিছু নেই। আমি তাদের মাধ্যমে জামায়াতের আমীর বরাবর একটি লিখিত বক্তব্য ও ব্যাখ্যা প্রদান করি। আমার বিরুদ্ধে জামায়াত ভেঙে নতুন দল গঠনের যে অপপ্রচার তার বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানাই। তারা অসন্তুষ্টচিত্তে আমার আবেদন গ্রহণ করেন এবং জামায়াতের আমিরের কাছে তা উপস্থাপনের আশ্বাস দেন।
আমার আবেদনের বিষয়ে কোনো তদন্ত না করে আমাকে টেলিফোনে জানানো হয় আমার সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে। মনে ভীষণ ব্যথা ও কষ্ট অনুভব করলেও আমি সন্তুষ্টচিত্তে এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি।

মঞ্জু বলেন, আমি সামান্য কিছু আলোচনাকে নিজ দায়িত্বে ওপেন করেছি। দেশের শীর্ষস্থানীয় চিন্তক ও বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে জামায়াতের ভালো দিক দুর্বলতার দিক নিয়ে খোলাখুলি মতবিনিময় করেছি। জামায়াতকে নিয়ে তাদের মধ্যে অনেক আশাবাদ সৃষ্টি হয়েছে। তাদের দৃষ্টিতে জামায়াতের কী কী বিষয়ে সংস্কার প্রয়োজন তারা তা বলেছে। আমি গুরুত্বপূর্ণ লোকদের সঙ্গে জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের সাক্ষাৎ ও মতবিনিময়ের সংযোজক হিসেবে কাজ করেছি। হয়তো এজন্য তাদের দৃষ্টিতে শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়েছে। সংগঠনের অনেক ক্ষতি হয়েছে, সেজন্য তারা অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছেন।

মিশ্র প্রতিক্রিয়া: জামায়াত এ মেরুকরণ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমদ বলেন, ১৯৭১ সালে আমরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ভূমিকা রেখে দেশকে স্বাধীন সার্বভৌমত্ব ভূমিতে পরিণত করেছি। একটি মস্ত বড় কাজ করেছি। এটা একটি বড় অর্জন। এই অর্জনের পথে যারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে, বাধা দিয়েছে, এখানে জামায়াত বাধা দিয়েছে, পাকিস্তানের সহযোগিতা করেছে, মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে কাজ করেছে। এদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ, ঘনিষ্ঠতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এজন্য যে, তারা আমাদের সব থেকে বড় অর্জনের পক্ষেই বাধা দিয়েছে। তবে এটা মনে রাখতে হবে যাদের জন্ম স্বাধীনতার পরে, তারা যে পক্ষেরই হোক, ওরা এদেশের স্বাধীন নাগরিক। এদের সম্পর্কে কোনো বক্তব্য নেই।

আর যাদের বয়স ৫০-এর ঊর্ধ্বে যারা পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল, জামায়াতের উচিত হলো, হয় তাদের জাতির কাছে মাফ চাইতে হবে যে, আমরা ওই সময় ভুল করেছিলাম। যেটা ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক বলেছে। জামায়াতের ক্ষমা চাওয়ার কথা বলেছেন। আর জামায়াত ক্ষমা চেয়ে নতুন দল করতে পারে, অন্য দলের সঙ্গেও যেতে পারে। তাহলে দলগুলো গ্রহণ করতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, যে দল, ব্যক্তি ও গোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে, বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে, পাকিস্তানকে সহযোগিতা করেছে তাদের এ দেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। তাদের রাজনীতি করা উচিত নয়। বঙ্গবন্ধু এজন্যই জামায়াতে ইসলামীকে স্বাধীনতার পরে নিষিদ্ধ করেছিলেন, পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট জিয়া তাদের পুনর্বাসিত করেন। এরা স্বাভাবিকভাবেই রাজনীতি করতে পারে না।

জামায়াতের মধ্যে যারা বয়সে তরুণ তারা ক্ষমা চেয়ে রাজনীতি করলে সাধারণ মানুষ বিবেচনা করবে। এটাকে সাধারণ মানুষের ওপর ছেড়ে দেয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, হঠাৎ সমস্ত বিষয়টি অস্পষ্ট মনে হচ্ছে। জামায়াতের এক শ্রেণীর নেতা এই যে সিদ্ধান্তে এটি ওই দলের কোনো উপদলের কোনো বৈঠকে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। হঠাৎ একজন ব্যক্তি ঘোষণা দিলেন তিনি তো দলের প্রধান নেতা নন। তিনি দলের অন্যতম নেতা, প্রধান নেতা নন। সুতরাং এটি তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কাজেই বিষয়টি দলের দিক থেকে বিজ্ঞপ্তির আকারে না আসা পর্যন্ত অস্পষ্টই থাকবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, ১৯৭৭ সাল থেকে আজ পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামি বাংলাদেশের রাজনীতিতে নানাভাবে ক্রমাগত আলোচিত হচ্ছে। খুব বেশি আলোচিত হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে জামায়াতের দ্বারা আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে খুব বেশি গতি এবং প্রকৃতি নির্ধারিত হচ্ছে। এইটা আমাদের জাতির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
আমি মনে করি ব্যারিস্টার রাজ্জাক যে কথা বলেছে, তা অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন। বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলো পরিচ্ছন্ন কথাগুলোকে ঘোলাটে করে ফেলা তারা অভ্যাসে পরিণত করছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status