বাংলারজমিন

দেশের এক তৃতীয়াংশ বোরো চাষ হচ্ছে উত্তরাঞ্চলে

প্রতীক ওমর, বগুড়া থেকে

১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, শনিবার, ৯:১৮ পূর্বাহ্ন

দেশের প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ চাষের লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে উত্তরের চাষিরা পুরোদমে শুরু করেছে বোরো চাষ। মাঠে মাঠে এখন জমি চাষ অথবা ধান লাগানো জমিতে পরিচর্যায় ব্যস্ত চাষিরা। এবার সারা দেশে লক্ষ্যমাত্রা ৪৮ লাখ ৪২ হাজার হেক্টর জমি। শুধুমাত্র উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় ১৫ লাখ ৭৫ হাজার ১২৬ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হচ্ছে। এই হিসেবে দেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশ চাষ হচ্ছে এই অঞ্চলে। আগাম আলু তোলা হয়েছে এমন সব জমিতে ইতিমধ্যেই ধান লাগানো শেষ হয়েছে। এই অঞ্চলে এখনো অনেক জমিতে আলু এবং সরিষা তোলার কাজ শেষ হয়নি। মার্চের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই আলু এবং সরিষা তোলা শেষ হলে মার্চের শেষ সপ্তাহের মধ্যেই সব জমিতে বোরো লাগানো শেষ হবে বলে জানায় কৃষি অধিদপ্তর। এদিকে বোরো লাগাতে এই অঞ্চলের চাষিদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। সার-তেলের দাম গেল কয়েক বছরে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়া, শ্রমিকদের মূল্য বৃদ্ধিসহ সার্বিক খরচ বেড়ে যাওয়ায় চাষিরা অনেকটাই বিপাকে পড়েছে। অপরদিকে আবাদকৃত ফসলের ন্যায্যমূল্যও পাচ্ছে না চাষিরা। এই অঞ্চলের চাষিরা মূলত আলু এবং সরিষা বিক্রি করে বোরো আবাদের খরচ জোগান দিয়ে থাকে।
চলতি বোরো মৌসুমে সারা দেশে চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সারা দেশে লক্ষ্যমাত্রা ৪৮ লাখ ৪২ হাজার হেক্টর জমি। চাল আকারে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ কোটি ৯৬ লাখ ২২ হাজার ৭৮০ টন। এর মধ্যে শুধুমাত্র উত্তর অঞ্চলেই প্রায় এক তৃতীয়াংশ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। রাজশাহী কৃষি অঞ্চলে ৩ লাখ ৬২ হাজার ২৭৮ হেক্টর। চাল আকারে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১৪ লাখ ৩২ হাজার ৭৯৮ টন। রংপুর কৃষি অঞ্চলে চাষের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৩৩৭ হেক্টর। চাল আকারে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২০ লাখ ৮৮ হাজার ১০৯ টন। দিনাজপুর কৃষি অঞ্চলে ২ লাখ ৭২ হাজার ৯০৭ হেক্টর। চাল আকারে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১১ লাখ ২ হাজার ৫৩৮ টন। বগুড়া কৃষি অঞ্চলে ৪ লাখ ৪২ হাজার ৬০৪ হেক্টর। চাল আকারে লক্ষ্যমাত্রা ১৭ লাখ ৫৭ হাজার টন।
খাদ্য উৎপাদনে এই এলাকার চাষিরা এগিয়ে থাকলেও বরাবরই লোকসানের মুখ দেখেই চলছে। গেল বছর বগুড়া কৃষি অঞ্চলের চার জেলায় মোট খাদ্যা চাহিদা ছিল প্রায়  ১৪ লাখ ২৩ হাজার ২৬০ টন। চাল উৎপাদন হয়েছিলো ৩৪ লাখ ৫০ হাজার ৬৬৭২ টন। বছর জুড়ে কিছু খাদ্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর নিট খাদ্য থাকে ৩০ লাখ ৭১ হাজার ৯৮ টন। ফলে চাহিদা পূরণের পর খাদ্য বাড়তি থাকে প্রায় সাড়ে ১৬ লাখ ৪৭ হাজার ৮৩৮ টন।
ধারাবাহিকভাবেই জেলায় খাদ্যের চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি খাদ্য জাতীয়ভাবে চাহিদা পূরণে সহায়ক ভূমিকা রাখে। বগুড়ার পাশাপাশি উত্তরের ১৬ জেলায় এবার বোরোর ভালো ফলনের সম্ভাবনা অনেক বেশি। এবার যেসব ধান কৃষকরা চাষ করছেন তার মধ্যে, হাইব্রিড, উফশী এবং স্থানীয় জাত রয়েছে। এ ছাড়াও ব্রি-ধান-২৮, বি-ধান-২৯, বিআর-১,পারিজা, জিরাশাইল, মিনিকেট, পূর্বাচি, ব্রি-ধান-৪৫, ৫০, ৫৮ জাতের ধানও রয়েছে।
সরজমিনে বগুড়ার নন্দীগ্রাম, গাবতলী, শেরপুর, শাজাহানপুর এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে চাষিরা বোরো চাষে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। গাবতলীর মোজাম্মেল হক জানান, আমরা টাকা ব্যয় করে ফসল উৎপাদন করি। কিন্তু উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। আলুর মূল্যও তুলনামূলক কম। ফলে এবারো বোরো আবাদ নিয়ে তিনি চিন্তায় আছেন।
নন্দীগ্রামের বিজরুল এলাকার চাষি জাহাঙ্গীর আলম জানান, সার এবং তেলের মূল্য যেভাবে বেড়েছে উল্টো ফসলের দাম কম। এরকম যদি হয় তা হলে আমাদের এক সময় ধান চাষ করা ছেড়ে দিতে হবে।   
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবার শুধু বগুড়া কৃষি অঞ্চলে মোট সারের চাহিদা ইউরিয়া ৪২ হাজার ৭৮৫ টন, টিএসপি ৭ হাজার ৪০৫ টন, ডিএসপি ৭ হাজার ৭৬৬ টন, এমপিও ৮ হাজার ৫৭২ টন, জিপসাম ১০ হাজার টন, জিংক সালফেট ২ হাজার ৫শ’  টন।
বগুড়া কৃষি অঞ্চলে বিদ্যুৎচালিত গভীর সেচযন্ত্রের সংখ্যা ৩ হাজার ৬১১টি। অগভীর ২৯ হাজার ৯১০টি। এল এল পি অর্থাৎ নদী, ডোবা, খাল বিল পুকুর থেকে পানি তোলা হয় এমন মেশিন বিদ্যুৎচালিত আছে ২১৮টি। ডিজেল চালিত গভীর সেচ মেশিন ৪৪৬টি, অগভীর ১ লাখ ৪৫ হাজার ৮৩৯টি। এলএলপি ১ হাজার ৬২৫টি। সারা দেশের খাদ্য চাহিদা মেটাতে উত্তরের চাষিরা দিনের পর দিন শ্রম দিয়ে যাচ্ছে। সংগত কারণে এই এলাকার চাষিদের সার্বিক চাহিদা মেটানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসার আহ্বান কৃষিবিদদের।
বগুড়া কৃষি অঞ্চলের অতিরিক্তি পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) কামাল উদ্দিন তালুকদার জানান, বরাবরের মতো এবারো এই অঞ্চলে বোরোর ফলন ভালো হবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার বীজতলা ক্ষতির শিকার হয়নি। ফলে চাহিদার তুলায় বোরো চারা অনেক বেশি রয়েছে। তিনি আশা করছেন এসব অতিরিক্ত চারাও জমিতে রোপণ করবেন কৃষকরা। তিনি মনে করেন এবারো এই অঞ্চলে চাহিদার তুলনায় বেশি চাল উৎপাদন হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status