দেশ বিদেশ

ফের অস্থির ডলারের বাজার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, রবিবার, ১০:০২ পূর্বাহ্ন

গত কয়েক মাস স্থিতিশীল থাকার পর আবার বাড়তে শুরু করেছে ডলারের দর। দাম বেড়ে আন্তঃব্যাংকে প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ছাড়িয়েছে। প্রতি ডলারে ১০ পয়সা বেড়ে উঠেছে ৮৪ টাকা ৫ পয়সায়। তবে বাজারে এই দামে ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। গত বছরের ফেব্রুয়ারির তুলনায় এক টাকা ১৫ পয়সা বেশি। বৈদেশিক মুদ্রায় নেয়া ঋণ এবং পণ্য আমদানির দায় পরিশোধের চাপ বাড়ায় ডলারের দরে চাপ বাড়ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া জ্বালানি তেল আমদানির সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে এলএনজি, পিডিবি’র বিদ্যুৎ কেন্দ্রের যন্ত্রপাতি ও রাসায়নিক সার আমদানি বেড়ে গেছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু চাহিদার চেয়ে ডলারের সরবরাহ বাড়েনি। ফলে বাজারে ডলারের ঘাটতি বেড়ে যাচ্ছে। এ ঘাটতি মেটাতে রিজার্ভ থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে কমে যাচ্ছে রিজার্ভ। চাহিদার চেয়ে সরবরাহ না বাড়লে বা চাহিদার লাগাম টেনে ধরতে না পারলে সংকট তীব্র হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে বাজার স্বাভাবিক রাখতে প্রচুর ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে এ সময় পর্যন্ত বিক্রি করা হয়েছে প্রায় ১৫৫ কোটি ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত সপ্তাহে বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে প্রায় সাড়ে ৮ কোটির বেশি ডলার বিক্রি করেছে। গত অর্থবছর বিক্রি করেছিল ২৩১ কোটি ডলার। ডলার বিক্রির পরও প্রতি ডলারে ১০ পয়সা বেড়েছে। এর আগে গত ২রা জানুয়ারি থেকে ১১ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ডলার ৮৩ টাকা ৯৫ পয়সায় স্থিতিশীল ছিল। এদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বাড়ছে না। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১২৭ কোটি ডলার। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ২৭৩ কোটি ডলার। ২০১৭ সালের জুনে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৩৩০০ কোটি ডলারের ঘর ছাড়িয়েছিল। ওই বছরের জুন শেষে রিজার্ভ ছিল তিন হাজার ৩৪৯ কোটি ডলার।
ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের তুলনায় আমদানি বেশি হওয়ায় এমনিতেই বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে চাপ থাকে। এবারে আমদানি প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমলেও আগের অর্থবছরের ব্যাপক প্রবৃদ্ধির ওপর যে হারে বাড়ছে, তার চাপ রয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে শুধু বেসরকারি খাতে ১১০০ কোটি ডলারের বেশি ঋণ রয়েছে। সুদসহ এসব ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছে। এসব কারণে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে ডলারের দর বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রথম ৬ মাসে আমদানিতে তিন হাজার ৭ কোটি ডলারের ব্যয় হয়েছে। বর্তমানের এ আমদানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫.৭৩ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছর আমদানি বেড়েছিল ২৫.২৩ শতাংশ। ডিসেম্বর পর্যন্ত রপ্তানি আয় হয়েছে ২ হাজার ৫০ কোটি ডলার এবং রেমিট্যান্স এসেছে ৭৪৯ কোটি ডলারের। রপ্তানি বেড়েছে ১৪.৪২ শতাংশ। রেমিট্যান্স বেড়েছে ৮.০৬ শতাংশ।
জানা গেছে, কিছু ব্যাংক বেশি দামে বিক্রি করছে ডলার। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন সময়ে পরিদর্শন করে ঘোষণার চেয়ে বেশি দামে ডলার বিক্রির তথ্য পাওয়ায় দু’দফায় ৩৪টি ব্যাংককে শোকজ করে। এরপরও কিছু ব্যাংক এখনো ঘোষণার চেয়ে বেশি দামে ডলার কিনছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
বেসরকারি একটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের আর্থিক ব্যবস্থা বাজার অর্থনীতির ওপর নির্ভর করে। অথচ ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সময় সময় টেলিফোন করে দর বেঁধে দিচ্ছে। দাম বেঁধে দিয়ে একতরফা বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে সেভাবে ডলার দিয়ে সহায়তা করছে না। যেসব ডলার বিক্রি করা হচ্ছে তার বেশিরভাগই পাচ্ছে সোনালী, অগ্রণী, রূপালী ও জনতা ব্যাংক। আবার রপ্তানিকারকরা বেশি দাম পেতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যে ব্যাংকে এলসি খুলছে, ডলার ভাঙাতে চাইছে আরেক ব্যাংকে গিয়ে। এ রকম পরিস্থিতিতে চাপে পড়ে ব্যাংকগুলো অনেক সময় ঘোষিত দামের চেয়ে বেশি নিচ্ছে।
সূত্র জানায়, ডলারের সংকট সামনে আরো বাড়তে পারে। কারণ আগে পেট্রোল, ডিজেল, কেরোসিন, অকটেন আমদানি করা হতো। কিন্তু এখন নতুন করে যুক্ত হয়েছে এলএনজি আমদানি। প্রতি মাসে বিপুল অঙ্কের এলএনজি আমদানির দায় পরিশোধ করতে হচ্ছে। এর সঙ্গে রাসায়নিক সার ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হচ্ছে। সব মিলে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। ডলারের দাম বাড়লে আমদানি পণ্যের দাম বাড়ে, যা মূল্যস্ফীতি বাড়ায়। অন্যদিকে রপ্তানিকারক ও রেমিট্যান্স গ্রহীতারা সুবিধা পান।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status