বাংলারজমিন

একই ভবনে দুই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

মতিউল আলম, ময়মনসিংহ থেকে

১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, রবিবার, ৮:২৯ পূর্বাহ্ন

 একের ভেতর দুই। একই স্থানে একই ভবনে পর্যায়ক্রমে চলে পৃথক দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান। আশ্চর্য হলেও সত্য শিক্ষার নগরী হিসেবে খ্যাত ময়মনসিংহে এমন ৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চলছে। যেখানে দুই শিফটে চলে দুটি পৃথক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম। প্রায় ৫ বছর আগে ময়মনসিংহের তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণার পর থেকেই পার্শ্ববর্তী অন্য বিদ্যালয়ের ভবনে পর্যায়ক্রমে পরিত্যক্ত ভবনের বিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক ও দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু হয়। নিজেদের ভবন না থাকায় ঝরেপড়া থেকে শুরু করে এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ময়মনসিংহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোফাজ্জল হোসেন জানান, গোহাইলকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের পথে। মালতী প্রভা ও শাঁখারীপট্টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২টি দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। দ্রুতই কাজ শুরু হবে। এখন সাময়িক দুর্ভোগ নিয়েই প্রতিটি বিদ্যালয় সফলতার সঙ্গে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এ সমস্যায় কোনো শিক্ষার্থী ঝরে পড়েনি, ঝরেপড়ার সম্ভাবনাও নেই। জানা যায়, ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে শহরের শাঁখারীপট্টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণার পর পার্শ্ববর্তী গাঙ্গিনারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে প্রাক প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের। একই সময়ে শহরের সিকে ঘোষ রোড পদ্মাপুকুরপাড় রোড মালতী প্রভা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন পরিত্যক্তের পর ২০১৪ সালের মে মাসে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ১ কিলোমিটার দূরে চশমে রহমত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়। একই অবস্থা শহরের গোহাইলকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও। সেখানেও ভবন নির্মাণ কাজ শেষের পথে থাকায় আপাতত ২শ’ গজ দূরেই গোহাইলকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ে পাঠদান চলছে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের। সাধারণত সরকারি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুই শিফটে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শুরু হয়ে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত চলে। কিন্তু নিজেদের ভবনে অন্যদের বিকল্প হিসেবে ক্লাস করার সুযোগ দেয়ায় গাঙ্গিনারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চশমে রহমত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস সকাল ৭টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলছে। এ দুই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, এত সকালে ক্লাস করা তাদের জন্য দুরূহ এক ব্যাপার। এই সময়ের মধ্যে আবার কোনো বিরতিও পাওয়া যায় না। এটা তাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টের। আবার এ দুই বিদ্যালয়ের ক্লাস শেষ হওয়ার পর শাঁখারীপট্টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মালতী প্রভা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু হচ্ছে দুপুর ১২টা থেকে। বিরতিহীনভাবে তা চলছে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। সরজমিনে গাঙ্গিনারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চশমে রহমত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, নিজেদের বিদ্যালয়ের ক্লাস শেষ হওয়ার পর শিক্ষক মিলনায়তনে অবস্থান নিচ্ছেন অন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তারাও নিজেদের মতোই অফিস ভাগাভাগি করছেন। অন্যত্র এসে ক্লাস করার ফলে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে শাঁখারীপট্টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লিপি মনি কর বলেন, আমাদের এখানে শিক্ষার্থী কমেনি। তবে নিজেদের ভবন না থাকায় প্রথম দিকে সমস্যা হলেও এখন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা বাস্তবতার সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছেন। পাঠদানের মতোই মাঠ না থাকায় খেলাধুলা ও চিত্তবিনোদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গাঙ্গিনারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শাঁখারীপট্টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ের সামনে এক চিলতে জায়গায় এবার বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাও হয়েছে নামকাওয়াস্তে। গাঙ্গিনারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে খেলার কোনো জায়গা নেই। ছোট্ট জায়গায় খেলে কোনো আনন্দও নেই। ২০১৪ সালের শেষের দিকে ভবন না থাকা এসব বিদ্যালয়ের ওপর মাসব্যাপী একটি জরিপ চালায় সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযান (সুপ্র)। ওই জরিপে বলা হয়, ভবন না থাকার কারণেই প্রতি বছর এসব বিদ্যালয়ের ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে। ময়মনসিংহ সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহেল বাকী শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়ার সম্পর্কে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, ভবনের কারণে শিক্ষার্থী ঝরেপড়ার কোনো সুযোগ নেই। এমনকি ফলাফলের দিক থেকেও এই বিদ্যালয়গুলো ভালো করেছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status